‘রাষ্ট্রহীন’ শামীমাকে বাংলাদেশে পাঠালে মৃত্যুদণ্ড হবে, আদালতে বললেন আইনজীবী

সিরিয়ায় পাড়ি জমানো বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তরুণী শামীমার ব্রিটিশ নাগরিকত্ব বাতিলের ‘গুরুতর পরিণতি’ বিবেচনায় নেননি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আদালতের শুনানিতে বলেছেন শামীমার আইনজীবী।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Nov 2022, 12:50 PM
Updated : 25 Nov 2022, 12:50 PM

যুক্তরাজ্য থেকে সিরিয়ায় পাড়ি জমানো বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তরুণী শামীমা বেগমকে তার মা-বাবার দেশ বাংলাদেশে পাঠালে তিনি মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি হবেন বলে আদালতের শুনানিতে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তার আইনজীবী।

শামীমার ব্রিটিশ নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার কারণে তিনি এখন কার্যত ‘রাষ্ট্রহীন’ বলেও উল্লেখ করা হয়েছে শুনানিতে।

শামীমার নাগরিকত্ব বাতিলের বিরুদ্ধে শুনানি চলছে যুক্তরাজ্যের স্পেশাল ইমিগ্রেশন আপিল কমিশনে (সিয়াক)। সেখানেই শামীমার আইনজীবী ড্যান স্কয়ারস কেসি এসব কথা বলেন বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ পত্রিকা ‘দ্য গার্ডিয়ান’।

২৩ বছর বয়সী এ তরুণীর আইনজীবী আদালতে আপিলের শুনানিতে আরও বলেছেন, ২০১৯ সালে শামীমা বেগমের যুক্তরাজ্যের নাগরিকত্ব বাতিলের ‘গুরুতর পরিণতি’ বিবেচনায় নেননি তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ।

“এটি স্পষ্ট যে, তার (সাজিদ জাভিদ) নাগরিকত্ব বাতিলের সিদ্ধান্ত শামীমা বেগমকে রাষ্ট্রহীন করে দেবে এমন সম্ভাবনা তিনি বিবেচনা করেননি”, বলেন আইনজীবী ড্যান স্কয়ারস কেসি।

আদালতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের দাখিল করা নথিতে দেখা গেছে, শামীমা বেগমের নাগরিকত্ব বাতিল হওয়ার আগের দিনই তার রাষ্ট্রহীনতা নিশ্চিত করা হয়েছিল।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের মনোভাব জানার চেষ্টা করেননি এবং রাষ্ট্রহীন হওয়ার ফলে কি কি হতে পারে সে বিষয়গুলোও বিবেচনা করেননি অভিযোগ করেছেন আইনজীবী।

তিনি বলেন, “এসব বিষয়ের মধ্যে শামীমাকে বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে কি না এবং তিনি কোনও সুরক্ষা পাবেন কি না সে প্রশ্ন রয়েছে।”

শামীমাকে তার নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত করার বাস্তব প্রভাব সম্পর্কে সাজিদ জাভিদ যদি জানার চেষ্টা করতেন তাহলে “বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ তাকে এ বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়ে দিত যে, দেশটিতে ঢুকলে শামীমাকে ফাঁসিতে ঝোলানো হবে,” বলেন আইনজীবী স্কয়ারস কেসি।

তিনি জানান, ‘শামীমার ব্রিটিশ নাগরিকত্ব বাতিলের সিদ্ধান্তের পরপরই বাংলাদেশ এক বিবৃতিতে আপিলকারীর প্রতি তাদের এই কঠোর অবস্থান প্রকাশ করেছিল।’

২০১৯ সালের মে মাসে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, শামীমা বেগম বাংলাদেশে পা দিলে সন্ত্রাসবাদে জড়িত থাকার অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি হতে পারেন।

শামীমার আইনজীবী বলেন, “এটি স্পষ্ট যে, সাজিদ জাভিদ আপিলকারীকে নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত করার বাস্তব প্রভাব খতিয়ে দেখলে তিনি সম্ভবত বুঝতে পারতেন, আপিলকারী কোনও রাষ্ট্রেরই সুরক্ষা না পেতে পারে।”

২০১৫ সালে পূর্ব লন্ডন থেকে আরও দুই কিশোরীর সঙ্গে পালিয়ে সিরিয়ায় গিয়ে ইসলামিক স্টেট (আইএস)- এ যোগ দেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত শামীমা বেগম। তখন তার বয়স ছিল মাত্র ১৫ বছর।

বর্তমানে ২৩ বছরের শামীমা উত্তর সিরিয়ায় সশস্ত্র রক্ষীদের নিয়ন্ত্রণাধীন একটি শরণার্থী শিবিরে আছেন। সিরিয়ায় আইএস উৎখাত অভিযানে আশ্রয় হারিয়ে শামীমার ওই শরণার্থী শিবিরে ঠাঁই হয়।

২০১৯ সালে সেখানে প্রথম তার খোঁজ মেলে। সেখানে তার একটি সন্তানও হয়েছিল, যে পরে মারা যায়। শামীমা জানিয়েছেন, এটি তার তৃতীয় পুত্র। তার আগে আরো দুইটি সন্তান হয়েছিল, দুজনই মারা গেছে।

২০১৯ সাল থেকেই শামীমা যুক্তরাজ্যে ফেরার আবেদন জানিয়ে আসছেন। কিন্তু জাতীয় নিরাপত্তার কথা বলে ওই সময়ে যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ শামীমার দেশে ফেরায় বাধা দেন। শামীমার দেশে ফেরার পথ চিরতরে বন্ধ করতে তার ব্রিটিশ নাগরিকত্বও কেড়ে নেওয়া হয়।

এরপর শামীমা তার আইনজীবীর মাধ্যমে ব্রিটিশ সরকারের এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে আবেদন করেন।

শামীমার আইনজীবীদের যুক্তি ছিল, ব্রিটিশ সরকার `অবৈধভাবে' তাকে রাষ্ট্রহীন করেছে এবং তার জীবনকে ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। তাছাড়া, যুক্তরাজ্যে ফিরতে না পারলে শামীমার পক্ষে আইনি লড়াইও ঠিকমত চালানো সম্ভব নয়।

আরও পড়ুন:

Also Read: শামীমার ‍মামলায় নতুন মোড়, খুলবে যুক্তরাজ্যে ফেরার পথ?

Also Read: শামীমা বেগম যুক্তরাজ্যে ফিরতে পারবেন না: সুপ্রিম কোর্ট

Also Read: একজন শামীমা বেগম এবং ব্রিটেনের ‘ইসলামভিত্তিক’ সন্ত্রাসবাদ

Also Read: ছেলে সন্তানের জন্ম দিলেন আইএসের শামীমা বেগম