শেষ বেলার পাগলাটে ব্যাটিংয়ে লিডের আশা ছেড়েছিল বাংলাদেশ। স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা দেখেছিল অন্তত ৫০ রানের লিডের সুযোগ। তৃতীয় দিন সব হিসেব পাল্টে দিয়েছেন সাকিব আল হাসান ও মোসাদ্দেক হোসেন। তাদের দৃঢ়তায় নিজেদের শততম টেস্টে শতরানের লিড নিয়েছে মুশফিকুর রহিমের দল।
Published : 17 Mar 2017, 04:44 PM
রাতের ভাবনায় সাকিবের বদলে যাওয়া
‘আমি থাকলে হয়তো মোসাদ্দেক সেঞ্চুরি পেত’
সকালের সেশনের দিকে তাকিয়ে বাংলাদেশ
ধৈর্য ধরেছি বলেই সেঞ্চুরি পেয়েছি: সাকিব
দিনের শেষ বেলায় ১৩ ওভার বল করে লঙ্কানদের উদ্বোধনী জুটি বিচ্ছিন্ন করতে পারেনি বাংলাদেশ। কোনো উইকেট না হারিয়ে স্বাগতিকদের সংগ্রহ ৫৪ রান। দিমুথ করুনারত্নে ও উপুল থারাঙ্গা- দুই বাঁহাতি উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানই অপরাজিত ২৫ রানে। শ্রীলঙ্কা পিছিয়ে আছে ৭৫ রানে।
ব্যক্তিগত ১১ রানে শুভাশীষ রায় চৌধুরীর বলে মুশফিকের হাতে জীবন পান করুনারত্নে। এদিন বাঁহাতি পেসার মুস্তাফিজকে দিয়ে মাত্র ১ ওভার বল করান অধিনায়ক।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম, ক্যারিয়ারের পঞ্চম শতক পেয়েছেন বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার সাকিব। অভিষেকে চমৎকার এক ইনিংস খেলেছেন তরুণ মোসাদ্দেক। দুই জনে সপ্তম উইকেটে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গড়েছেন বাংলাদেশের রেকর্ড জুটি। তৃতীয় সেশনে গুটিয়ে যাওয়ার আগে ৪৬৭ রান করেছে বাংলাদেশ। লিড ১২৯ রানের।
দেশের বাইরে টেস্টে এটাই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ লিড। ২০১৩ সালে হারারেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১০৯ রান ছিল আগের সেরা।
পি সারা ওভালে খেলা আগের তিন টেস্টেই ইনিংস ব্যবধানে হেরেছিল বাংলাদেশ। স্বাভাবিকভাবেই প্রথমবারের মতো নিতে পারলো তারা লিড। এই মাঠে গড়লো নিজেদের সর্বোচ্চ। আগের সেরা ছিল ২৯৯ রান।
৫ উইকেটে ২১৪ রানে তৃতীয় দিন শুরু করে বাংলাদেশ। তখনও দলটি পিছিয়ে ১২৪ রানে।
সকালে বাংলাদেশের শান্ত ব্যাটিং দেখে বোঝা যায়নি কতটা পাগলাটে ছিল আগের দিনের শেষ বেলা। সেই দিনের ক্ষ্যাপাটে ব্যাটিং করেননি সাকিব। বরাবরের মতো আস্থার সঙ্গে খেলেন মুশফিক। শুরুতে রানের দিকে বেশি মনোযোগী ছিলেন অধিনায়কই।
৬৬ বলে ৬টি চারে আসে মুশফিকের অর্ধশতক। অধিনায়ক পঞ্চাশে যান সাকিবের আগে। কিছুক্ষণ পর ৬৯ বলে ৫টি চারে অর্ধশতকে যান বাঁহাতি অলরাউন্ডারও।
টেস্টে নিজেদের পঞ্চম শত জুটির পথে ছিলেন সাকিব-মুশফিক। তামিম ইকবাল-ইমরুল কায়েসকে পেছনে ফেলে টেস্টে জুটিতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড নিজেদের করে নেওয়ার কাছাকাছি ছিলেন তারা। তার আগেই বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে হয় তাদের।
