“এসব চুল্লি অনেক বড় আকারে তৈরি করি তাহলে একসঙ্গে দুটি সমস্যার সমাধান করা সম্ভব- বাতাস থেকে সিওটু কমানো ও জীবাশ্ম জ্বালানির একটি পরিবেশবান্ধব বিকল্প তৈরি।”
Published : 16 Feb 2025, 04:43 PM
সম্প্রতি সৌরশক্তি চালিত একটি চুল্লি তৈরি করেছেন বিজ্ঞানীরা। তাদের দাবি, বাতাস থেকে দূষণ টেনে সরাসরি গাড়ি ও প্লেনের জ্বালানিতে রূপান্তর করবে এটি।
‘ইউনিভার্সিটি অফ কেমব্রিজ’-এর তৈরি এ নতুন চুল্লিটি সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তৈরি করেছেন বিজ্ঞানীরা।
এ প্রক্রিয়ায় বাতাসের কার্বন ডাই অক্সাইড বা সিওটু গ্যাসকে সিঙ্গাসে (সংশ্লেষণ গ্যাসের সংক্ষিপ্ত রূপ) রূপান্তরের জন্য কোনও কেবল বা ব্যাটারির প্রয়োজন হবে না বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেনডেন্ট।
গবেষকরা বলছেন, জলবায়ু সংকট ঠেকাতে নতুন এক সমাধান দেবে চুল্লিটি, যা পরিবেশ থেকে কার্বন কমিয়ে আনতে বর্তমানে ব্যবহৃত হচ্ছে ‘কার্বন ক্যাপচার অ্যান্ড স্টোরেজ’ বা সিসিএস প্রযুক্তির বিকল্প হিসেবে।
জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে খারাপ প্রভাবকে কমিয়ে আনার বা উল্টো পথে ঘুরিয়ে দেওয়ার উপায় হিসেবে ‘সিসিএস’ প্রক্রিয়াকে প্রচার করছে উন্নত দেশগুলো। সম্প্রতি এই প্রযুক্তিতে দুই হাজার দুইশ কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যুক্তরাজ্য সরকার।
“কেমন হবে যদি মাটির নিচে কার্বন ডাই অক্সাইড পাম্প করার বদলে এর থেকে আমরা কার্যকর কিছু তৈরি করতে পারি?,” এমনটাই বলেছেন কেমব্রিজের রসায়ন বিভাগের ড. ইউসুফ হামিদ।
“সিওটু ক্ষতিকর গ্রিনহাউস গ্যাস। তবে বিশ্ব উষ্ণায়নে ভূমিকা না রেখেও দরকারি বিভিন্ন রাসায়নিকে পরিণত হতে পারে এই গ্যাস... যদি আমরা এসব চুল্লি অনেক বড় আকারে তৈরি করি তাহলে একসঙ্গে দুটি সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। এতে করে বাতাস থেকে সিওটু কমানো ও জীবাশ্ম জ্বালানির একটি পরিবেশবান্ধব বিকল্পও তৈরি হতে পারে।”
গবেষকরা বলছেন, এ চুল্লিটি বিশেষ ফিল্টারের মাধ্যমে রাতে বাতাস থেকে সিওটু শোষণ করে দিনের বেলায় সূর্যের আলো ব্যবহার করে তা রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে সিঙ্গাসে রূপান্তর করে, যা পেট্রোলের বিকল্প হিসেবেও কাজ করতে পারে।
রাসায়নিক ও ওষুধজাত পণ্য তৈরি করতেও ব্যবহার করা যেতে পারে এসব সংশ্লেষণ গ্যাসকে। আর এটি সব জায়গায় পাওয়া গেলে তা প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাস বা কাজ করেন এমন ব্যক্তিদের স্বাচ্ছন্দ্যে নিজস্ব জ্বালানি তৈরিতে সাহায্য করবে।
“যেসব পণ্যের ওপর আমরা এরইমধ্যে নির্ভর করতে শুরু করেছি সেগুলো তৈরির জন্য জীবাশ্ম জ্বালানি খনন ও পুড়িয়ে ফেলার কাজ চালিয়ে যাওয়ার বদলে আমরা সরাসরি বাতাস থেকে আমাদের প্রয়োজনীয় সিওটু পেতে পারি। এমনকি এর পুনরায় ব্যবহারও সম্ভব,” বলেছেন এ গবেষণার নেতৃত্বে থাকা অধ্যাপক এরউইন রেইসনার।
“রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে বৃত্তাকার ও টেকসই এক অর্থনীতি আমরা গড়ে তুলতে পারি।”
“ডাইরেক্ট এয়ার ক্যাপচার অফ কার্বন ডাই অক্সাইড ফর সোলার ফিউয়েল প্রোডাকশন ইন ফ্লো’ শিরোনামে গবেষণাপত্রটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট ‘নেচার এনার্জি’-তে।
বর্তমানে ‘কেমব্রিজ এন্টারপ্রাইজ’-এর সহায়তায় এ চুল্লিটি বাণিজ্যিকীকরণের আশা করছেন বিজ্ঞানীরা।