শামীমা বেগম যুক্তরাজ্যে ফিরতে পারবেন না: সুপ্রিম কোর্ট

লন্ডন থেকে কিশোর বয়সে পালিয়ে সিরিয়া গিয়ে জঙ্গিদল ইসলামিক স্টেটে (আইএস) যোগ দেওয়া শামীমা বেগমকে  যুক্তরাজ্য ফিরতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত দিয়েছে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট।

নিউজডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Feb 2021, 11:16 AM
Updated : 26 Feb 2021, 01:32 PM

শুক্রবার এ রায় দেওয়া হয় বলে জানায় বিবিসি।

সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের সর্বসম্মতিক্রমে দেওয়া ওই রায়ে বলা হয়, শামীমাকে যুক্তরাজ্যে ফেরার অনুমতি না দেওয়া তার অধিকারের লঙ্ঘন নয়।

আইএসে যোগ দিতে ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে মাত্র ১৫ বছর বয়সে পূর্ব লন্ডনের আরো দুই স্কুলছাত্রীর সঙ্গে সিরিয়া পালিয়ে যান বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক শামীমা। পরে যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তার ব্রিটিশ নাগরিকত্ব বাতিল করে। যার বিরুদ্ধে আইনি লড়াই লড়তে দেশে ফেরার আবেদন করেছিলেন শামীমা।

২১ বছরের শামীমা এখন উত্তর সিরিয়ায় সশস্ত্র রক্ষীদের নিয়ন্ত্রণাধীন একটি শরণার্থী শিবিরে আছেন। সিরিয়ায় আইএস উৎখাত অভিযানে আশ্রয় হারিয়ে শামীমার এই শরণার্থী শিবিরে ঠাঁই হয়। ২০১৯ সালে সেখানে প্রথম তার খোঁজ মেলে। সেখানে তার একটি সন্তানও হয়েছিল, যে পরে মারা যায়।

তখন থেকেই শামীমা দেশে ফেরার আবেদন জানিয়ে আসছেন। কিন্তু জাতীয় নিরাপত্তার কথা বলে ওই সময়ের যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ শামীমার দেশে ফেরায় বাধা দেন। শামীমার দেশে ফেরার পথ চিরতরে বন্ধ করতে তার ব্রিটিশ নাগরিকত্বও কেড়ে নেওয়া হয়।

এরপর শামীমা তার আইনজীবীর মাধ্যমে ব্রিটিশ সরকারের এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে আবেদন করেন।

শামীমার আইনজীবীদের যুক্তি ছিল, ব্রিটিশ সরকার `অবৈধভাবে' তাকে রাষ্ট্রহীন করেছে এবং তার জীবনকে ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। তাছাড়া, যুক্তরাজ্যে ফিরতে না পারলে শামীমার পক্ষে আইনি লড়াইও ঠিকমত চালানো সম্ভব নয়। কারণ, সিরিয়ার শরণার্থী শিবির থেকে শামীমা তার আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলতে কিংবা ভিডিও কলের মাধ্যমে শুনানিতে অংশ নিতে পারছেন না।

গত বছরের জুলাইয়ে আপিল আদালত তাদের রায়ে জানায়, শামীমাকে সুষ্ঠু শুনানি থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে, সিরিয়ার ক্যাম্পে থাকা অবস্থায় তার পক্ষে আইনি লড়াই চালানো সম্ভব নয়।  এ কারণেই তাকে যুক্তরাজ্যে ফেরার অনুমতি দেওয়া উচিত।

যুক্তরাজ্য সরকার পরে সুপ্রিম কোর্টকে আপিল আদালতের ওই রায় পুনর্বিবেচনা করতে বলে। শুক্রবার তার রায় এলো।

শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের প্রেসিডেন্ট লর্ড রিড বলেন, সরকারের শামীমা বেগমকে যুক্তরাজ্যে ফিরতে বাধা দেওয়ার পূর্ণ অধিকার আছে।

তিনি বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্ট সর্বসম্মতিক্রমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সব আপিল গ্রহণ করছে এবং শামীমা বেগমের ক্রস-আপিল বাতিল করছে।”

শামীমার বিষয়ে আপিল আদালত ভুল রায় দিয়েছে এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মামলার বিষয়ে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়েছে বলেও মত দেন লর্ড রিড।

বলেন, ‘‘আপিল আদালত ভুলবশত বিশ্বাস করেছিল, যখন একজন ব্যক্তির সুষ্ঠু বিচার পাওয়ার অধিকারের সঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তার সুরক্ষায় প্রয়োজনীয়তা সাংঘর্ষিক অবস্থায় থাকে তখন অবশ্যই ব্যক্তির সুষ্ঠু বিচার পাওয়ার ‍অধিকারকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

‘‘কিন্তু সুষ্ঠু বিচার পাওয়ার অধিকার সব সময় সব পরিস্থিতির উপরে থাকতে পারে না, বিশেষ করে বিষয়টি যখন জনগণের নিরাপত্তার সঙ্গের জড়িত।”

তাই সুষ্ঠু বিচার পেতে শামীমাকে যুক্তরাজ্যে ফিরিয়ে আনতে সরকারকে বাধ্য করা উদ্ভূত পরিস্থিতির যথাযথ সমাধান নয় বলেই মনে করেন লর্ড রিড। তবে শামীমা অপেক্ষাকৃত নিরাপদ অবস্থায় না পৌঁছানো পর্যন্ত ব্রিটিশ নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার বিরুদ্ধে তার আইনি লড়াই বিরত রাখা যেতে পারে।

তবে তিনি বলেন, ‘‘ওটাও সঠিক সমাধান নয়। কারণ, ওটা সম্ভব হতে কত দীর্ঘ সময় লাগবে সেটাও কেউ জানে না। বর্তমানে যে পরিস্থিতি চলছে তাতে এই উভয়সঙ্কটের সঠিক কোনো সমাধানই আসলে নেই।”

‘লিবার্টি’ নামে একটি মানবাধিকার গ্রুপ শামীমাকে আইনি সহায়তা দিচ্ছে। তারা বলেন, শামীমাকে নিয়ে সর্বশেষ রায় ‘মারাত্মক বিপদজনক নজির’ স্থাপন করেছে।

লিবার্টির আইনজীবী রোজি ব্রিগহাউজ বলেন, ‘‘নিরাপত্তা সংস্থাগুলো সিরিয়া থেকে শত শত মানুষকে নিরাপদে ফেরার ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু সরকার শুধু শামীমা বেগমকেই লক্ষ্যবস্তু হিসেবে বেছে নিয়েছে। এমন করলে ন্যায় বিচার পাওয়া যাবে ‍না।”