দ্বিতীয় নতুন বলে ভাঙে তাদের প্রতিরোধ, সুরঙ্গা লাকমলের বলে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান মুশফিক। অধিনায়ককে হারিয়ে প্রথম সেশনে ১০২ রান যোগ করে বাংলাদেশ।
ঘরোয়া ক্রিকেটে রান বন্যা বইয়ে দেওয়া মোসাদ্দেককে ভাবা হয় বড় দৈর্ঘ্যের উপযোগী ক্রিকেটার হিসেবে। তার আন্তর্জাতিক অভিষেক হয় টি-টোয়েন্টি দিয়ে। পরে সুযোগ মেলে ওয়ানডেতে। সেই ইংল্যান্ড সিরিজ থেকে অভিষেকের অপেক্ষায় থাকা ২১ বছর বয়সী এই অফ স্পিনিং অলরাউন্ডারের অপেক্ষার অবসান হয় কলম্বোয়।
রান আউট হতে হতে ৪১ রানে কোনোমতে বেঁচে যান সাকিব। ৬৭ রানে হেরাথের বলে নিরোশান ডিকভেলা ছাড়েন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যানের ক্যাচ। জীবন পেয়ে আরও সতর্ক হয়ে যান সাকিব। দ্বিতীয় সেশনে অফ স্পিনার দিলরুয়ান পেরেরাকে সুইপ করে চার হাঁকিয়ে পৌঁছান শতকে।
চা-বিরতির মিনিট দশেক আগে লাকশান সান্দাকানের বলে উড়াতে গিয়ে মিড অনে দিনেশ চান্দিমালের চমৎকার ক্যাচে পরিণত হন সাকিব। ১৫৯ বলে খেলা তার ১১৬ রানের ইনিংসটি গড়া ১০টি চারে। তাকে হারিয়ে দ্বিতীয় সেশনে ১১২ রান সংগ্রহ করে অতিথিরা।
দুই তরুণ মোসাদ্দেক আর মেহেদী হাসান মিরাজের ব্যাটে সাড়ে চারশ পার হয় বাংলাদেশের সংগ্রহ। অতিথিদের নজর তখন পাঁচশ রানে। জোড়া আঘাতে মিরাজ ও মুস্তাফিজকে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে তত দূর যেতে দেননি হেরাথ। রিভিউ নিয়েও বাঁচেননি মিরাজ। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে হেরাথের হাজারতম শিকার মুস্তাফিজ রিভিউ নিতে দাঁড়াননি।
1000 first-class wickets for Herath Mudiyanselage Rangana Keerthi Bandara Herath! @HerathRSL Congratulations! pic.twitter.com/uBhp9hkauJ
— Sri Lanka Cricket (@OfficialSLC) March 17, 2017
বাঁহাতি স্পিনার হেরাথ (৪/৮২) ও চায়নাম্যান সান্দকান (৪/১৪০) নেন চারটি করে উইকেট। শ্রীলঙ্কার একমাত্র পেসার লাকমল ২ উইকেট নেন ৯০ রানে। ১০০ রান দিয়ে উইকেটশূন্য থাকেন অফ স্পিনার পেরেরা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস: ৩৩৮
বাংলাদেশ: ১ম ইনিংস: ১৩৪.১ ওভারে ৪৬৭ (তামিম ৪৯, সৌম্য ৬১, ইমরুল ৩৪, সাব্বির ৪২, তাইজুল ০, সাকিব ১১৬, মুশফিক ৫২, মোসাদ্দেক ৭৫, মিরাজ ২৪, মুস্তাফিজ ০, শুভাশীষ ০*; লাকমল ২/৯০, পেরেরা ০/১০০, হেরাথ ৪/৮২, গুনারত্নে ০/৩৮, সান্দাকান ৪/১৪০)
শ্রীলঙ্কা ২য় ইনিংস: ১৩ ওভারে ৫৪/০ (করুনারত্নে ২৫*, থারাঙ্গা ২৫*; শুভাশীষ ০/১৩, মিরাজ ০/২০, মুস্তাফিজ ০/৬, সাকিব ০/৬, মোসাদ্দেক ০/৫)