ইসরায়েলিদের ছোড়া গোলা ও গুলি আরও পশ্চিমে আল-মাওয়াসি এলাকায় আশ্রয় নিয়ে থাকা উদ্বাস্তু পরিবারগুলোর তাঁবুতে আঘাত হানে।
Published : 20 Jun 2024, 01:34 PM
ফিলিস্তিনি ছিটমহল গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফার পশ্চিম অংশের গভীরে যুদ্ধবিমান ও ড্রোনের ছত্রছায়ায় ট্যাংক নিয়ে ঢুকে পড়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। তাদের হামলায় আট ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
বুধবার এসব ঘটনা ঘটেছে বলে রাফার বাসিন্দারা ও ফিলিস্তিনি চিকিৎসা কর্মীরা জানিয়েছেন।
বাসিন্দারা জানিয়েছেন, মধ্যরাতের পর থেকেই রাফার পাঁচটি এলাকায় ইসরায়েলি ট্যাংকগুলো ঢুকতে শুরু করে। তাদের ছোড়া প্রচুর গোলা ও গুলি আরও পশ্চিমে উপকূলবর্তী আল-মাওয়াসি এলাকায় আশ্রয় নিয়ে থাকা উদ্বাস্তু পরিবারগুলোর তাঁবুতে আঘাত হানে।
এতে আট ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে গাজার চিকিৎসা কর্মীরা ও হামাসের গণমাধ্যম জানিয়েছে। তবে যারা নিহত হয়েছেন তাদের পরিচয় শনাক্ত করতে পারেননি তারা। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বলেছে, তারা প্রতিবেদনগুলো যাচাই করে দেখছে।
হামলার পর আতঙ্কিত বহু পরিবার আল-মাওয়াসি থেকে গাজার উত্তর দিকে পালিয়ে গেছে। বাসিন্দারা জানিয়েছেন, রাফার পশ্চিমাংশে বেশ কয়েকটি বাড়ি বিস্ফোরণে উড়িয়ে দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী।
“রাফায় আরেকটি আতঙ্কের রাত। তারা তাদের দখল ধরে রাখার জন্য বিমান, ড্রোন ও ট্যাংক থেকে পশ্চিম এলাকাগুলোতে গোলাবর্ষণ করেছে। মাওয়াসি এলাকায় ঘুমন্ত মানুষের কাছে গুলি ও গোলা গিয়ে পড়ে আর তাতে বহু হতাহত হন,” একটি চ্যাট অ্যাপের মাধ্যমে রয়টার্সকে বলেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাফার এক বাসিন্দা।
গত অক্টোবের ইসরায়েলের বর্বর হামলার মুখে গাজা ২৩ লাখ বাসিন্দার অর্ধেকেরও বেশি রাফায় এসে আশ্রয় নিয়েছিল। গত মাসে মিশরের সীমান্তবর্তী এ শহরটিতে ইসরায়েলি বাহিনী হামলা শুরু করার আগ পর্যন্ত তারা এখানেই ছিল। ইসরায়েল রাফায় স্থল হামলা শুরু করার পর এদের বেশিরভাগই আবার উত্তরদিকে পালিয়ে গেছে।
এখনো যারা রয়ে গেছেন তাদের সংখ্যা এক লাখেরও কম হবে বলে জাতিসংঘ ও ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার রাফায় সাংবাদিকদের ব্রিফ করার সময় এক ইসরায়েলি কমান্ডার জানিয়েছিলেন, রাফার আরও দু’টি এলাকা, শাবুরা ও তেল আল-সুলতান, হামাসের যোদ্ধাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী।
ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর রেডিওকে গিভাতি ব্রিগেডের প্রধান এই কর্নেল বলেন, “সেখানে থাকা হামাসের ব্রিগেডগুলো এখনো লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে, তাদের পুরোপুরি ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া দরকার।”
মিশর ও রাফার মধ্যবর্তী সীমান্তের নিয়ন্ত্রণ এখনও ধরে রেখেছে ইসরায়েলি বাহিনী। সামাজিক মাধ্যমে আসা ভিডিও ফুটেজগুলোতে দেখা গেছে, রাফা ক্রসিংকে ধ্বংস করে দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী, ভবনগুলো অগ্নিদগ্ধ হয়ে পড়ে আছে আর আগ্রাসী বাহিনীর ট্যাংকগুলো সেখানে অবস্থান নিয়ে আছে। কিছু জায়গায় ইসরায়েলের পতাকা উড়ছে।
উত্তরে গাজা সিটির জেইতুন এলাকায় ফের ট্যাংকের বহর পাঠিয়েছে ইসরায়েল। স্থানীয় বাসিন্দারা ট্যাংক ও যুদ্ধবিমান থেকে ব্যাপক গোলাবর্ষণের কথা জানিয়েছেন, পাশাপাশি হামাসের যোদ্ধাদের সঙ্গে ইসরায়েলি বাহিনীর বন্দুক লড়াইয়ের শব্দও শুনেছেন তারা।
গাজা সিটির আরেকটি এলাকায় শেখ রাদওয়ানের একটি বাড়িতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় একটি শিশুসহ চার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে বলে চিকিৎসা কর্মীরা জানিয়েছেন। এদিন পুরো গাজাজুড়ে ইসরায়েলের হামলার মোট ২০ ফিলিস্তিনি নিহত হন।
হামাস ও ইসলামি জিহাদের সশস্ত্র শাখা জানিয়েছে, তাদের যোদ্ধারা ট্যাংক বিধ্বংসী রকেট ও মর্টার বোমা নিয়ে ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে লড়াই করছে।
পরে ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা কেরেম শালোম ক্রসিংয়ে রকেট ছুড়েছে বলে ইসরায়েলি বাহিনী অভিযোগ করেছে।
বুধবার রাফার উত্তরপূর্বে কেরেম শালোম ক্রসিং পার হয়ে সালাহউদ্দিন সড়ক হয়ে আসতে থাকা ত্রাণবাহী ট্রাকবহরের জন্য অপেক্ষা করার সময় বেসামরিক ফিলিস্তিনি ও ব্যবসায়ীদের একটি দলের ওপর ইসরায়েলি বাহিনী হামলা চালায়, এতে ১২ ফিলিস্তিনি নিহত হয় বলে চিকিৎসা কর্মীরা রয়টার্সকে জানিয়েছেন।
গাজা যুদ্ধের আট মাস পার হলেও যুদ্ধ থামার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাকারীদের প্রচেষ্টা ইসরায়েল ও হামাসকে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে রাজি করাতে ব্যর্থ হয়েছে।
এই আট মাসে ৩৭৪০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং গাজার অধিকাংশ মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়েছেন বলে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
ইসরায়েলি বাহিনী গাজার অধিকাংশ এলাকাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। পাশাপাশি সেগুলোর নিয়ন্ত্রণও নিয়ে নিয়েছে। কিন্তু তারা এখনও হামাসকে নির্মূল করার ও ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্ত করার মূল লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি।
আরও পড়ুন:
হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধের হুঁশিয়ারি ইসরায়েলের