আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা এড়াতে ক্রিপ্টো, ক্রেডিট কার্ড বা এ ধরনের ডিজিটাল পদ্ধতির ব্যবহার বাড়িয়েছে মুক্তিকামী সশস্ত্র দলটি।
Published : 16 Oct 2023, 07:56 PM
বিভিন্ন মিত্র দেশ ও অলাভজনক সংস্থার কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা পেতে বৈশ্বিক আর্থিক নেটওয়ার্ক ব্যবস্থার ব্যবহার করেছে ফিলিস্তিনের সশস্ত্র মুক্তিকামী দল হামাস।
আর্থিক প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ও ইসরায়েলের কর্মকর্তাদের তথ্য অনুসারে, এ অর্থের চালান আসে গাজার বিভিন্ন সুড়ঙ্গ দিয়ে। এ ছাড়া, আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর লক্ষ্যে ক্রিপ্টোমুদ্রাও ব্যবহার করে থাকে সশস্ত্র দলটি।
ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে শত শত নাগরিক হত্যার পর ওই অর্থ তুলতে গিয়ে বাধার মুখে পড়তে পারে গাজা উপত্যকার শাসক দল হামাস। এই আক্রমণের বিপরীতে এরইমধ্যে গাজায় হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল, যেটিকে দুই দেশের সংঘাতের ৭৫ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে ভারী বোমাবর্ষণের ঘটনা হিসেবে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে রয়টার্স।
এই সপ্তাহের শুরুতে ইসরায়েলের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলেছে, তারা বার্কলেইস ব্যাংকের একটি অ্যাকাউন্ট জব্দ করেছে, যেটি হামাসকে তহবিল দেওয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল।
পাশাপাশি, বিভিন্ন ক্রিপ্টোভিত্তিক অ্যাকাউন্টও ব্লক করার কথাও জানিয়েছে সংস্থাটি। তবে, কতগুলো অ্যাকাউন্ট ব্লক করা হয়েছে বা এতে কী পরিমাণ অর্থ ছিল, সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য মেলেনি।
রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই পদক্ষেপে অনলাইনে ছড়িয়ে থাকা আর্থিক জালের কিছুটা ঝলক মিলেছে। এর কয়েকটি সত্যিকারের হলেও বেশিরভাগই লুকানো। আর এর সম্পৃক্ততা রয়েছে ২০০৭ সাল থেকে গাজার শাসকদল হিসেবে দায়িত্ব পালন করা হামাস বা ইসলামপন্থী প্রতিরোধ আন্দোলনের সঙ্গে।
যুক্তরাষ্ট্রের কাউন্টারটেরোরিজম বিভাগের সাবেক কর্মকর্তা ম্যাথিউ লেভিটের অনুমান বলছে, হামাসের আর্থিক বাজেটে তিন কোটি ডলারের বেশি এসেছে ব্যবসায়িক ট্যাক্স ও ইরান, কাতার বা অলাভজনক সংস্থাগুলোর অনুদান থেকে।
ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, উপসাগরীয় বিভিন্ন দেশ, ফিলিস্তিনের প্রবাসী ও নিজস্ব দাতব্য সংস্থাগুলো থেকে আর্থিক অনুদান সংগ্রহ করে হামাস।
এই প্রসঙ্গে হামাস কর্মকর্তাদের মন্তব্য জানতে রয়টার্স যোগাযোগ করলেও কোনো সাড়া মেলেনি। অতীতে হামাস বলেছিল, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বৈধ প্রতিরোধ আটকে দেওয়ার লক্ষ্যে আর্থিক বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
হামাসকে জঙ্গি সংগঠন হিসেবে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মতো পশ্চিমা দেশগুলো। লেভিটের মতে, আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা এড়াতে ক্রিপ্টো, ক্রেডিট কার্ড বা এমন ডিজিটাল পদ্ধতির ব্যবহার বাড়িয়েছে দলটি।
“জঙ্গিবাদের জন্য ক্রিপ্টো অর্থায়নে অন্যতম সফল দল হামাস।” --বলেন ব্লকচেইন গবেষণা কোম্পানি এলিপটিকের সহ-প্রতিষ্ঠাতা টম রবিনসন।
এ বছর হামাস বলেছে, আর্থিক লোকসানের কারণে তারা ক্রিপ্টো খাত থেকে সরে আসছে। আর ক্রিপ্টোমুদ্রা ব্যবস্থায় এই ধরনের লেনদেন ধরা পড়ে যায়।
এই সপ্তাহে ক্রিপ্টো বিশ্লেষক কোম্পানি ‘টিআরএম ল্যাবস’-এর বিশেষজ্ঞরা এক গবেষণাপত্রে উল্লেখ করেন, হামাস সংশ্লিষ্ট সহিংসতা বেড়ে যাওয়ার পর থেকে ক্রিপ্টো খাতে আর্থিক তহবিলও বেড়েছে। তারা আরও যোগ করেছে, ২০২১ সালের মে মাসে যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর হামাস নিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন ক্রিপ্টো ঠিকানায় আর্থিক অনুদান এসেছে চার লাখ ডলারের বেশি।
তবে, গত সপ্তাহের সংঘাতের পর হামাসের সমর্থক দলগুলোর কাছ থেকে কেবল কয়েক হাজার ডলারের ক্রিপ্টো আসার কথা জানিয়েছে টিআরএম।
“এই কম তহবিল আসার সম্ভাব্য কারণ সেগুলো তাৎক্ষণিকভাবেই শনাক্ত করে ফেলছে ইসরায়েলের কর্তৃপক্ষ।” --বলেছে টিআরএম। কোম্পানি আরও বলেছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় হামাস সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন উৎস থেকে ‘লাখ লাখ ডলারের’ ক্রিপ্টো মুদ্রা জব্দ করেছে ইসরায়েল।
রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১ সালের ডিসেম্বর থেকে এ বছরের এপ্রিল পর্যন্ত হামাস সংশ্লিষ্ট প্রায় ১৯০টি ক্রিপ্টো অ্যাকাউন্ট জব্দ করেছে ইসরায়েল।