Published : 11 May 2023, 06:26 PM
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের পদক্ষেপকে ‘অবৈধ’ ঘোষণা করেছে সুপ্রিম কোর্ট। একইসঙ্গে তাকে শুক্রবার ফের ইসলামাবাদ হাই কোর্টে হাজির হওয়ারও নির্দেশ দিয়েছে।
বলা হয়েছে, ইমরান খানকে পুলিশ লাইনস গেস্ট হাউজে রাখা হবে। তবে তাকে বন্দি হিসাবে গণ্য করা হবে না। তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইসলামাবাদ পুলিশ প্রধানকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি উমর আতা বান্দিয়াল বলেছেন, “ইমরান খান অতিথিশালায় একজন অতিথি হিসাবেই থাকবেন। তাকে সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্বভার থাকবে সরকারের ওপর।”
বৃহস্পতিবার কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে ইমরানকে সুপ্রিম কোর্টে হাজির করার পর এ নির্দেশ এল।
গত মঙ্গলবার ইসলামাবাদ হাই কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকেই আল কাদির ট্রাস্ট মামলায় ইমরানকে নাটকীয়ভাবে গ্রেপ্তার করে পাকিস্তানের ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টেবিলিটি ব্যুরো-এনএবি। এই গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে আদালতে আবেদন করে ইমরানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)।
বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টে এ আবেদনের শুনানি চলাকালে ইমরানকে যেভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তা দেশের বিচার বিভাগীয় প্রতিষ্ঠানের জন্য অসম্মানের বলে প্রধান বিচারপতি উমর আতা বন্দিয়াল মন্তব্য করার পর ইমরানকে এক ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হয় ন্যাশনাল একাউন্টেবিলিটি ব্যুরোকে (এনএবি)।
প্রধান বিচারপতি উমর আতা বন্দিয়াল, বিচারপতি মুহাম্মদ আলি মাজহার এবং বিচারপতি আতহার মিনাল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত তিন সদস্যের সুপ্রিম কোর্ট বেঞ্চ বিকাল সাড়ে ৪টার মধ্যে ইমরানকে হাজির করার এ নির্দেশ দেয়।
তবে ইমরানকে আদালতে নেওয়া হয় এরও আরও প্রায় এক ঘণ্টা পর বিকাল ৫টা ৪০ মিনিটে। ১৫টি গাড়ির বহরের কড়া নিরাপত্তায় ইমরানকে আদালতে নেওয়া হয় বলে জানায় পাকিস্তানের জিও নিউজ।
এরপর ইমরানের উপস্থিতিতেই তাকে গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে পিটিআই এর আবেদনের শুনানি ফের শুরুর পর প্রধান বিচারপতি উমর আতা বান্দিয়াল ইমরানকে গ্রেপ্তার বেআইনি উল্লেখ করে তাকে আবার ইসলামাবাদ হাইকোর্টে যাওয়ার ওই নির্দেশ দেন।
তিনি বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি যে, ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের পদক্ষেপ অবৈধ।”
ইসলামাবাদের হাই কোর্টে ইমরানের মামলার শুনানি আগামীকাল শুরু হওয়া উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন এবং বলেন, “আদালত যে সিদ্ধান্ত শোনাবে তা আপনাকে মেনে নিতে হবে।”
ইমরানকে গ্রেপ্তার ঘিরে গত মঙ্গলবার থেকে পাকিস্তানজুড়ে যে সহিংস বিক্ষোভ হয়ে এসেছে তার নিন্দা জানানোর জন্যও ইমরানকে অনুরোধ জানান প্রধান বিচারপতি।
এর জবাবে ইমরান খান আদালত কক্ষে উপস্থিত গণমাধ্যমের মধ্য দিয়ে সমর্থকদেরকে বার্তা দিয়ে সরকারি ও ব্যক্তিগত সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি করা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান। আদালতকে পিটিআই চেয়ারম্যান বলেন, “আমি দেশের কোনও ক্ষতি চাই না, জনগণকেও প্ররোচিত করতে চাই না। আমি কেবল অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চাই।”
PTI Chairman @ImranKhanPTI in Supreme Court today. His arrest has been declared illegal. pic.twitter.com/ewwwIRfqaz
— PTI (@PTIofficial) May 11, 2023
এর আগে পিটিআই এর আবেদনের শুনানি চলাকালে ইমরান খানের আইনজীবী হামিদ খান শীর্ষ আদালতকে জানিয়েছিলেন, তার মক্কেল ইসলামাবাদ হাই কোর্টে গ্রেপ্তার পূর্ব জামিনের জন্য আবেদন করেছিলেন।
ইসলামাবাদ হাই কোর্ট থেকে ইমরানকে যখন গ্রেপ্তার করা হয় তখন তার বায়োমেট্রিকস করানোর প্রক্রিয়া চলছিল। এসময় রেঞ্জাররা কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই কক্ষে প্রবেশ করে ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করে। তার সঙ্গে তারা খারাপ আচরণ করে।
পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি বান্দিয়াল তখন বলেছিলেন, “আদালত আজ একটি উপযুক্ত আদেশ জারি করবে।” আদালত বিষয়টি ‘অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ইমরান খান যে মামলার জন্য জামিন চাইছিলেন সেটিও খতিয়ে দেখেন বান্দিয়াল। আদালতের রেকর্ডে দেখা যায়, মামলার শুনানি নির্ধারিত ছিল না। ইমরানের আইনজীবী জানান, বায়োমেট্রিক পদ্ধতি সম্পন্ন না করে আবেদন দাখিল করা যায় না।
এই প্রেক্ষাপটে বিচারপতি আতাহার মিনাল্লাহ দেখেন যে, ইমরান খান প্রকারান্তরে আদালতে প্রবেশ করেছিলেন। মিনাল্লাহ প্রশ্ন করে বলেন, ন্যায়বিচারের অধিকার থেকে কাউকে কীভাবে বঞ্চিত করা যায়?”
প্রধান বিচারপতি বান্দিয়াল তখন বলেন, আদালতের প্রতি বিশেষ কিছু সম্মান দেখানোর বিষয় আছে। অতীতের একটি ঘটনার উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এর আগেও এনএবি সুপ্রিম কোর্টের পার্কিংস্থল থেকে সন্দেহভাজন একজনকে গ্রেপ্তার করেছিল। আদালত তখন গ্রেপ্তারের নির্দেশ প্রত্যাহার করেছিল।”
প্রধান বিচারপতি ইমরানের আইনজীবীর কাছে জানতে চান, কতজন রেঞ্জার্সকর্মী আদালত প্রাঙ্গণে প্রবেশ করেছিল। জবাবে আইনজীবী জানান, ১০০ জন প্রবেশ করেছিল।
প্রধান বিচারপতি তখন বলেন. ‘আদালত প্রাঙ্গণে ৯০ জন লোক প্রবেশ করলে তার মর্যাদা থাকে কীভাবে? আদালত চত্বর থেকে কীভাবে কোনো ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা যায়? যদি কোনও ব্যক্তি আদালতে আত্মসমর্পণ করে থাকে, তাহলে তাকে গ্রেপ্তার করার অর্থ কী?’
তিনি আরও বলেন, এনএবি “আদালত অবমাননা করেছে। গ্রেপ্তারের আগে তাদের আদালতের রেজিস্ট্রারের অনুমতি নেওয়া উচিত ছিল। আদালতের কর্মীরাও লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন।”
আদালত এনএবি’র গ্রেপ্তারি পরোয়ানা এবং গ্রেপ্তারের পদক্ষেপ পুনপর্যালোচনা করে দেখবে বলে জানিয়েছিলেন বান্দিয়াল।