লাঞ্চ সেরে ড্রেসিং রুম থেকে বের হলেন সবার আগে। কিটব্যাগসহ সব গুছিয়ে মাঠে নামলেন ঝটপট। পিএসএলে তার দলের ‘মেন্টর’ ভিভ রিচার্ডসকে নিয়ে মুগ্ধতার কথা শোনালেন হাসি মুখে। গা গরমে সবাইকে অনুপ্রাণিত করলেন। পেস বোলারদের সবাইকে নিয়ে দাঁড়িয়ে কথা বললেন আলাদা করে। পরে দলের সবাই গোল হয়ে দাঁড়িয়ে মাঠেই ছোটখাট টিম মিটিং, সেখানেও বক্তা তিনি। শ্রীলঙ্কায় প্রথম অনুশীলন সেশনে দারুণ চটপটে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। সেই মাঠে, বছর খানেক আগে যেখানে পেতে হয়েছিল তীব্র যন্ত্রণা।
Published : 05 Mar 2018, 04:43 PM
গত মার্চের দুঃসহ স্মৃতি সেটি। শ্রীলঙ্কা সফরে বাংলাদেশের দ্বিতীয় টেস্ট ছিল পি সারা ওভালে। দেশের ইতিহাসের সেটি শততম টেস্ট। মাইলফলক টেস্টকে ঘিরে ম্যাচের আগে ছিল সাজ সাজ রব। কিন্তু মাহমুদউল্লাহ ডুবে ছিলেন আঁধারে। প্রথম টেস্টে গলে ভালো করতে পারেননি। দেশের শততম টেস্টে তাই স্কোয়াডেই রাখা হয়নি মাহমুদউল্লাহকে।
বছর না ঘুরতেই আবার শ্রীলঙ্কায় বাংলাদেশ দল। দলের প্রথম অনুশীলন সেশন সোমবার পি সারা ওভালে। সেবার দলে জায়গা না পাওয়া মাহমুদউল্লাহ এবার অধিনায়ক!
ক্রিকেটীয় ভাগ্যচক্রে কেটে গেছে শনির দশা। বৃহস্পতি তুঙ্গে না হলেও মাহমুদউল্লাহ এখন পাদ প্রদীপের আলোয়। সাকিব আল হাসানের চোটে দেশের মাটিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি সিরিজে নেতৃত্ব দিয়েছেন। সাকিব নেই শ্রীলঙ্কা সফরেও। নেতৃত্বে বিসিবির আস্থা মাহমুদউল্লাহই।
বছরখানেক আগে শততম টেস্টের একাদশে তার জায়গা না পাওয়াটা খুব অস্বাভাবিক ছিল না। সাদা পোশাকে তার পারফরম্যান্স সত্যিই ছিল পড়তির দিকে। তবে প্রশ্ন উঠেছিল, সফরের মাঝে স্কোয়াড থেকেই ছিটকে ফেলাতে। তার চেয়েও বড় বিতর্ক হয়েছিল পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহে। স্কোয়াডের বাইরে রাখার পর দেশে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছিল মাহমুদউল্লাহকে। যার অর্থ ছিল, ওয়ানডেতেও বাদ মাহমুদউল্লাহ।
সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে তখন তোলপাড় হয়েছিল প্রচুর। সংবাদমাধ্যমের প্রবল সমালোচনা ও ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার জেদের কারণে শেষ পর্যন্ত ওয়ানডে থেকে বাদ দেওয়া হয়নি মাহমুদউল্লাহকে। ফেরত পাঠানো হয়নি দেশে। অধিনায়ক মাশরাফি সেই সময় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে মাহমুদউল্লাহর মত অভিজ্ঞ একজনকে হারাতে চাই না।”
মাহমুদউল্লাহ পরে অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান দেন দারুণভাবে। চ্যাম্পিয়ন লিগে বাঁচা-মরার ম্যাচে কার্ডিফে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে দলের বিপর্যয়ে নেমে উপহার দেন অসাধারণ এক ম্যাচ জেতানো সেঞ্চুরি। যে ম্যাচের জয়ের হাত ধরে বাংলাদেশ প্রথমবার উঠে কোনো আইসিসি টুর্নামেন্টের সেমি-ফাইনালে।
ওয়ানডের পারফরম্যান্স দিয়ে পরে টেস্ট দলে জায়গা ফিরে পান মাহমুদউল্লাহ। ফিরে পান আস্থার জায়গাটিও। যেটির প্রতিফলন তার দায়িত্বে। যে শ্রীলঙ্কা থেকে সফরের মাঝপথেই ফেরত পাঠানোর আয়োজন হয়েছিল বিতর্কিতভাবে, সেই শ্রীলঙ্কাতেই ফিরেছেন অধিনায়ক হয়ে। যে মাঠে মাইলফলক এক টেস্টে সুযোগ পাননি, সেখান থেকেই শুরু হলো নতুন চ্যালেঞ্জ জয়ের অভিযান।
দুঃসময়কে পাল্টা জবাব দিয়ে আজ নেতৃত্বের আসনে মাহমুদউল্লাহ। তার নেতৃত্বে দলও কি পারবে দুঃসময়কে পেছনে ফেলতে?