পাকিস্তানের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে দুর্নীতি মামলায় গ্রেপ্তারের পর কারাগারে তাকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র হয়েছিল বলে অভিযোগ করেছেন তার আইনজীবীরা।
তারা বলছেন, তেহরিক ই ইনসাফ (পিটিআই) প্রধানকে নির্যাতন করা হয়েছে; ইমরানের যেন হার্ট অ্যাটাক হয়, সেজন্য তার খাবারে ইনসুলিনও মেশানো হয় বলে তাদের অভিযোগ।
ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিক নেতা হয়ে ওঠা ইমরানের দাবি, তাকে এমন এক ইনজেকশন দেওয়া হয়েছিল, যা ধীরে ধীরে হার্ট অ্যাটাকের দিকে নিয়ে যেতে পারতো। কয়েদখানায় তাকে এমনকি ওয়াশরুম ব্যবহারেরও অনুমতি দেওয়া হয়নি। ইমরান বুকে ব্যথা অনুভূত হওয়ার কথাও জানিয়েছেন।
ইমরানের সঙ্গে ঘণ্টাখানেকেরও বেশি সময় কথা বলার পর তার আইনজীবীরা এসব বলেছেন বলে জানিয়েছে এনডিটিভি।
মঙ্গলবার আদালত প্রাঙ্গণ থেকে তেহরিক-ই-ইনসাফের প্রধানকে গ্রেপ্তারের ঘটনা পাকিস্তানজুড়ে তুমুল বিক্ষোভ ও সহিংসতার জন্ম দেয়, এতে অন্তত ৮ জন নিহত হয়। বেশ কয়েকটি জায়গায় সেনাবাহিনীর স্থাপনার ওপর হামলা হয়।
পরে বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট ইমরানের গ্রেপ্তারকে ‘অবৈধ’ অ্যাখ্যা দিয়ে তাকে ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয়।
শুক্রবার জামিন আবেদনের জন্য তার ফের ইসলামাবাদের আদালতে হাজির হওয়ার কথা; আদালতের বাইরে সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বক্তব্যও দিতে পারেন তিনি।
সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী এখন ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টেবিলিটি ব্যুরো- এনএবির হেফাজতে রয়েছেন।
“তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র হয়েছিল। তিনি বলেছেন, তাকে ঘুমানোরও অনুমতি দেওয়া হয়নি। বিছানা, টয়লেট ছাড়া একটি নোংরা ঘরে রাখা হয়েছিল। রাত ৩টায় পুলিশ লাইনসে আনার পর থেকে তাকে কিছু খেতেও দেওয়া হয়নি,” ইমরানের আইনজীবীরা গণমাধ্যমে এমনটাই বলেছেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএনআই।
পাকিস্তানে এখনও তুমুল জনপ্রিয় সাবেক ক্রিকেট তারকা ইমরান জনগণের প্রতি আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠায় লড়াই চালিয়ে যাওয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন, বলেছেন আইনজীবীরা।
কয়েক সপ্তাহ আগেই পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহ বলেছিলেন, “হয় ইমরান খান, নয় তো আমরা হত্যাকাণ্ডের শিকার হবো।”
গত বছরের নভেম্বরে পিটিআইয়ের লং মার্চে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ওপর বন্দুক হামলাও হয়েছিল।
বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট ইমরানকে গ্রেপ্তারের তুমুল সমালোচনা করে। তারা বলে, রেজিস্ট্রারের অনুমতি ছাড়া কাউকেই আদালত প্রাঙ্গণ থেকে গ্রেপ্তার করা যায় না।
মঙ্গলবার গ্রেপ্তার হওয়ার আগে ইমরান জোরের সঙ্গে তাকে হত্যার ষড়যন্ত্রে সেনাবাহিনীর এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার জড়িত থাকার অভিযোগ আনেন, সেনাবাহিনী ওই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আল-কাদির ট্রাস্ট মামলায় এনএবি পাকিস্তানের আধা সামরিক বাহিনী রেঞ্জার্সের সহযোগিতায় তাকে গ্রেপ্তার করে।
তাৎক্ষণিকভাবে তার সমর্থকরা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে, লাহোরে এক সেনা কমান্ডারের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। পিটিআইয়ের নেতাকর্মীরা রাওয়ালপিন্ডির সেনা সদরদপ্তরও অবরোধ করে রাখে।
বেশ কয়েকবার সামরিক অভ্যুত্থান দেখা পাকিস্তানে অতীতে অনেক শীর্ষ রাজনীতিককেই জেলে যেতে হয়েছিল।
আরও খবর: