করোনাভাইরাসের টিকাদান শুরু হলে তার ১৫ দিনের মধ্যেই ভারত রপ্তানি শুরু করবে বলে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তার বরাতে জানিয়েছে বিবিসি।
Published : 05 Jan 2021, 08:37 PM
আগের স্থানীয় চাহিদা মেটানোর জন্য ভারত টিকা রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে বলে যে খবর আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে এসেছে, তাও নাকচ করেছেন ওই কর্মকর্তা।
বিশ্বে প্রতিবছর যত টিকা উৎপাদন হয়, তার ৬০ শতাংশের মত তৈরি হয় ভারতে। বাংলাদেশসহ অনেক দেশই ভারত থেকে করোনাভাইরাসের টিকার প্রথম চালান পাওয়ার জন্য অপেক্ষায় আছে।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও অ্যাস্ট্রাজেনেকা মিলে করোনাভাইরাসের যে টিকা তৈরি করেছে, তার উৎপাদন ও বিপণনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে সেরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া।
সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত টিকার সঙ্গে ভারত বায়োটেকের তৈরি করোনাভাইরাসের টিকাও জরুরিভিত্তিতে ব্যবহারের জন্য ভারতের ওষুধ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন পেয়েছে।
এ মাসের মাঝামাঝি নাগাদ নাগরিকদের টিকা দেওয়া শুরু করা যাবে বলে ভারতীয় কর্মকর্তারা আশা করছেন।
জনসংখ্যার দিক দিয়ে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই দেশে আগামী জুলাই মাসের মধ্যে ৩০ কোটি মানুষকে করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সেই কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেছেন, প্রতিবেশী দেশগুলোকে টিকা দেওয়ার যে প্রতিশ্রুতি তাদের সরকার দিয়ে আসছিল, তা এখনও অটুট রয়েছে।
“আমাদের এখানে টিকা দেওয়া দেওয়া শুরু হলেই ১৫ দিনের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ায় আমাদের প্রতিবেশী কয়েকটি দেশে রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হবে। এর মধ্যে কিছু টিকা আমরা উপহার হিসেবে দেব। বাকি টিকা রপ্তানি করা হবে আমাদের সরকার যে দামে টিকা কিনবে, মোটামুটি সেই দামেই।
ভারতীয় ওই কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে বিবিসি লিখেছে, “বিশ্বের সবচেয়ে বড় টিকা উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে ভারত প্রতিবেশীদের পাশাপাশি পুরো বিশ্বের প্রতি যে প্রতিশ্রুতি, সে বিষয়ে পুরোপুরি সচেতন আছে।”
সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ডের টিকার তিন কোটি ডোজ কিনতে গত নভেম্বরই চুক্তি করেছে বাংলাদেশ সরকার। বাংলাদেশের ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর সোমবার এই টিকা আমদানি ও জরুরি ব্যবহারের অনুমোদনও দিয়ে দিয়েছে।
বাংলাদেশে সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত ভ্যাকসিনের ‘এক্সক্লুসিভ ডিস্ট্রিবিউটর’ বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রক সংস্থা কোভিশিল্ড ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়ার এক মাসের মধ্যে ৫০ লাখ ডোজ টিকার প্রথম চালান পাঠানোর কথা সেরাম ইনস্টিটিউটের।
কিন্তু সেরাম ইনস্টিটিউটের প্রধান নির্বাহী আদর পূনাওয়ালার বরাত দিয়ে রোববার রাতে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, রপ্তানি শুরুর আগে আগামী দুই মাস তারা ভারতের স্থানীয় চাহিদা পূরণ করতেই জোর দেবে।
ওই খবরে নেপাল ও বাংলাদেশের মত প্রতিবেশী দেশগুলোতে টিকা পাওয়া বিলম্বিত হতে পারে বলে শঙ্কা তৈরি হয়। তবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নান, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন এবং বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান সোমবার দফায় দফায় সংবাদ সম্মেলন করে সবাইকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেন।
বিভ্রান্তি দূর করতে সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইনডিয়ার প্রধান নির্বাহী আদর পূনাওয়ালাও মঙ্গলবার একটি টুইট করেন। তিনি বলেন, ভারত থেকে সব দেশেই ভ্যাকসিন রপ্তানির অনুমোদন আছে।
সেরাম ইনস্টিটিউট ও ভারত বায়োটেক ইতোমধ্যে সাত কোটি ডোজের বেশি টিকা তৈরি ও মজুদ করেছে ফেলেছে। আগামী দিনের বিপুল চাহিদা পূরণে উৎপাদনের পরিমাণ বহুগুণে বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছে দুই কোম্পানি।
মঙ্গলবার এক যৌথ বিবৃতিতে সেরাম ইনস্টিটিউট ও ভারত বায়োটেক বলেছে, তাদের তৈরি টিকা আগ্রহী যে কেউ যাতে পায়, তা নিশ্চিত করতে তারা একসঙ্গে কাজ করবে।
This should clarify any miscommunication. We are all united in the fight against this pandemic. https://t.co/oeII0YOXEH
— Adar Poonawalla (@adarpoonawalla) January 5, 2021