এক নজরে কুমিল্লা সিটি ভোট

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের তৃতীয় নির্বাচন হচ্ছে বুধবার, যেখানে কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের প্রথম বড় পরীক্ষাও হয়ে যাচ্ছে। 

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 June 2022, 05:39 PM
Updated : 15 June 2022, 03:14 AM

সোয়া দুই লাখের বেশি ভোটারের এ নগরে ভোট চলছে ইভিএমে। আর এবারই প্রথম সব কেন্দ্র ও ভোট কক্ষে রয়েছে সিসি ক্যামেরা।

নতুন নির্বাচন কমিশনের অধীনে দলীয় প্রতীকের এ নির্বাচন ঘিরে এখন সবার নজর কুমিল্লায়।

ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, সুষ্ঠু ভোটের ‘সব ব্যবস্থাই’ নেওয়া হয়েছে। কোনো ধরনের গোলযোগের শঙ্কাও তারা দেখছেন না।

বিএনপি দলীয়ভাবে এ ভোটে না থাকলেও দল ছেড়ে মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন এ দলের দুইজন। আর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীতো আছেই। ফলে প্রতিদ্বন্দ্বিতার উত্তাপও আছে।

মেয়র পদের পাঁচ প্রার্থীর মধ্যে আলোচনা মূলত তিনজনকে ঘিরে। গত দুইবারের মেয়র বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা মনিরুল হক সাক্কুর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত। বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সারও নজর কেড়েছেন।

ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, “কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে পরীক্ষামূলকভাবে কেন্দ্রে ও ভোটকক্ষে সিসি ক্যামেরা ব্যবহার করা হচ্ছে।”

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে বসানো হয়েছে এমন সিসি ক্যামেরা। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

তিনি জানান, ঢাকায় ইসি সচিবালয় থেকে এবং রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় থেকে সিসি ক্যামেরায় পর্যবেক্ষণ করা হবে ভোট পরিস্থিতি। কোনো ধরনের অনিয়ম বা গোলযোগের সুযোগ নেই; কমিশন তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেবে।

“ইভিএমে যাতে সুন্দরভাবে ভোটারা ভোট দিতে পারে সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। ভোট দিতে শ্লথগতি বা কোনো ধরনের ত্রুটি যাতে না হয়, সে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আঙ্গুলের ছাপের পাশাপাশি এনআইডি নম্বর দিয়েও যাতে ভোট দিতে পারে, সে ব্যবস্থা থাকায় দ্রুত ভোট গ্রহণ হবে।”

কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান জানান, নির্বাচনকে ‘সুষ্ঠু করতে’ যাবতীয় ব্যবস্থা তারা নিয়েছেন।

আর পুলিশ সুপার মো. ফারুক আহমেদ জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তিন হাজার ৬০৮ জন সদস্য নিয়োজিত রয়েছেন সিটি নির্বাচনে।

৭৫টি চেকপোস্ট, ১০৫টি মোবাইল টিম, ১২ প্লাটুন বিজিবি, ৩০টি র‍্যাবের টিম, অর্ধশতাধিক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, নয়জন বিচারিক হাকিম ভোটের মাঠে রয়েছেন।

কুমিল্লা সিটি নির্বাচন ২০২২

সময়: বুধবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত একটানা চলবে ভোটগ্রহণ।

ভোটার: ২,২৯,৯২০ জন (পুরুষ ১,১২,৮২৬; নারী ১,১৭,০৯২ এবং হিজড়া ২)।

ওয়ার্ড: ২৭টি সাধারণ, ৯টি সংরক্ষিত।

ভোটকেন্দ্রে: ১০৫টি কেন্দ্রের ৬৪০টি ভোট কক্ষে হবে ভোটগ্রহণ।

প্রার্থী: মেয়র পদে ৫ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১০৬ জন এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৩৬ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

মেয়র পদের লড়াইয়ে ৫

প্রার্থী

দল

প্রতীক

মো. রাশেদুল ইসলাম

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ

হাতপাখা

কামরুল আহসান বাবুল

স্বতন্ত্র

হরিণ

মো. মনিরুল হক

স্বতন্ত্র

টেবিল ঘড়ি

মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন

স্বতন্ত্র

ঘোড়া

আরফানুল হক রিফাত

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ

নৌকা

আইন শৃঙ্খলা রক্ষা

>> প্রতিকেন্দ্রে থাকবেন ১৫-১৬ জন নিরাপত্তা সদস্য।

>> পুলিশ, এপিবিএন, ব্যাটালিয়ন আনসার সদস্য নিয়ে গঠিত মোবাইল ফোর্স থাকবে প্রতিটি সাধারণ ওয়ার্ডে।

>> প্রতি তিন ওয়ার্ডে একটি করে নয়টি স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবে।

>> রিজার্ভ ফোর্স থাকবে দুটি।

>> র‌্যাবের ২৭টি টিম ও বিজিবির ১২ প্লাটুন (প্রতি প্লাটুনে ২৫ জন) সদস্য নিয়োজিত থাকবেন ভোটের মাঠে।

>> ২৭ জন নির্বাহী হাকিম এবং ৯ জন বিচারিক হাকিম থাকবেন ভোটের মাঠে।

এ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে আছেন ইসির পরিচালক (নির্বাচন কর্মকর্তা) শাহেদুন্নবী চৌধুরী।

তিনি বলেন, “আমরা সুষ্ঠু ভোট করার জন্য বদ্ধপরিকর। পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্কুলার অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। প্রতিটি কেন্দ্রেই পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ, আনসার, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রয়েছেন। জেলা প্রশাসক, পুলিশের কর্মকর্তারা সবাই সজাগ থাকবেন।”

