“আমরা একটি অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণ করছিলাম, যেখানে এআই ক্রমাগতই কফির টেবিলের নিচে মোজা রেখে দিচ্ছিল। আমরা ভেবেছিলাম, এটা কোনও বাগ কি না।”
Published : 04 May 2024, 01:36 PM
প্রযুক্তি খাতের বেশ কিছু শাখায় এরইমধ্যে এআই প্রযুক্তির ব্যবহার দেখা গেছে। তবে, এবার গেইমিং শিল্পের বেলাতেও সম্ভাবনা দেখাচ্ছে উদীয়মান এ প্রযুক্তি।
কম্পিউটার গেইমিং শিল্পে এক যুগ ধরে কাজ করছেন অ্যান্ড্রু ম্যাক্সিনভ। তবে, এই দীর্ঘ অভিজ্ঞতার পরও শীর্ষ গেইমগুলোর নির্মাণ ব্যয় নিয়ে তিনি বিস্মিত।
“আমি প্লেস্টেশনের জন্য কাজ করতাম। আমার কাজ করা সর্বশেষ গেইমের উৎপাদন খরচ ছিল ২২ কোটি ডলার। এর সঙ্গে বাজার প্রচারণার খরচ যোগ করলে প্রতিটি গেইম তৈরির পেছনে খরচ বেড়ে গিয়ে দাঁড়ায় ৫০ কোটি ডলার পর্যন্ত, যা বেশিরভাগ কোম্পানির জন্যেই চ্যালেঞ্জের,” বলেন ম্যাক্সিনভ।
তিনি বিশ্বাস করেন, বাড়তে থাকা এ খরচ কমানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে এআই প্রযুক্তি, যেখানে বারবার করতে হয় এমন বিভিন্ন কাজ স্বয়ংক্রিয় করে ফেলার মাধ্যমে গেইম নকশাকারীদের অনেক সময় বেঁচে যাবে।
এজন্য ‘প্রমিথিয়ান এআই’ নামে একটি স্টার্টআপ কোম্পানিও প্রতিষ্ঠা করেছেন তিনি, যেখানে গেইম নির্মাতাদের নিজস্ব ভার্চুয়াল জগৎ সাজানোর জন্য বিভিন্ন টুল ব্যবহারের সুযোগ মেলে।
ম্যাক্সিমভ আশা করছেন, এ কোম্পানির মাধ্যমে গেইম তৈরির প্রচলিত ধারা ভেঙে ফেলা সম্ভব।
কখনও কখনও এআই এমন কিছু ধারণা নিয়ে আসে, যা সবাইকে চমকে দেয়।
“একবার আমরা একটি পুলিশ স্টেশন নির্মাণের চেষ্টা করছিলাম। পরবর্তীতে আমরা একে জনবহুল করে ফেলার নির্দেশ দেই এআই’কে, যার জবাবে প্রতিটি ডেস্কে একটি করে ডোনাট যোগ করেছিল এটি।”
“আরেকবার আমরা একটি অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণ করছিলাম, যেখানে এআই ক্রমাগতই কফির টেবিলের নিচে মোজা রেখে দিচ্ছিল। আমরা ভেবেছিলাম, এটা কোনও বাগ কি না, তবে, পরবর্তীতে দেখা যায় যেহেতু আমরা একে একটি ব্যাচেলর অ্যাপার্টমেন্ট হিসেবে লেবেল করেছি, তাই আমার ধারণা, এআইয়ের পর্যবেক্ষণ কিছুটা যুক্তিসঙ্গত,” বলেন তিনি।
এদিকে, কম্পিউটার গেইমের বিভিন্ন উপাদান তৈরির জন্য এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করতে দেখা গেছে ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক সফটওয়্যার কোম্পানি ‘ইনওয়ার্লড’কেও।
কোম্পানিটি এমন এক ইঞ্জিন বানিয়েছে, যা নির্মাতাদেরকে গেইমের জগতে রিয়ালিজম বা বাস্তববাদ ও গেইমের বিভিন্ন চরিত্রের আবেগে বাড়তি গভীরতা যোগ করার সুযোগ দেয়। এ ছাড়া, এআইয়ের মাধ্যমে গেইমের গল্প তৈরির জন্য ‘ন্যারেটিভ গ্রাফ’ নামের একটি ব্যবস্থা নিয়েও কাজ করছে কোম্পানিটি। এজন্য তারা এক্সবক্স-এর সঙ্গেও জোট বেঁধেছে।
কোম্পানিটির প্রধান নির্বাহী কাইলান গিবস বিবিসি’কে বলেছেন, তিনি বিশ্বাস করেন, গেইম নির্মাতাদের ‘আগের চেয়েও বড় স্বপ্ন দেখার’ সুযোগ দেবে এআই।
