গ্রহটির প্রথম ঝলক মিলেছিল ১৯৮৬ সালে, যখন ভয়জার ২ ইউরেনাস ও এর পাঁচটি চাঁদের বেশ কিছু রোমাঞ্চকর ছবি পৃথিবীতে পাঠিয়েছিল।
Published : 12 Nov 2024, 07:37 PM
ইউরেনাস ও এর সবচেয়ে বড় পাঁচটি চাঁদ হয়ত প্রাণহীন কোনো জগৎ নয়, যদিও দীর্ঘদিন ধরে বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল ভিন্ন।
বরং এইসব চাঁদে সমুদ্র এমনকি জীবন ধারণ করার মতো সম্ভাবনাও আছে বলে দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা।
আমরা এ গ্রহ নিয়ে যা যা তথ্য জানি, তার বেশিরভাগই সংগ্রহ করেছে নাসা’র ‘ভয়জার ২’ মহাকাশযান, যা গ্রহটির পাশ দিয়ে গিয়েছে প্রায় ৪০ বছর আগে।
কিন্তু নতুন এক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ভয়জারের ভ্রমণের সময় মহাকাশযানটি শক্তিশালী এক সৌর ঝড়ের মুখে পড়েছিল। ফলে, ইউরেনাস গ্রহটির অবস্থা নিয়ে বিভ্রান্তিকর ধারণা মিলেছে।
আমাদের সৌরজগতের বাইরের প্রান্তে অবস্থিত এক অপরূপ, বরফে আবৃত জগৎ ইউরেনাস, যা সৌরজগতের সবচেয়ে ঠাণ্ডা হিসেবেও বিবেচিত। এ ছাড়া, অন্যান্য গ্রহের তুলনায় এটি একটু বেশিই একদিকে কাত হয়ে আছে। গ্রহটি দেখলে মনে হয়, এটি যেকোনো মুহুর্তে ছিটকে যেতে পারে, যার কারণে এটি দেখতে আরও অদ্ভুত লাগে।
গ্রহটির প্রথম ঝলক মিলেছিল ১৯৮৬ সালে, যখন ভয়জার ২ ইউরেনাস ও এর পাঁচটি চাঁদের বেশ কিছু রোমাঞ্চকর ছবি পৃথিবীতে পাঠিয়েছিল।
কিন্তু বিজ্ঞানীদেরকে এর চেয়েও বেশি বিমোহিত করেছে সে সময় ভয়জার ২’র পাঠানো ডেটা। এর থেকে ইঙ্গিত মিলেছিল, ইউরেনিয়ান সিস্টেম তাদের ধারণার চেয়েও অদ্ভুত।
সে সময় মহাকাশযানটির বিভিন্ন যন্ত্রে নেওয়া পরিমাপ থেকে ইঙ্গিত মিলেছিল, ওই গ্রহ ও এর বিভিন্ন চাঁদ নিষ্ক্রিয় অবস্থায় ছিল, যা সৌরজগতের বাইরে অংশে থাকা অন্যান্য চাঁদে দেখা যায়নি।
এতে আরও দেখা গেছে, ইউরেনাসের চৌম্বক ক্ষেত্র আসলে বিকৃত অবস্থায় ছিল।
গ্রহটির চৌম্বক ক্ষেত্র বিভিন্ন গ্যাস এবং ইউরেনাস ও এর চাঁদগুলো থেকে নির্গত উপাদানগুলোকে নিজের জালে আটকে ফেলে। এটা সম্ভবত সমুদ্র বা গ্রহের ভূতাত্ত্বিক গতিবিধির কারণে ঘটে থাকে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিবিসি।
ভয়জার ২’ এমন কোনো প্রমাণ খুঁজে পায়নি, যার ফলে ইউরেনাস ও এর বড় পাঁচটি চাঁদ মৃত ও নিষ্ক্রিয় অবস্থায় আছে, এমন ভুল ধারণা তৈরি হয়েছিল।
কিন্তু নতুন বিশ্লেষণে কয়েক দশক দীর্ঘ রহস্যের জট খুলেছে। এতে দেখা যায়, ভয়জার ১ আসলে এমন দিনে ইউরেনাকে অতিক্রম করেছে যেটি ছিল গ্রহটির জন্য একটি জট পাকানো দিন।
নতুন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ভয়জার ২ ইউরেনাস অতিক্রম করার সময় সূর্য খুবই প্রখর ছিল। ফলে, এক শক্তিশালী সৌরঝড় তৈরি হয়, যা সম্ভবত গ্রহটির বিভিন্ন উপাদানকে গ্রাস করার পাশাপাশি এর চৌম্বক ক্ষেত্রকে কিছু সময়ের জন্য বিকৃত করে ফেলেছিল।
ভয়জার ২ ওই বরফাবৃত জগৎ ও এর চাঁদগুলো অতিক্রম করার পর প্রায় ৪০ বছর পেরিয়ে যাওয়ার পর এখন নতুন মিশন উৎক্ষেপণের পরিকল্পনা করছে নাসা। ‘ইউরেনাস অরবিটার অ্যান্ড প্রোব’ নামের এটি নভোযান পাঠাবে নাসা। এটি ১০ বছর ধরে গ্রহটিকে ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবক্ষণ করবে।
নাসার গবেষক ড. জেমি জাসিনস্কি, যিনি ভয়জার ২’র ডেটা নতুন করে পরীক্ষা করার পরামর্শ দিয়েছিলেন, তার মতে, এ মিশনের বিভিন্ন যন্ত্র নকশা করা ও এর বৈজ্ঞানিক জরিপ নিয়ে পরিকল্পনা করতে গেলে তার গবেষণার বিভিন্ন ফলাফল বিবেচনায় আনতে হবে।
নাসার মহাকাশযানটি ইউরেনাসে গিয়ে পৌঁছাতে পারে ২০৪৫ সাল নাগাদ। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, তখন এই গ্রহের বরফাবৃত চাঁদ নিয়ে আরও তথ্য মিলবে। এগুলো এক সময় মৃত জগৎ হিসেবে বিবেচিত হলেও এতে জীবন ধারণের সম্ভাবনাও আছে বলে উল্লেখ রয়েছে বিবিসি’র প্রতিবেদনে।