গত রোববার রাতে রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হওয়ার খবর প্রকাশের পর অনলাইনে অনেক ইরানি আতশবাজি ফাটানোর ভিডিও শেয়ার করা শুরু করেন।
Published : 21 May 2024, 07:24 PM
প্রয়াত প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিকে ‘অপমান করে’ অনলাইনে মন্তব্য, ছবি বা ভিডিও পোস্ট করা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন ইরানের প্রসিকিউটর জেনারেল মোহাম্মদ কাজেম মোবাহহেদি আজাদ।
সোমবার প্রেসিডেন্ট রাইসির নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত হওয়ার পরপরই প্রসিকিউটর জেনারেল আজাদ অনলাইনে রাইসিকে ‘অপমানকারীদের’ গ্রেপ্তার করার কথা বলেন বলে জানায় বিবিসি।
গত রোববার হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট রাইসি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আব্দোল্লাহিয়ানসহ তাদের সঙ্গে থাকা মোট নয়জন।
সেদিন তারা আজারবাইজান সীমান্তবর্তী এলাকায় আরাস নদীর ওপর একটি বাঁধ প্রকল্প উদ্বোধনের পর উত্তর-পূর্বাঞ্চলের শহর তাবরিজে ফিরছিলেন। ঘন কুয়াশার মধ্যে হেলিকপ্টারটি পার্বত্যাঞ্চলে দুর্ঘটনায় পড়ে বলে জানান ইরানি কর্মকর্তারা। দুর্ঘটনাস্থল থেকে সোমবার মৃতদেহগুলো উদ্ধার করা হয়।
রাইসির মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়ার পরপরই কট্টোর ইসলামিক সরকারপন্থি ইরানিরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের শোক প্রকাশ করা শুরু করেন।
অন্যদিকে, ভিন্ন মতাবলম্বীরা ইরানে ইসলামিক বিপ্লবের পর ১৯৮০-র দশকে কয়েক হাজার রাজনৈতিক কারাবন্দিকে হত্যার ঘটনায় রাইসির সংশ্লিষ্টতাকে তুলে ধরেন। কেউ কেউ রাইসির আমলে ইরানজুড়ে ছড়িয়ে পড়া হিজাব বিরোধী আন্দোলনে যেভাবে নিপীড়নের মাধ্যমে ইরান সরকার আন্দোলন দমন করে সে কথা তুলে ধরে তার মৃত্যুতে আনন্দ প্রকাশ করেছেন।
২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে তেহরানে নীতি পুলিশের হেফাজতে কুর্দি তরুণী মাশা আমিনির মৃত্যু ঘিরে ইরানে হিজাব বিরোধী আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। যে আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন নারীরা। হিজাব বিরোধী ওই আন্দোলন একসময় ইরানের কট্টোরপন্থি ইসলামিক শাসকদের বিরুদ্ধে এবং তাদের পতনের দাবিতে গণআন্দোলনে পরিণত হয়। যে আন্দোলন ১৯৭৯ সালের বিপ্লবের পর দেশটিতে সবচেয়ে বড় গণআন্দোলনে পরিণত হয়েছিল। কয়েক মাস ধরে সরকার পতনের দাবিতে ইরান জুড়ে ওই আন্দোলন চললেও শেষ পর্যন্ত রাইসি সরকারের কঠোর দমন-পীড়নে মাঝপথেই রণেভঙ্গ দিতে হয় আন্দোলনকারীদের। কয়েকশ বিক্ষোভকারী নিহত হন বলে জানায় নানা মানবাধিকার সংগঠন। গ্রেপ্তার করা হয় হাজার হাজার বিক্ষোভকারীকে।
বিবিসি জানায়, রোববার রাতে রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হওয়ার খবর প্রকাশের পর অনলাইনে অনেক ইরানি আতশবাজি ফাটানোর ভিডিও শেয়ার করা শুরু করেন। যা দেখে মনে হচ্ছিল, প্রেসিডেন্টের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়ার আগেই তারা তার মারা যাওয়ার আনন্দ উদযাপন করছেন।
অন্য অনেকে অবশ্য যে দুর্গম পার্বত্যাঞ্চলে দুর্ঘটনা ঘটেছে সেখানে চরম বিরূপ আবহাওয়ার মধ্যে উদ্ধারকর্মীদের পৌঁছানোর চেষ্টার প্রশংসা করেছেন।
ইরানে ইসলামিক বিপ্লবের পর কয়েক হাজার ভিন্ন মতাবলম্বীকে বিনাবিচারে হত্যা করা হয়। যে হত্যাকাণ্ডে রাইসি নেতৃত্বের ভূমিকায় ছিলেন। ইরানের বর্তমান ক্ষমতাধররা অবশ্য কখনোই ওই গণহত্যার কথা স্বীকার করেনি। তবে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, প্রায় পাঁচ হাজার ইরানি কিংবা হয়তো তার থেকেও বেশি ভিন্ন মতাবলম্বী ইরানিকে ইসলামিক বিপ্লবের পর প্রথম এক দশকে হত্যা করা হয়। যে কারণে, অনেক ইরানি রাইসিকে ঘৃণা করেন।
তবে রাইসির সমর্থকরা বলেন, তিনি সুবিধাবঞ্চিত এবং গরীবদের প্রেসিডেন্ট। রাইসির আমলে বিচারবিভাগে বেশ কিছু সংস্কার করা হয়। যার ফলে দীর্ঘদিন ধরে আদালতে চলতে থাকা অনেক মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির সুযোগ তৈরি হয়। এছাড়া, রাইসির আমলে বেশ কয়েকজন ইরানি কর্মকর্তার পরিবার ও স্বজনদের দুর্নীতি ও ঘুষ গ্রহণের দায়ে গ্রেপ্তার করা হয়।
আরও পড়ুন:
রাইসির মৃত্যু ঘিরে ইরানিদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া
হেলিকপ্টার দুর্ঘটনা: ইরানে ৫ দিনের শোক, অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট
আমরা জড়িত নই: রাইসির মৃত্যু নিয়ে ইসরায়েলি কর্মকর্তা
ইরানের প্রেসিডেন্টকে বহনকারী হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায়
হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ইরানি প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মৃত্যু