এ ধরনের অ্যাপকে ‘সুপার অ্যাপ’ নামেও ডাকা হয়; এশিয়ার কয়েকটি দেশে বেশ জনপ্রিয়তা আছে এ ঘরানার অ্যাপের। এর সবচেয়ে সহজ উদাহরণ চীনের ‘উইচ্যাট’।
Published : 06 Oct 2022, 02:13 PM
টুইটার প্রশ্নে ফের ‘ইউ-টার্ন’ নেওয়ার পর প্ল্যাটফর্মটি ‘এক্স, দ্য এভরিথিং অ্যাপ’ নির্মাণের গতি বাড়াবে বলে টুইট করেছেন ইলন মাস্ক। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, কী এই এভরিথিং অ্যাপ? হঠাৎ করেই মাস্ক এর কথা বলছেনই বা কেন?
টানা কয়েক মাস ধরে একের পর এক নাটকীয়তার জন্ম দিয়ে আসছেন টেসলা প্রধান ইলন মাস্ক। এপ্রিল মাসে টুইটার কিনে নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন বিশ্বের শীর্ষ ধনী। পরের মাসেই চুক্তি স্থগিত করে জুলাই মাসের শুরুতে টুইটার ক্রয় প্রস্তাব বাতিল করার ঘোষণা দিয়ে বসেন তিনি।
মাস্ককে চুক্তি মানতে বাধ্য করতে মামলা করে বসে টুইটার, পাল্টা মামলা করেছিলেন মাস্ক নিজেও। মামলার বিচার কাজ শুরু হওয়ার দুই সপ্তাহের কম সময় বাকি থাকতে মঙ্গলবারে আবারও চার হাজার চারশ কোটি ডলারে টুইটার কেনার লাইনে ফিরেছেন মাস্ক।
Buying Twitter is an accelerant to creating X, the everything app
— Elon Musk (@elonmusk) October 4, 2022
এবার সিদ্ধান্ত পাল্টানোর কোনো ব্যাখ্যা দেননি ইলন মাস্ক; কেবল টুইট করে বলেছেন, “এক্স, দ্য এভরিথিং অ্যাপ নির্মাণে গতিবর্ধক হিসেবে কাজ করবে টুইটার ক্রয়।”
মাস্ক এই এভরিথিং অ্যাপের কোনো ব্যাখ্যা না দিলেও রয়টার্স বলছে, এ ধরনের অ্যাপকে ‘সুপার অ্যাপ’ নামেও ডাকা হয়; এশিয়ার কয়েকটি দেশে বেশ জনপ্রিয়তা আছে এ ঘরানার অ্যাপের। এর সবচেয়ে সহজ উদাহরণ চীনের ‘উইচ্যাট’। এ ধরনের অ্যাপ নকল করার চেষ্টাও করেছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান।
সুপার অ্যাপ আদতে কী?
সুপার অ্যাপ বা মাস্কের ভাষায় ‘এভরিথিং অ্যাপ’-কে রসিকতা করে অনেকে মোবাইল অ্যাপের সুইস আর্মি নাইফ বলেও সম্বোধন করেন। মেসেজিং, সোশাল নেটওয়ার্কিং, পিয়ার-টু-পিয়ার পেমেন্ট আর ই-কমার্স শপিংয়ের মতো সেবাগুলো থাকে একই অ্যাপে।
এশিয়া মহাদেশের বাসিন্দাদের সিংহভাগ মোবাইল ডিভাইসের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন বলে এই মেগা অ্যাপগুলোর ব্যবহারও বেশি বলে জানিয়েছেন নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক স্কট গ্যালোওয়ে।
বাজারে কোন কোন সুপার অ্যাপ আছে?
