Published : 28 Apr 2025, 02:33 PM
দেশের পাঁচ জেলায় বজ্রপাতে ১০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ সময় আহত হয়েছেন আরও কয়েকজন।
সোমবার বিভিন্ন সময় বজ্রপাতে কুমিল্লার বরুড়া ও মুরাদপুর উপজেলায় চারজন, কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম ও মিঠামইনে তিনজন এবং হবিগঞ্জের বানিয়াচং, সুনামগঞ্জের শাল্লা ও নেত্রকোণার মদন উপজেলায় একজন করে মারা গেছে।
বিভিন্ন স্থান থেকে আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
কুমিল্লা.
কুমিল্লার মুরাদনগর ও বরুড়া উপজেলায় বজ্রপাতে চারজনের মৃত্যু হয়েছে; এ সময় আহত হয়েছে আরও একজন।
সোমবার দুপুরে মুরাদনগরের কোরবানপুর গ্রামে দুজন কৃষক এবং বরুড়ার খোশবাস ইউনিয়নের পয়ালগচ্ছ গ্রামে দুই শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে।
বরুড়া থানার ওসি নাজমুল হাসান এবং বাঙ্গরা বাজার থানার ওসি মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন।
নিহতরা হলেন- বরুড়ার পয়ালগচ্ছ গ্রামের মৃত খোকন মিয়ার ছেলে ফাহাদ হোসেন (১৩) এবং বিলাল হোসেন ছেলে মোহাম্মদ জিহাদ (১৪), মুরাদনগরের কোরবানপুর গ্রামের জসীম উদ্দীনের ছেলে কৃষক জুয়েল ভূঁইয়া (৩৫) এবং মৃত বীরচরণ দেবনাথের ছেলে নিখিল দেবনাথ (৬০)।
এর মধ্যে ফাহাদ ও জিহাদ বড়হরিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র ছিল।
আহত অবস্থায় পয়ালগচ্ছ গ্রামের সায়মন (৭) নামে এক শিশুকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বরুড়ার পয়ালগচ্ছ গ্রামের স্কুলশিক্ষক কামরুজ্জামান বলেন, দুপুরে হালকা মেঘ ছিল। এর মধ্যে শিশুরা মাঠে ঘুড়ি উড়াচ্ছিল। হঠাৎ বজ্রপাতে দুই শিক্ষার্থী মারাত্মক আহত হয়। তাদের দ্রুত উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
বরুড়া থানার ওসি নাজমুল হাসান বলেন, “বজ্রপাতে দুজনের মৃত্যুর খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।”
অপরদিকে কোরবানপুর গ্রামের ইউপি সদস্য মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, “দুপুরে কোরবারনপুর পূর্বপাড়া কবরস্থানের পাশের একটি মাঠে জমিতে কাজ করছিলেন দুই কৃষক। হঠাৎ বজ্রপাতে তারা ঘটনাস্থলেই মারা যান। পরে এলাকাবাসী গিয়ে তাদের উদ্ধার করে থানা খবর দেয়।”
বাঙ্গরা বাজার থানার ওসি মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান বলেন, মৃতদেহ দুটি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে।
কিশোরগঞ্জ:
কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম ও মিঠামইন উপজেলায় বজ্রপাতে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।
নিহতরা হলেন- অষ্টগ্রাম উপজেলার কলমা ইউনিয়নের হালালপুর গ্রামের কৃষক ইন্দ্রজিৎ দাস (৩০), আব্দুল্লাহপুর-খয়েরপুর ইউনিয়নের খয়েরপুর গ্রামের স্বাধীন মিয়া (১৪) এবং মিঠামইন উপজেলার কেওয়ারজোড় ইউনিয়নের রানীগঞ্জ গ্রামের মৃত আশ্রব আলীর স্ত্রী ফুলেছা বেগম (৬৫)।
অষ্টগ্রাম থানার ওসি রুহুল আমিন বলেন, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ধান কাটার সময় বজ্রপাতে ইন্দ্রজিৎ হাওরে মারা যান।
আর নদীতে মাছ ধরার সময় বজ্রপাতে মারা যায় খয়েরপুর গ্রামের কিশোর স্বাধীন মিয়া।
