মঙ্গল গ্রহে উচ্চ মাত্রার আয়নাইজিং বিকিরণ, চরম ঠাণ্ডা ও কার্বন ডাই অক্সাইডওয়ালা পাতলা বায়ুমণ্ডলের সংস্পর্শে আসার পরেও দুই প্রজাতির লাইকেন বেঁচে রয়েছে।
Published : 13 Apr 2025, 07:44 PM
মঙ্গল গ্রহে কি প্রাণের অস্তিত্ব থাকতে পারে কি না নতুন গবেষণায় তার উত্তর খুঁজে পাওয়ার দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, পৃথিবীর সবচেয়ে কঠোর পরিবেশে বেড়ে উঠতে পারে এমন কিছু নির্দিষ্ট ধরনের জীব রয়েছে, যা লাইকেন নামে পরিচিত, মঙ্গল গ্রহের পৃষ্ঠের মতো একই পরিস্থিতিতেও এরা বেঁচে থাকতে পারে বলে উঠে এসেছে গবেষণায়।
এ রোমাঞ্চকর আবিষ্কার লাল গ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব থাকতে পারে কি না তা বোঝার জন্য বিজ্ঞানীদের ‘আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গেল’ বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
এ গবেষণায় প্রথম ইঙ্গিত মিলেছে, মঙ্গল গ্রহে উচ্চমাত্রার আয়নাইজিং বিকিরণ, চরম ঠাণ্ডা ও কার্বন ডাই অক্সাইডওয়ালা পাতলা বায়ুমণ্ডলের সংস্পর্শে আসার পরেও দুটি প্রজাতির লাইকেন জীবিত ও সক্রিয় থাকতে পারে।
গবেষকরা বলছেন, আরও বিস্ময়কর বিষয় হচ্ছে লাইকেনের ছত্রাক অংশটি বিভিন্ন বিপাকীয় প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছিল। যার মানে, এরা কেবল জীবিতই ছিল না, কার্যকরও ছিল।
লাইকেন কোনও একক জীব নয়, বরং ছত্রাক, শৈবাল বা সায়ানোব্যাকটেরিয়ার মধ্যে একটি অংশীদারিত্ব বজায় রাখে এরা। এদের গঠন নাছোড়বান্দা প্রকৃতির। এর কারণে এরইমধ্যে মরুভূমি ও অ্যান্টার্কটিকার মতো চরম জায়গায় বাস করতে পারে এরা।
গবেষণায় ‘ডিপ্লোসচিস্টেস মাসকোরাম’ ও ‘সেট্রারিয়া অ্যাকুলেটা’ নামের দুটি নির্দিষ্ট লাইকেন প্রজাতির দিকে নজর দিয়েছেন গবেষকরা। ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের কারণে এদের বেছে নিয়েছেন তারা।
মঙ্গল গ্রহের মতো পরিবেশ অনুকরণ করে এদের একটি ভ্যাকুয়াম চেম্বারে রাখেন গবেষকরা, যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল শক্তিশালী সৌর কার্যকলাপের এক বছরের বিকিরণের মাত্রাও।
পাঁচ ঘণ্টা ধরে মঙ্গলের মতো চাপ, ঠাণ্ডা তাপমাত্রা ও ক্ষতিকর এক্স-রে বিকিরণের সংস্পর্শে আসে এসব লাইকেন। গবেষণার ফলাফল ছিল বিস্ময়কর।
এসব লাইকেনের মধ্যে ‘ডি মাসকোরাম’ লাইকেন বিপাকীয়ভাবে সক্রিয় থাকতে পেরেছে। যার থেকে ইঙ্গিত মেলে, নিজেকে রক্ষা করার পাশাপাশি এ ধরনের চরম পরিস্থিতিতেও কাজ চালিয়ে যেতে পারে এরা।
এ গবেষণার প্রধান লেখক কাজা স্কুবালা বলেছেন, “আমাদের গবেষণাতেই প্রথমবারের মতো দেখা গেছে, মঙ্গলের মতো পরিস্থিতিতে নিজেদের বিপাক প্রক্রিয়া চালিয়ে যেতে পারে লাইকেন। ডি মাসকোরাম নামের লাইকেন কেবল বেঁচে থাকতে পারে না, বরং নিজের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও সক্রিয় করতে পারে।”
গবেষকরা বলছেন, ভবিষ্যতের মহাকাশ অভিযানে প্রকৃত মঙ্গলগ্রহের পরিবেশে এ ধরনের জীব কীভাবে আচরণ করে তা পরীক্ষা করবেন তারা।
গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘আইএমএ ফাঙ্গাস’-এ।