বিশ্ববাজারে প্রচলিত সুপার অ্যাপগুলোর মধ্যে সবচেয়ে প্রভাবশালী অবস্থানে আছে চীনের সুপার অ্যাপ উইচ্যাট। রয়টার্স জানিয়েছে, চীনের নাগরিকদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে ওঠা অ্যাপটির ব্যবহারকারীর নিয়মিত ব্যবহারকারীর সংখ্যা একশ কোটিরও বেশি।
অ্যাপটির মাধ্যমে ট্যাক্সি ডাকা থেকে শুরু করে পরিবারের সদস্যদের টাকা পাঠানো এমনকি দোকানে পণ্যের দামও মেটাতে পারেন ব্যবহারকারী। ২০১৮ সালে চীনের কয়েকটি শহর উইচ্যাট অ্যাপকে ‘ইলেকট্রনিক আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম’ হিসেবে ব্যবহারের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষাও চালিয়েছিল বলে জানিয়েছে সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট।
দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার বাজারের আরেকটি বহুল ব্যবহৃত সুপার অ্যাপ হচ্ছে ‘গ্র্যাব’। এই অ্যাপটিতে একই সঙ্গে খাবারের ডেলিভারি সেবা, রাইড-হেইলিং সেবা, পণ্য পরিবহন সেবা, এমনকি বিনিয়োগসহ অন্যান্য আর্থিক সেবাও পান ব্যবহারকারী।
মাস্ক হঠাৎ কেন সুপার অ্যাপে আগ্রহী হলেন?
রয়টার্স জানিয়েছে, জুন মাসে টুইটার কর্মীদের সঙ্গে এক প্রশ্ন-উত্তর পর্বে মাস্ক মন্তব্য করেছিলেন, এশিয়ার বাইরে উইচ্যাটের মতো সুপার অ্যাপের সমতুল্য কিছু নেই।
“চীনে মূলত আপনি উইচ্যাটের ওপর নির্ভর করেই বেঁচে থাকবেন।” -- বলেছিলেন মাস্ক। পশ্চিমা বাজারেও এমন একটি অ্যাপ নির্মাণের সুযোগ দেখছেন বলে যোগ করেছিলেন তিনি।
টুইটারে নতুন টুল এবং সেবা যোগ করলে সেটা কোম্পানির জন্য মাস্কের উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য অর্জনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে। টুইটারের বর্তমান ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২৩ কোটি ৭০ লাখের ঘরে। প্ল্যাটফর্মটির নিয়মিত ব্যবহারকারীর সংখ্যা একশ কোটির বেশিতে নিতে চান বলে জানিয়েছেন মাস্ক।
টুইটারে ডিজিটাল লেনদেন সেবা চালু করার বিষয় নিয়ে মাস্ক তার কাছের মানুষদের সঙ্গে একাধিকবার আলোচনাও করেছেন বলে উঠে এসেছে সম্প্রতি জনসমক্ষে আসা মেসেজে। মাস্কের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় প্রমাণ হিসেবে মাস্ক ও তার কাছের মানুষদের মধ্যে মেসেজে যে আলাপচারিতা হয়েছিল তা সম্প্রতি আদালতে তুলেছেন টুইটারের আইনজীবীরা।
যুক্তরাষ্ট্রে অন্য কোনো প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান কী একই পথে হাঁটার চেষ্টা করেছে?
স্ন্যাপচ্যাটের মূল কোম্পানি স্ন্যাপ ‘পিয়ার-টু-পিয়ার পেমেন্ট’ সেবা স্ন্যাপক্যাশ চালু করলেও ফিচারটি বন্ধ করে দিয়েছে ২০১৮ সালে। মাঝে গেইমিং খাতেও প্রবেশের চেষ্টা করেছিল কোম্পানিটি, কিন্তু খরচ কমানোর চেষ্টার অংশ হিসেবে সে পরিকল্পনাও বাদ দিয়েছে তারা।
সামাজি মাধ্যমভিত্তিক যোগাযোগ আর মেসেজিংয়ের গণ্ডি পেরিয়ে ফেইসবুক ও ইনস্টাগ্রামে ই-কমার্স সেবা সমন্বয়ের চেষ্টা করেও খুব একটা সুবিধা করে উঠতে পারেনি মেটা।