এদিকে, গেইমিং কোম্পানি ‘ল্যাটিচ্যুড ডটআইও’র সিইও নিক ওয়ালটনের মতে, গেইমিং অভিজ্ঞতাকে ‘পার্সোনালাইজ’ করার ক্ষমতা আছে এআইয়ের।
“আমরা এআইয়ের একেবারে শুরুর পর্যায়ে আছি। এটি ক্রমাগত বিকশিত হতে থাকলে আমরা এমন নানা অভিযোজিত জগৎ দেখতে পাব, যার চরিত্রগুলো প্রাণবন্ত দেখাবে। আর এমন গল্পও দেখা যাবে, যেখানে আপনি গেইমের নায়ক হিসেবে এমন বিশেষ কিছু করছেন, যা সে জগতে বড় প্রভাব ফেলতে পারে,” বিবিসি’কে বলেন তিনি।
“আপনি এমন গেইম খেলার সুযোগ পেতে পারেন, যেখানে আপনি নিজেকে এমন এক শহরে খুঁজে পাবেন, যেখানে অন্য কেউই তোয়াক্কা করে না। আর সেখানে এর আগে কোনও গেইমারও সময় কাটায়নি। এ ছাড়া, আপনি এতে এতটাই সম্পৃক্ত হয়ে পড়বেন যে, গেইমের মধ্যে থাকা সকল চরিত্রের সঙ্গে আপনার সম্পর্কও তৈরি হতে পারে।”
তার কোম্পানি ‘এআই ডাঞ্জন’ নামের এক গেইম বানিয়েছে, যা গেইমারদেরকে বিভিন্ন ধরনের জগৎ বাছাই করে এর মধ্যে নিজস্ব গল্প তৈরির সুযোগ দেয়।
“এটা অনেকটা টেক্সটভিত্তিক পুরোনো অ্যাডভেঞ্চার গেইমের মতো, যেখানে আপনি কোন নির্দেশনা টাইপ করছেন, তার ভিত্তিতে পরবর্তী প্রেক্ষাপট নির্ধারণ করা হয়ে থাকে।”
“তবে এর মূল পার্থক্য হল, এতে গেইমের নির্মাতা আগেই বিভিন্ন প্রেক্ষাপট তৈরি করে রাখার বদলে এ সিদ্ধান্তটি নেয় এআই। ফলে, গেইমের মধ্যে যে কোনো কিছুই ঘটা সম্ভব।”
তিনি আরও বলেন, ডাঞ্জন গেইমের সাফল্য দেখে তিনি হতভম্ব হয়েছিলেন, যেটির প্রথম সংস্করণ উন্মোচিত হয়েছিল ২০১৯ সালে।
“গেইমটি শুরু হয়েছিল সহায়ক প্রকল্প হিসেবে। আমি শুধু এটি ইন্টারনেটে ছেড়ে দিয়েছি। আর মাত্র এক সপ্তাহেই গেইমটি এক লাখ মানুষ খেলেছে,” বলেন তিনি।“
গেইমিং জায়ান্ট ‘ইলেকট্রনিক আর্টস (ইএ)’র প্রধান নির্বাহী অ্যান্ড্রু উইলসন সম্প্রতি এক সম্মেলনে কোম্পানির প্রতিনিধিদের বলেছেন, বিভিন্ন এআই টুলের উত্থান ৬০ শতাংশ গেইম প্রকাশকের উৎপাদন প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলতে পারে। এদিকে, সম্প্রতি নিজেদের পাঁচ শতাংশ (৬৭০ জন) কর্মী ছাঁটাই করেছে ইএ।
তবে এআই যে মানুষের জায়গা কেড়ে নেবে, এমন বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন ম্যাক্সিমভ। বরং তার বিশ্বাস, এতে করে মানুষের ‘সৃজনশীল মর্যাদা’ বেড়ে যাবে। বিভিন্ন শীর্ষ গেইম প্রকাশক কোম্পানিতে এ বিষয়টি দীর্ঘ দিন আগেই হারিয়ে গেছে, যেখানে নির্মাতাদের খুবই পুনরাবৃত্তিমূলক কাজ ধরিয়ে দেওয়া হয়।
“অনেক নির্মাতাই হ্যারি পটার ও লর্ড অফ দ্য রিংস থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নতুন কিছু বানাতে চেয়েছেন। তারা এখন সারা বছর ধরেই প্রতিদিনের কাজের সময় কাটাচ্ছেন কোনও দুর্গের বাইরে পাথর বসিয়ে,” বলেন তিনি।
“এ ধরনের চাকরির সত্যিকারের উদ্দেশ্য ও মূল্য ফিরে পাওয়ার ক্ষেত্রে এখনও অনেক কথা বলা বাকি। এতে করে শিল্পীরাও দাবি করার সুযোগ পাবেন ‘আমি এখন নিজের গেইম নিজেই বানাই’।”