ওসি রুহুল আমিন জানান, উভয় স্থানে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। পরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মিঠামইন থানার এসআই অর্পন বিশ্বাস বলেন, “বৃষ্টির মধ্যে খলার ধানের খড় ঢাকতে গিয়ে বজ্রপাতে রানীগঞ্জ গ্রামের ফুলেছা বেগম মারা গেছেন। খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে এসেছি। এ বিষয়ে পরবর্তীতে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।”
হবিগঞ্জ:
হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার হাওরে বজ্রপাতে ধান কাটা শ্রমিক নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন আরও তিনজন।
সকালে উপজেলার আড়িয়ামুগুর গ্রামের পূবের হাওরে ধান সময় বজ্রপাতে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে বলে জানান বানিয়াচং থানার ওসি গোলাম মোস্তফা।
নিহত দুর্বাশা দাস (৩৫) আড়িয়ামুগুর গ্রামের কালাবাসী দাসের ছেলে।
আহতরা হলেন- নিহত দুর্বাশা দাসের ভাই ভূষণ দাস (৩৪) ও বোন সুধন্য দাস (২৮)। অপর আরেক কিশোর বায়েজিদ মিয়া (১৩) উপজেলার বাগহাতা গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে। তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
হবিগঞ্জ জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা আজাদুর রহমান বলেন, বজ্রাঘাতে নিহতের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা সহায়তা দেওয়া হবে।
নেত্রকোণা:
নেত্রকোণার মদন উপজেলায় মাদ্রাসয় যাওয়ার পথে বজ্রপাতে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে।
সকাল সোয়া ৬টার দিকে উপজেলার তিয়শ্রী ইউনিয়নের তিয়শ্রী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে বলে ওই ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মোতাহার হোসেন জানিয়েছেন।
মৃত আরাফাত মিয়া (৯) তিয়শ্রী গ্রামের আব্দুস সালামের ছেলে এবং স্থানীয় বাইতুল জান্নাত হাফিজিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ছিল।
ইউপি সদস্য মোতাহার বলেন, “আরাফাত বাড়ির পাশের একটি হাফেজিয়া মাদ্রাসায় পড়তো। প্রতিদিনের মত ভোরে ফজরের নামাজ শেষে মাদ্রাসায় যাচ্ছিল সে। তখন বৃষ্টি হচ্ছিল।
“মাদ্রাসার সামনে পৌঁছলে হঠাৎ বজ্রপাতে গুরুতর আহত হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায় আরাফাত।”
মদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অলিদুজ্জামান বলেন, “আরাফাত নামে এক মাদ্রাসা শিক্ষার্থী বজ্রপাতে মারা গেছে বলে খবর পেয়েছি। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী তার পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা করা হবে।”
সুনামগঞ্জ:
শাল্লা উপজেলায় হাওরে গরুকে ঘাস খাওয়ানোর সময় বজ্রপাতে কলেজছাত্র নিহত হয়েছেন।
সকাল সাড়ে ৭টায় উপজেলার আটগাঁও গ্রামের কালিকোটা হাওরে এ ঘটনা ঘটে বলে শাল্লা থানার ওসি শফিকুল ইসলাম জানান।
নিহত রিমন তালুকদার আটগাঁও গ্রামের জাহেদ তালুকদারের ছেলে ও শাল্লা ডিগ্রি কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিল।
ওসি শফিকুল বলেন, “বাড়ির পাশে কালিকোটা হাওরে নিজের চারটি গরুকে ঘাস খাওয়াতে নিয়ে গিয়েছিলেন রিমন। এ সময় তীব্র ঝড়বৃষ্টি শুরু হয়।
“সেখান থেকে ফেরার পথে বজ্রপাতে রিমনসহ তার একটি গরুও মারা যায়। পরে স্থানীয়রা খবর পেয়ে তার লাশ উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে যায়।”
আইনি প্রক্রিয়া শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে জানান ওসি।