যুদ্ধবিরতির বিষয়ে রাশিয়াকে ‘অগ্রসর হওয়ার’ আহ্বান জানিয়েছেন ট্রাম্প।
Published : 12 Apr 2025, 10:43 AM
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে শুক্রবার সেন্ট পিটার্সবার্গে সাক্ষাৎ করেছেন মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফ।
ক্রেমলিন জানিয়েছে, চার ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা বৈঠকে ‘ইউক্রেইনীয় মীমাংসার বিভিন্ন দিক’ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ বছর পুতিনের সঙ্গে উইটকফের হওয়া তৃতীয় এ বৈঠককে ‘ফলপ্রসূ’ বলে বর্ণনা করেছেন বিশেষ দূত কিরিল দিমিত্রিয়েভ।
আলোচনার বর্তমান অবস্থা নিয়ে পুতিনের প্রতি হতাশা প্রকাশ করেছেন ট্রাম্প। শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিনি লেখেন, “রাশিয়াকে এগোতে হবে। এক ভয়াবহ ও কাণ্ডজ্ঞানহীন যুদ্ধে প্রতি সপ্তাহে হাজার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে।”
ট্রাম্পের ইউক্রেইন বিষয়ক দূত কিথ কেলোগের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবকে অগ্রাহ্য করার পর ট্রাম্প এ কথা বললেন।
টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কেলোগ প্রস্তাব করেন, ‘রিঅ্যাসুরেন্স ফোর্স’ হিসেবে ব্রিটিশ ও ফরাসি সেনারা পশ্চিম ইউক্রেইন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
তিনি বলেন, রাশিয়ার সেনাবাহিনী তখন অধিকৃত পূর্বাঞ্চলে থাকতে পারে।
“দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বার্লিনে যা ঘটেছিল, আপনি প্রায় সেরকম করে দেখাতে পারেন।”
কেলোগ পরে সোশাল মিডিয়ায় বলেন, তিনি যা বলেছিলেন তা প্রতিবেদনে ‘ভুলভাবে উপস্থাপন’ করা হয়েছে।
তিনি এক্স পোস্টে লিখেছেন, “আমি ইউক্রেনের সার্বভৌমত্বের সমর্থনে যুদ্ধবিরতি-পরবর্তী স্থিতিস্থাপক বাহিনীর কথা বলছিলাম। আমি ইউক্রেইনকে বিভক্ত করার কথা বলছি না।”
হোয়াইট হাউস বা কিইভ তাৎক্ষণিকভাবে এই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানায়নি। বিবিসি টাইমসের কাছে এর প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়েছে।
এর আগে শুক্রবার ইউরোপীয় দেশগুলো কিইভের জন্য ২১ বিলিয়ন ইউরো (২৪ বিলিয়ন ডলার) সামরিক সহায়তা দিতে সম্মত হয়। ওই অনুষ্ঠানে ইউরোপের প্রতিরক্ষামন্ত্রীরা বলেন, যুদ্ধ বন্ধের কোনো লক্ষণ তারা দেখছেন না।
পুতিন-উইটকফ বৈঠকের আগে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, “সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রক্রিয়া চলমান থাকায় কোনো অগ্রগতি আশা করার দরকার নেই।”
আলোচনায় পুতিন ও ট্রাম্পের বৈঠকের জন্য একটি তারিখ ঠিক করা হতে পারে কি না, এ প্রশ্নের উত্তরে পেসকভ বলেন, “দেখা যাক। উইটকফ কী ভাবনা নিয়ে এসেছেন তার উপর এটি নির্ভর করছে।”
এর আগে সেন্ট পিটার্সবার্গের গ্র্যান্ড হোটেল ইউরোপে দিমিত্রিয়েভের সঙ্গে বৈঠক করেন উইটকফ, যেখানে স্টেইনলেস স্টিল এবং রুশ বাজার নিয়ে একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
রাশিয়ার সার্বভৌম সম্পদ তহবিলের প্রধান ৪৯ বছর বয়সী দিমিত্রিয়েভ গত সপ্তাহে ওয়াশিংটন সফর করেন। ২০২২ সালে ইউক্রেইনে পূর্ণ মাত্রায় রুশ আগ্রাসনের পর যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা তিনিই।
