বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ক এখন বলছেন, প্রস্তাবিত দামেই টুইটার কিনতে চান তিনি। এর আগে টানা কয়েক মাস একের পর এক নাটকীয়তার জন্ম দিয়েছেন ‘টেকনোকিং অফ টেসলা’।
শেয়ার প্রতি ৫৪ ডলার ২০ সেন্ট দামের প্রস্তাব দিয়ে এপ্রিল মাসে টুইটার কিনে নেওয়ার সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করেন মাস্ক। বট অ্যাকাউন্টের সংখ্যা নিয়ে টুইটার সঠিক তথ্য দিচ্ছে না- এমন অজুহাতে জুলাই মাসে সে চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসতে চেয়েছেন তিনি।
সে সময়ে বাজার বিশ্লেষকদের একাংশের ধারণা ছিল, সম্ভবত দাম কমানোর চেষ্টা করছেন মাস্ক।
আদালতে যায় টুইটার, বিচারকাজ এখনও শুরু হয়নি। আর এরই মধ্যে প্রমাণাদি হিসেবে জনসমক্ষে চলে এসেছে ইলন মাস্ক, জ্যাক ডরসি, পারাগ আগরাওয়ালসহ প্রযুক্তি খাতের অনেকের সঙ্গে মেসেজে মাস্কের আলাপচারিতা।
মাস্কের নতুন করে এই সুর পাল্টোনোর ঘটনা ঘটল পুরনো মেসেজগুলো জনসমক্ষে আসার পরপরই। টুইটারকে পাঠানো এক চিঠিতে চার হাজার চারশ কোটি ডলার দাম দিয়েই মাইক্রোব্লগিং প্ল্যাটফর্মটি কিনে নিতে ইচ্ছুক বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবীরা।
ব্যক্তিগত আলাপচারিতা জনসমক্ষে চলে আসায় সম্ভবত বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছেন মাস্ক এবং মেসেজে তার সঙ্গে আলাপচারিতায় অংশগ্রহণকারীরা। মামলার বিচার কাজ শুরু হলে মাস্কের আরও বিব্রতকর তথ্য-উপাত্ত আদালতে তুলতে পারে টুইটার। প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট ভার্জ বলছে, এতে হিতে-বিপরীত হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে মাস্কের জন্য।
মুখরক্ষার খাতিরে এবং আদালতের নাস্তানাবুদ হওয়া এড়াতেই মাস্ক সিদ্ধান্ত পাল্টে থাকতে পারেন বলে ধারণা করছে সাইটটি।
অন্যদিকে বিবিসি জানিয়েছে, আদালতে টুইটারের জেতার সম্ভাবনাই বেশি বলে ধারণা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
টুইটারকে পাঠানো চিঠিতে মাস্কের আইজীবীরা বলেছেন, হাতে অর্থ এলে এবং আইনি লড়াইয়ের ইতি টানলেই মালিকানা হাতবদলের লেনদেন সম্পন্ন করতে ইচ্ছুক মাস্ক।
মাস্কের আইনজীবীদের চিঠি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে এক টুইটার মুখপাত্র সিএনএনকে বলেছেন, এপ্রিলে মাস্কের দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ‘শেয়ার প্রতি ৫৪ ডলার ২০ সেন্ট দাম দিয়ে লেনদেন সম্পন্ন করতে ইচ্ছুক’ তার কোম্পানি।
সর্বশেষ এই চিঠির খবর প্রকাশ্যে আসার পর শেয়ার বাজারে টুইটার শেয়ারের দাম বেড়ে পৌঁছেছে ৫২ ডলারে।
এখনও সিদ্ধান্ত পাল্টানোর কোনো কারণ ব্যাখ্যা করেননি মাস্ক। তবে, টুইটারে বলেছেন–
এক্ষেত্রে ‘X, the everything app’-এর কোনো ব্যাখ্যাও দেননি মাস্ক।
চার হাজার চারশ কোটি ডলারে টুইটার কেনার প্রস্তাব দেওয়ার সময় প্ল্যাটফর্মটি থেকে বট ও স্প্যাম অ্যাকাউন্ট দূর করে একে বাকস্বাধীনতার আশ্রয়স্থল হিসেবে প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছিলেন মাস্ক।
কিন্তু, খামখেয়ালী আচরণে পরিচিতি পাওয়া এ শতকোটিপতি হঠাৎই অভিযোগ তোলেন– স্প্যাট ও বট অ্যাকাউন্টের যে হিসেব টুইটার দিচ্ছে, বাস্তবে এর সংখ্যা তার চেয়ে অনেক বেশি।
টুইটার নিয়ে মাস্কের আচরণ ও বক্তব্যের প্রভাব পড়েছিল তার মূল কোম্পানি টেসলাও ওপরেও। মাস্কের সম্পদের সিংহভাগ এ কোম্পানি কেন্দ্রীক হলেও, টুইটার নিয়ে নাটকীয়তার পার্শপ্রতিক্রিয়ায় শেয়ার বাজারে দাম পড়েছে টেসলা শেয়ারের।
টুইটার-মাস্কের পাল্টাপাল্টি মামলার বিচারকাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল ১৭ অক্টোবর। দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়ার পাশাপাশি সামাজিক মাধ্যমে জনসমক্ষ্যেই সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে রেষারেষিতে জড়িয়েছেন মাস্ক; বিশেষ করে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে টুইটার প্রধান পারাগ আগরাওয়ালের সঙ্গে মাস্কের বৈরিতা।
মামলার শুনানীতে সাক্ষী হিসেবে জড়িয়ে পরেছিলেন প্রযুক্তি জগতের অনেক প্রভাবশালীই। শুনানী শুরু হওয়ার এক সপ্তাহ আগেই সাক্ষ্য দেওয়ার কথা ছিল মাস্কের।
তবে, মাস্কের ওপর ভরসা পাচ্ছেন না বাজার সংশ্লিষ্টদের অনেকে। বিবিসি জানিয়েছে, মাস্ক সত্যিই টুইটার কিনবেন কি না, নাকি সর্বশেষ চিঠি আরও বিলম্বের কৌশল মাত্র– সে বিষয়ে সন্দেহ থেকেই যায়।