ভোট দিচ্ছে কুমিল্লা

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নতুন জনপ্রতিনিধি বেছে নিতে ভোট দিচ্ছেন ২ লাখের বেশি ভোটার; এ নির্বাচনকে দেখা হচ্ছে কেএম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের আস্থা তৈরির পরীক্ষা হিসেবে। 

মাসুম বিল্লাহ কুমিল্লা থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 March 2017, 02:26 AM
Updated : 30 March 2017, 03:23 PM

নির্বাচনী কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় নির্ধারিত সূচি অনুযায়ীই ১০৩টি ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে, চলবে একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত।

সকাল থেকেই বিভিন্ন কেন্দ্রে দেখা গেছে ভোটারদের দীর্ঘ লাইন। ভোটের শুরুতে কোথাও কোনো গোলযোগের খবর পাওয়া যায়নি।

সাবেক সচিব কেএম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর এটাই বড় পরিসরে প্রথম প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ভোট, যেখানে আস্থার প্রতিফলনের প্রত্যাশা করছে বিগত কমিশনের সমালোচনামুখর বিএনপি।

নির্বাচনকে কেন্দ্রে করে পুরো নির্বাচনী এলাকা নিরাপত্তার চাদরে ঘিরে ফেলার কথা বলেছেন নির্বাচন কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা।

নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে প্রয়োজনে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ার করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা রকিব উদ্দিন মণ্ডল।

এক নজরে ভোট তথ্য

>> দুটি পৌরসভা নিয়ে ২০১১ সালের জুলাই মাসে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন গঠিত হওয়ার পর দ্বিতীয় ভোট হচ্ছে এবার। ২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি প্রথম নির্বাচন নির্দলীয়ভাবে হলেও এবার মেয়র পদে ভোট হচ্ছে দলীয় প্রতীকে।

>> গত এক মেয়াদে কুমিল্লা সিটির মেয়রের দায়িত্ব পালন করে আসা মনিরুল হক সাক্কু এবারও মেয়র পদে বিএনপির প্রার্থী। আর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী এবার আঞ্জুম সুলতানা সীমা, যার বাবা আফজল খান গতবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন।

এছাড়া জাতীয় সমাজতান্তিক দল-জেএসডির শিরিন আক্তার ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মামুনুর রশীদও কুমিল্লার মেয়র হওয়ার লড়াইয়ে আছেন।

>> এই সিটি করপোরেশনের ২৭টি সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে ১১৪ জন এবং নয়টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে ৪০ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

>> কুমিল্লা সিটিতে মোট ভোটার ২ লাখ ৭ হাজার ৫৬৬ জন। তাদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ২ হাজার ৪৪৭ জন এবং নারী ১ লাখ ৫ হাজার ১১৯ জন। ১০৩টি ভোটকেন্দ্রের ৬২৮টি ভোটকক্ষে এবার ভোট চলছে।

যা বললেন প্রধান দুই প্রার্থী

মেয়র পদে চারজন প্রার্থী থাকলেও স্বাভাবিকভাবেই দুই বড় দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুই প্রার্থী রয়েছেন আলোচনার কেন্দ্রে।

কুমিল্লার প্রভাবশালী আফজল পরিবারের মেয়ে আঞ্জুম সুলতানা সীমা কুমিল্লা মডার্ন স্কুলের শিক্ষক। এর আগে বিলুপ্ত কুমিল্লা পৌরসভায় তিনি ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছেন দীর্ঘদিন।

সকালে নিজের কর্মস্থল কুমিল্লা মডার্ন স্কুল কেন্দ্রে ভোট দেওয়ার পর নৌকার প্রার্থী সীমা বলেন, “আমি সকালে বেরিয়েছিলাম, সবগুলো কেন্দ্র ঘুড়ে দেখলাম, সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশ বিরাজ করেছে, আশা করি দিনে বাকি অংশেও এ পরিবেশ থাকবে।”

জনগণ যে রায় দেবে, তা মেনে নেবেন জানিয়ে কর্মীদেরও তা মেনে নেওয়ার আহ্বান জানান সীমা।

অন্যদিকে গত মেয়াদের মেয়র মনিরুল হক সাক্কু সকালে বজ্রপুরের হোচ্ছামিয়া উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিয়ে বেরিয়ে তিনটি কেন্দ্রে নিয়ে অভিযোগের কথা বলেন।

এর মধ্যে দুটি কেন্দ্রে থেকে ধানের শীষের এজেন্টদের ‘বের করে দেওয়া হয়েছে’ এবং একটিতে আগেই সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভরা হয়েছে অভিযোগ সাক্কুর।

এই অবস্থায় নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবেন কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে সদর দক্ষিণ বিএনপির এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, “সরে যাব কেন, রেজাল্ট দেখি।”

বাকি দিন সুষ্ঠু ভোট হলে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী বলে জানান ধানের শীষের এই প্রার্থী।

বিপুল উৎসাহ

ফরিদা বিদ্যায়তনের একটি কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার মোহাম্মদ জামসেদ-উর- আলম জানান, তার কেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা ১ হাজার ৯২১ জন। দিনের শুরুতে উপস্থিতি বেশ ‘ভালো’। 

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “সব কিছু সুন্দর ভাবে শুরু হয়েছে, কেন্দ্রের পরিবেশও বেশ ভালো। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যতজন রয়েছে তারা কাজ করলে সেটা আমার কাছে পর্যাপ্ত বলে মনে হচ্ছে।”

এই কেন্দ্রে ভোট দিতে আসা পূবালী ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহবুবুল আলম বলেন, “ভোট ভাল হচ্ছে। শুরুতেই দিয়ে দিলাম, যাতে পরে ‘গ্যাদারিংয়ে’ পড়তে না হয়।

ভোট যেভাবে সুষ্ঠুভাবে শুরু হয়েছে সেভাবে চলবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

এদিকে ভোটের আগের দিন শহরের কোটবাড়ী এলাকায় একটি ‘জঙ্গি আস্তানা’র সন্ধান মেলায় কিছুটা উত্তাপ ছড়িয়েছে কুমিল্লাবাসীর মধ্যে।

বুধবার ভোটের শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতির মধ্যে সিটি কর্পোরেশনের এলাকার এক প্রান্তে ওই বাড়ি ঘেরাও করে পুলিশ। এ ঘটনা জনমনে কিছুটা আতঙ্ক তৈরি করলেও নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা রকিব উদ্দিন মণ্ডল বলছেন, এতে ভোটগ্রহণে কোনো প্রভাব পড়বে না।

“এটা কেন্দ্র থেকে অনেক দূরে। এটাতে ভোটগ্রহণ অ্যাফেক্টেড হবে না।”

জঙ্গি আস্তানা ঘিরে পুলিশের অবস্থানে উদ্বিগ্ন না হতে ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা।

ওই জিঙ্গি আস্তানার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ফরিদা বিদ্যায়তনের একটি কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার মোহাম্মদ জামসেদ-উর- আলম বলেন, “এ বিষয়ে চিন্তা করার সময় সুযোগ আমার নেই।”