ফিরে দেখা

দুটি পৌরসভা নিয়ে ২০১১ সালের জুলাই মাসে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন গঠিত হওয়ার পর দুটি নির্বাচন হয়েছে।

দশ বছর আগে প্রথম নির্বাচনে নির্দলীয় প্রতীকে ভোট হলেও ২০১৭ সালে দলীয় প্রতীকে মেয়র নির্বাচন হয়।

দুই নির্বাচনেই ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীকে পরাজিত করে বিএনপির প্রার্থী জয়ী হন।

২০১৭ সালের ৩০ মার্চ কুমিল্লা সিটিতে সর্বশেষ ভোট হয়েছিল। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি দায়িত্ব নেওয়ার পর ১৭ মে প্রথম সভা হয়। তাদের পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্ণ হয় এ বছরের ১৬ মে।

সিটি করপোরেশনে মেয়াদপূর্তির আগের ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

কুমিল্লা জিলা স্কুল থেকে ইভিএম ও নির্বাচনী সামগ্রী নিয়ে ট্রাকে করে কেন্দ্রে যাচ্ছেন নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও নিরাপত্তাকর্মীরা। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

তবে এবার নির্ধারিত সময়ে ভোট করতে পারেনি ইসি। কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন দায়িত্ব নিয়ে ২৫ এপ্রিল এ তফসিল ঘোষণা করেন।

ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, এসব নির্বাচনের প্রার্থীরা ১৭ মে পর্যন্ত রিটার্নিং অফিসারের কাছে মনোনয়নপত্র জমা; ১৯ মে বাছাইয়ের পর ২৬ মে পর্যন্ত মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করার সময় নির্ধারণ করা হয়।

সব প্রক্রিয়া শেষে ভোট হচ্ছে ১৫ জুন।

ইভিএমে ভোট হয় যেভাবে

ইভিএমে আঙ্গুলের ছাপ, ভোটার নম্বর, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর বা স্মার্ট পরিচয়পত্র ব্যবহার করে ভোটার শনাক্ত করা হয়।

নির্দিষ্ট কেন্দ্রের ভোটকক্ষে একজন পোলিং অফিসার ভোটার যাচাইয়ের কাজটি করেন।

ডেটাবেইজে ভোটার বৈধ বা অবৈধ হিসেবে শনাক্ত হলে মনিটরের মাধ্যমে তা দেখতে পান পোলিং এজেন্টরা।

ভোটার বৈধ হলে মেশিনে ভোটারকে ভোট দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। ভোটার সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তার কাছে গেলে গোপন কক্ষে থাকা ব্যালট ইউনিটে ব্যালট ইস্যু করা হয়।

ভোটার পছন্দের প্রার্থী ও প্রতীক বেছে নিয়ে ব্যালট ইউনিটের সাদা বোতামে চাপ দিলে প্রতীক সিলেক্ট হবে। ওই ব্যালট ইউনিটে সবুজ রংয়ের CONFIRM বোতামে চাপ দিলে তার ভোট দেওয়া হয়ে যাবে।

সাধারণ ছুটি নেই, ভোটকেন্দ্র সংশ্লিষ্ট স্থাপনা বন্ধ

ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ জানান, নির্বাচনী এলাকায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়নি। তবে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকবে। নির্বাচনী দায়িত্বে যারা থাকবেন, তারা ভোট দিতে পারবেন।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জারি করা প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ভোটের দিন বুধবার নির্বাচনী এলাকায় যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনা ভোট কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার হবে এবং নির্বাচনী কার্যক্রমের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে সেগুলো বন্ধ থাকবে।

তাছাড়া এসব এলাকার স্বাস্থ্য সেবা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্মরত ভোটারদের ভোট দেওয়ার সুযোগ দিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছে মন্ত্রণালয়।

পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিক কয়েকশ

ইসি জনসংযেগ শাখার কর্মকর্তারা জানান, কুমিল্লায় সাতটি পর্যবেক্ষক সংস্থার ৯২ জনকে ভোট পর্যবেক্ষণের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

ভোট শেষে ফল ঘোষণা করা হবে কুমিল্লা জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে বসানোর রিটার্নিং কর্মকর্তার নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে।

জাতীয় নির্বাচন পযবেক্ষক পরিষদ-জানিপপ, সার্ক মানবাধিক ফাউন্ডেশন, তৃণমূল উন্নয়ন সংস্থা, রিহাব ফাউন্ডেশন, বিবি আছিয়া ফাউন্ডেশন, মানবাধিকার ও সমাজ উন্নয়ন সংস্থা-মওসুস এবং সমাজ উন্নয়ন প্রয়াসের প্রতিনিধিরা ভোট পর্যবেক্ষণ করবেন।

এছাড়া ঢাকার ইসি সচিবালয় ও কুমিল্লা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে কয়েকশ সাংবাদিক ভোটের সংবাদ সংগ্রহে কার্ড সংগ্রহ করেছেন।

ইসির নির্দেশনায় বলা হয়েছে- অনুমোদিত কার্ডধারী সাংবাদিকরা প্রিজাইডিং অফিসারকে জানিয়ে ভোটকক্ষে প্রবেশ করতে পারবেন, ভোট গনণার সময় ছবি তুলতে পারবেন, ভোটকক্ষ থেকে নিরাপদ দূরত্বে সংবাদ প্রচার করতে পারবেন।

কোনোভাবেই ভোটকক্ষের গোপন কক্ষে প্রবেশ বা ছবি তোলা যাবে না।

আরও পড়ুন