Published : 04 May 2024, 12:55 AM
সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ভর্তি পরীক্ষার্থীকে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে হল প্রভোস্টের বিরুদ্ধে।
বৃহস্পতিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের এক আবাসিক ছাত্রীর কাছে থাকার জায়গার সমস্যার কথা জানান একজন গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার্থী।
কিন্তু ওই হল কর্তৃপক্ষ আবাসিক ছাত্রীকে সহযোগিতা না করে বরং হয়রানি করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে ৷
সাংবাদিকদের কাছে এসব কথা জানান ওই হলের আবাসিক ছাত্রী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আফসানা তাসনিম ঈশিতা।
ঈশিতা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন। এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকসহ নেতারা হল কর্তৃপক্ষকে সুপারিশ করলেও কোনো কাজ হয়নি। এতে ছাত্রলীগও ‘চটেছেন’।
ঈশিতা বলেন, “গুচ্ছের ২০২৩-২৪ সেশনের ‘খ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা ছিল আজ। ওই পরীক্ষায় অংশ নিতে গতকাল হবিগঞ্জ থেকে একজন আমার কাছে এসেছিল। সে অনেক জার্নি করে আসায় ক্লান্ত ছিল। তাকে নিয়ে হলের ভেতরে যেতে চাইলে গার্ড মামারা বাধা দেয়। তাদেরকে বলি, আপাতত তাকে ভেতরে নিয়ে যাই, পরে হল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে নেব।
“কিন্তু উনারা বলেন, ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া যাবে না। এমন নিয়ম নেই। পরে বিষয়টি নিয়ে হলের দায়িত্বরত একজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বললে তিনিও একই কথা বলেন।”
ঈশিতা বলেন, “ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী জার্নি করতে অভ্যস্ত না থাকায় সমস্যা হয়েছিল। আবার রাতও হয়ে গেছিল অনেক। তার জন্য এটা অনেক পেইনফুল, সে তো মানসিকভাবে চাপে ছিল। তাই একজন সিনিয়র হিসেবে আমার দায়িত্ব কোনোভাবে তার থাকার ব্যবস্থা করা।
“হল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে কোনো সায় না পেয়ে আমি আমার সিনিয়র ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সজিব ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলি। তার মাধ্যমে পরবর্তীতে অন্য ছাত্রীহল থেকে একজন সিনিয়র আপু এসে তাকে সেখানে নিয়ে যান।”
‘‘পরীক্ষার্থীর সমস্যা বিবেচনায় আবাসিক হলে তাকে নিয়ে আসছিলাম। এটা এক ধরণের অসহযোগিতামূলক আচরণ করেছে।
একই সঙ্গে দেড়ঘণ্টার মত হল গেইটে দাঁড়িয়েছিলাম। যেটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এটা আমাদের মত আবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য হয়রানির মত।’’ অভিযোগ করেন ঈশিতা।
এ ছাত্রলীগ নেত্রী বলেন, “গত ২৭ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হওয়া গুচ্ছের ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় বাইরের একজনকে হলে থাকতে দেখেছি। সেখানে তো হল কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।”
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সজীবুর রহমান বলেন, “একজন শিক্ষার্থী আমাকে বিষয়টি জানালে আমি হল প্রভোস্টের সঙ্গে কথা বলি। কিন্তু হল প্রভোস্ট সমস্যার কথা বিবেচনা না করে বরং নিয়মের দোহাই দিয়ে পরীক্ষার্থীকে দেড় ঘণ্টার মত দাঁড় করিয়ে রেখেছে। দীর্ঘ জার্নি করে আসা ওই ভর্তিচ্ছু ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন।
‘‘আমি শিক্ষার্থীর সমস্যার কথা জানার পর একজন ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে সেই বিষয়টি সমাধানের জন্য একাধিক মাধ্যমকে অবহিত করেছি। তবে হল প্রভোস্ট বিষয়টিকে গুরুত্ব না দিয়ে বরং প্রতিবারই প্রত্যাখান করে গেছেন।” সজীবুর বলেন, “সমস্যা যে কারও (ভর্তিচ্ছু) থাকতে পারে; তাই বলে হলে থাকতে কেন দিবে না? সেটাই আমার প্রশ্ন।’’
এ বিষয়ে বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক চন্দ্রানী নাগ বলেন, ‘‘অভিযোগগুলো সত্য নয়।’’
তিনি বলেন, ‘‘আমাদের হল এখনও নির্মাণাধীন; উদ্বোধন হয়নি। টিলাবেষ্টিত হওয়াতে হলটিতে আমরা সিকিউরিটি নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন থাকি সবসময়। সেজন্য বাইরের কাউকে অনুমতি দেওয়া হয় না। হলের নিয়মগুলোর মধ্যে লেখাও রয়েছে।’’
‘‘আমরা বাইরের কাউকেই এ পর্যন্ত থাকার অনুমতি দেয়নি। আর ‘এ’ ইউনিটের পরীক্ষার সময় বাইরের একজনকে থাকতে দেওয়া হয়েছে, এ বিষয়ে প্রমাণ থাকলে দিতে বলব।’’
আর যে পরীক্ষার্থীর বিষয়ে বলা হচ্ছে, তার জন্য পরবর্তীতে দ্বিতীয় ছাত্রী হলে থাকার ব্যবস্থা করেছেন বলে অধ্যাপক চন্দ্রানী নাগ জানান।
২০২২ সালের জানুয়ারিতে উপাচার্য বিরোধী আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীহলের প্রভোস্টের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অসদাচারণের অভিযোগে। সেই আন্দোলন শেষ পর্যন্ত গড়িয়েছিল উপাচার্য বিরোধী আন্দোলনে।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ক্যাম্পাসে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ ছিল। ব্যাহত হয়েছে পাঠদান কার্যক্রম। পুলিশ-শিক্ষার্থী সংঘর্ষে আহত হয়েছিল অর্ধশতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও পুলিশ সদস্য।
দাবি আদায়ে শিক্ষার্থীরা অনশনসহ কালের নতুন কর্মসূচিও পালন করে।