বিভিন্ন মেডিকেল কোম্পানির কাছে বিক্রি বা উদ্দেশ্যমূলক বিজ্ঞাপনের জন্যও ব্যবহার করা যেতে পারে ব্যক্তিগত তথ্য।
Published : 27 Aug 2024, 04:18 PM
হ্যাকিংয়ের শিকার হতে পারে স্মার্টওয়াচ! এমনকি ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্যও হাতিয়ে নিতে পারে হ্যাকাররা— এমনই তথ্য উঠে এসেছে সাম্প্রতিক এক গবেষণায়।
ব্যবহারকারীর হাঁটার পদক্ষেপ, হার্ট রেট ও অন্যান্য স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট বিষয় ট্র্যাক করার জন্য বেশ কাজের ডিভাইস বিভিন্ন ধরনের স্মার্টওয়াচ।
‘চার্লস ডারউইন ইউনিভার্সিটি (সিডিইউ)’-এর সাম্প্রতিক এক গবেষণায় সতর্ক করা হয়েছে, এ ধরনের সহজ পরিধেয় ডিভাইস বিশেষ করে স্মার্টওয়াচ কারো ব্যক্তিগত তথ্য চুরির পাশাপাশি হ্যাকারদের জন্য ‘সোনার খনি’ও হতে পারে।
‘ভালনারিবিলিটি অ্যানালিসিস অ্যান্ড এক্সপ্লয়টেশন অ্যাটাকস অন স্মার্ট ওয়্যারএবল ডিভাইসেস’ শিরোনামে গবেষণাটি ২০২৪ সালের দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সম্মেলন ‘অন অ্যাডভান্সমেন্ট ইন কম্পিউটেশন অ্যান্ড কম্পিউটার টেকনোলজিস (ইনসিএসিসিটি)’-এ উপস্থাপিত হয়েছে।
সাইবার হামলার ক্ষেত্রে কতটা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে তা দেখার জন্য ২৫ থেকে ১৫০ ডলার দামের বেশ কিছু পরিধেয় স্মার্ট ডিভাইস পরীক্ষা করেছেন গবেষকরা।
এসব ডিভাইস ব্যবহারকারীদের স্বাস্থ্য, ফিটনেস নিরীক্ষণ করতে ও চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট পরীক্ষা চালাতে সহায়তা করে, যা প্রায়ই ‘ব্লুটুথ লো এনার্জি বা বিএলই’ প্রযুক্তির উপর নির্ভর করে।
কম ব্যাটারি শক্তি খরচ করার কারণে ব্যবহার হয়ে থাকে এই ‘বিএলই’ প্রযুক্তির। তবে এর জন্য আপস করতে হয় নিরাপত্তার বিষয়টি। সমীক্ষা অনুসারে, এই আপসের কারণেই পরিধেয় বিভিন্ন ডিভাইস হ্যাকারদের অপকর্মকে আরও সহজ করে তোলে।
এ গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন ‘চার্লস ডারউইন ইউনিভার্সিটি’-এর ‘বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি’ অনুষদের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের প্রভাষক ড. ভরনিধরন শানমুগান। তিনি ও তার গবেষণা দলটি খুঁজে পেয়েছেন, সহজেই এইসব ডিভাইসের সঙ্গে সংযোগ তৈরি করতে পারে হ্যাকাররা। কাজের জন্য স্মার্টওয়াচ যেসব ডেটা সংগ্রহ করে সেখানে প্রবেশ বা ম্যানিপুলেটও করতে পারার কথা তাদের।
“কারো হার্ট রেট বেশি বা কম তা আমরা দেখতে পারি, তারা কোথায় ছিলেন বা কোথায় কোথায় হেঁটেছেন তা ট্র্যাক করতে এবং রক্তচাপ ও ইসিজি রিডিংয়ের মতো অন্যান্য সংবেদনশীল স্বাস্থ্য তথ্যও দেখতে পারি।”
এ ধরনের তথ্য যে কারো কাছেই বিস্ময়করভাবে মূল্যবান, যা বিভিন্ন চিকিৎসাপ্রযুক্তি নিয়ে কাজ করা কোম্পানির কাছে বিক্রি করা যেতে পারে বা ‘টার্গেটেড’ বিজ্ঞাপনের জন্যও ব্যবহার হতে পারে। পাশাপাশি ব্যবহারকারীর বিস্তারিত তথ্য নিয়ে প্রোফাইল তৈরি করতেও হ্যাকারদের সহায়তা করতে পারে।
এদিকে, স্মার্টওয়াচ নির্মাতারাও সুরক্ষা ব্যবস্থাকে যথেষ্ট গুরুত্ব সহকারে নিচ্ছেন না বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ড. শানমুগান।
“এ সমস্যার সমাধান না হলে কোনো ব্যক্তির পরিচয় চুরি ও আর্থিক জালিয়াতি বৃদ্ধির মতো অবস্থা আমরা দেখতে পাব। হ্যাকাররা কারো ব্যক্তিগত তথ্যে সহজেই প্রবেশাধিকার পেতে পারে, যার ফলে আপনার পরিচয় বা অর্থের খারাপ ব্যবহার হতে পারে।”
আর এটা কেবল আর্থিক ঝুঁকির বিষয়ই নয়, বরং স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্যও ভুল হাতে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে নোরিজ।
ব্ল্যাকমেইল বা শারীরিক ক্ষতির কারণ হতে পারে এটি, বিশেষ করে বয়স্ক বা দুর্বল ব্যক্তিদের বেলায়। একইসঙ্গে ব্যবসায়িক জগতে এরকম বিভিন্ন ডিভাইস কর্পোরেট গুপ্তচরবৃত্তির জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে, ফলে প্রতিযোগীরা যে কারো মূল্যবান তথ্য চুরি করতে পারে।
এ গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছে ভারতের বেঙ্গালুরু শহরের ‘ক্রাইস্ট অ্যাকাডেমি ইনস্টিটিউট ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিজ’-এর সহযোগিতায়।