এদিকে ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি শুক্রবার তার নিজ শহর ক্রিভি রিহে পরিদর্শন করে ক্রেমলিনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করার অভিযোগ আনেন। গত ৪ এপ্রিল রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ওই শহরে ৯ শিশুসহ ১৯ জন মারা যায়।
জেলনস্কি অভিযোগ করেন, শত শত চীনা নাগরিক রুশ সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করছে। ইউক্রেইন দুই চীনা নাগরিককে আটকের দাবি করার পর এ অভিযোগ আনা হলো।
জেলেনস্কি বলেন, “আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে যে- অন্তত কয়েকশ চীনা নাগরিক রাশিয়ার দখলদার বাহিনীর অংশ হিসাবে লড়াই করছে। এর অর্থ রাশিয়া স্পষ্টতই চীনাদের জীবন ব্যবহার করেও যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করার চেষ্টা করছে।“
জেলেনস্কি নয় বছর বয়সী হারমান ট্রিপোলেটস এবং সাত বছর বয়সী আরিনা সামোদিনা ও রাদিস্লাভ ইয়াতস্কোর ছবির সামনে ফুল দেন।
পরে তিনি ‘জীবন ও শহর রক্ষায়’ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন।
জেলেনস্কি সোশাল মিডিয়ায় লিখেছেন, “আমরা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করেছি- ইউক্রেইন কেবল চাইছে না, আমরা এই অতিরিক্ত ব্যবস্থা কিনতে প্রস্তুত।
“যখন রাশিয়ার মতো প্রতিবেশী থাকবে, তখন জীবন রক্ষার জন্য কেবল শক্তিশালী অস্ত্রের ওপর ভরসা করা যেতে পারে।”
এর আগে ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ইউক্রেইন-রাশিয়া সংঘাতের অবসান ঘটাতে পারবেন। তিনি শুক্রবার বলেছেন, ২০২২ সালে যখন রাশিয়া পূর্ণ মাত্রায় আগ্রাসন শুরু করে, তখন তিনি হোয়াইট হাউসে থাকলে এমন ঘটনা একেবারেই ঘটত না।
“এমন যুদ্ধ কখনোই হওয়া উচিত নয়, আমি প্রেসিডেন্ট থাকলে ঘটত না।”
যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর গত ফেব্রুয়ারিতে প্রথমবারের মতো সৌদি আরবে মুখোমুখি হন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার কর্মকর্তারা। পূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের বিষয়েও বৈঠকে আলোচনা করেন কর্মকর্তারা।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু হওয়ার পর থেকে জেলেনস্কির সঙ্গেও ট্রাম্পের সম্পর্কের অবনতি ঘটে, যা ফেব্রুয়ারিতে ওভাল অফিসে এক তিক্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি করে।
কৃষ্ণ সাগরে ইউক্রেইন ও রাশিয়ার মধ্যে সীমিত আকারে যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতা করার চেষ্টা করেছিল যুক্তরাষ্ট্র, তবে ক্রেমলিন নিজেদের ওপর থাকা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের অনুরোধ করলে তা ভেস্তে যায়।
ট্রাম্প বলেছেন, কিয়েভ ও মস্কোর মধ্যে যুদ্ধবিরতির চুক্তিতে অগ্রগতি না হওয়ায় তিনি পুতিনের ওপর ‘অত্যন্ত ক্ষুব্ধ’ ও ‘বিরক্ত’।
চলতি সপ্তাহের শুরুতে ওয়াশিংটন ও মস্কো বন্দি বিনিময় শুরু করে।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে যুদ্ধ শুরু হওয়ার সময় ইউক্রেইনের একটি দাতব্য সংস্থায় ৫১ ডলার অনুদান দেওয়ায় রাশিয়ায় কেসেনিয়া কারেলিনা নামের রাশিয়ান-আমেরিকানকে ১২ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।
লস অ্যাঞ্জেলেসের এই বাসিন্দাকে বৃহস্পতিবার সকালে মুক্তি দেওয়া হয়। বিনিময়ে ২০২৩ সালে সাইপ্রাসে গ্রেপ্তার জার্মান-রাশিয়ান নাগরিক আর্থার পেত্রভকে ছাড়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে সামরিক বাহিনী সংশ্লিষ্ট নির্মাতাদের জন্য অবৈধভাবে রাশিয়ায় মাইক্রোইলেকট্রনিক্স রপ্তানির অভিযোগ আনা হয়েছিল।