পুরুষদের আত্মহত্যার ঝুঁকি শনাক্ত ও প্রতিরোধে এই বড় ব্যবধান থেকে যে বাস্তবতা ফুটে ওঠে সেটি হচ্ছে, নারীদের তুলনায় পুরুষদের মানসিক রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার প্রবণতা কম।
Published : 29 Apr 2024, 06:53 PM
গোটা বিশ্বে নারী-পুরুষের সংখ্যা প্রায় সমান হলেও পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, যতো ব্যক্তি নিজের জীবনাবসান ঘটান, তাদের শতকরা ৮০ ভাগই পুরুষ। গবেষকরা খোঁজার চেষ্টা করেছেন, আত্মহত্যায় এই দুই লিঙ্গের মানুষের পার্থক্য কোথায়।
এ বিষয়ে করা এক গবেষণায় পুরুষ ও নারীদের আত্মহত্যার লক্ষণে পার্থক্য খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
দতবে, লক্ষণে পার্থক্যের বাইরেও গবেষকরা বলছেন, পুরুষদের আত্মহত্যার ঝুঁকি শনাক্তকরণ ও প্রতিরোধে এই বড় ব্যবধান থেকে যে কঠোর বাস্তবতা ফুটে ওঠে সেটি হচ্ছে, নারীদের তুলনায় পুরুষদের মানসিক রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার প্রবণতা কম।
তবে এক্ষেত্রে সম্ভাবনা দেখাচ্ছে ‘ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, লস এঞ্জেলেস বা ইউসিএলএ’-এর গবেষকদের পরিচালিত নতুন গবেষণা, যেখানে এমন প্রবণতা আরও ভালোভাবে শনাক্ত করা ও প্রতিরোধের বিভিন্ন নতুন সম্ভাবনার কথা উঠে এসেছে।
বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘আমেরিকান জার্নাল অফ পাবলিক হেলথ’-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনের ওই গবেষণায় গত ১৭ বছরে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল ভায়োলেন্ট ডেথ রিপোর্টিং সিস্টেম’-এ নথিভুক্ত দুই লাখ ৭১ হাজার আত্মহত্যার বিশ্লেষণ রয়েছে।
এজন্য গবেষকরা পুলিশ ও জনস্বাস্থ্য বিষয়ক রেকর্ডে ব্যবহৃত ভাষার ওপর মনোযোগ দিয়েছেন, যেখানে পুরুষ ও নারীর আত্মহত্যার ঘটনা ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রে বড় পার্থক্য দেখা গেছে।
এ গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, মেজাজ, মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা ও বিভিন্ন মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় চিকিৎসার প্রবণতা সাধারণত নারীদের ক্ষেত্রে বেশি।
‘ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট’, ‘থেরাপি’ ও ‘ওয়েলফেয়ার চেক’, এমন বিভিন্ন শব্দ নারীদের নথিতেই বেশি দেখা গেছে। এর থেকে ইঙ্গিত মেলে, তাদের মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক চিকিৎসা পাওয়ার সম্ভাবনাও বেশি।
এর বিপরীতে, পুরুষের আত্মহত্যার ঘটনা ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রে চাকরি হারানো, আর্থিক চাপ ও অ্যালকোহল অপব্যবহারের মতো বাহ্যিক কারণ বেশি দেখা গেছে। এ ছাড়া, ‘অদ্ভুত আচরণ’ ও ‘উৎকণ্ঠা’র মতো শব্দও উল্লেখ ছিল এতে।
পুরুষদের মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক সমস্যার ক্ষেত্রে চিকিৎসার অভাব বা চিকিৎসা নিতে অসম্মতির মতো বিষয়েরও উল্লেখ রয়েছে নথিতে।
গবেষণায় আত্মহত্যার কিছু লক্ষণ চিহ্নিত হয়েছে, যেগুলোর বেশিরভাগই পুরুষদের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এর মধ্যে রয়েছে—
● দীর্ঘস্থায়ী মানসিক সমস্যা
● রোগ নির্ণয় হয়নি
● অদ্ভুত আচরণ
● উত্কণ্ঠা
● ভুল করা
● মনোভাব
● কগনিটিভ বা জ্ঞানভিত্তিক অসুবিধা
● মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য সমস্যার লক্ষণ
● নিজেকে আঘাত
● কগনিটিভ বা জ্ঞানভিত্তিক সিদ্ধান্তহীনতা
এইসব প্রেক্ষাপট স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে থাকেন, আত্মহত্যাচেষ্টায় প্রথম সাড়া দেওয়া ব্যক্তি ও আত্মহত্যা ঠেকানোয় জড়িত ব্যক্তিদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
কারণ, এর মাধ্যমে আত্মহত্যা প্রতিরোধে নিয়েজিত ব্যক্তিদের পক্ষে ঝুঁকিতে থাকা পুরুষদের আরও কার্যকর উপায়ে চিহ্নিত করা ও ঠেকানো সম্ভব হবে।