ভোজবাজির মত তৈরি হয়েছে এক আন্ডারগ্রাউন্ড নেটওয়ার্ক, যারা মার্কিন এই নিষেধাজ্ঞাকে পাশ কাটিয়ে যাবতীয় নিষিদ্ধ জিনিসপত্র সরবরাহ করতে সক্ষম।
Published : 03 Mar 2025, 06:00 PM
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞা পাশ কাটিয়ে এনভিডিয়ার সর্বশেষ চিপের চালান চীন পর্যন্ত পৌঁছাচ্ছে। আর এতে প্রমাণ হচ্ছে, এই উদ্যোগ কার্যকর করায় ট্রাম্প প্রশাসনকে যথেষ্ট ঝামেলা পোহাতে হবে।
এনভিডিয়ার ব্ল্যাকওয়েল চিপওয়ালা কম্পিউটার বিক্রি হচ্ছে চীনের হাতের নাগালেই। এমনকি কোনো কোনো বিক্রেতা দেড় মাসের মধ্যে সেগুলো চিনে সরবরাহ করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল প্রতিবেদনে লিখেছে, সর্বশেষ এই ধরনের চালানেই প্রমাণ মিলছে যে, চীনকে সর্বশেষ প্রযুক্তির বাইরে রাখার এই মার্কিন প্রচেষ্টা আসলে পুরোপুরি ব্যর্থ হচ্ছে।
২০২২ সাল থেকেই ওয়াশিংটন সর্বোচ্চ চেষ্টা করে আসছে যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রযুক্তি যেন চীনা হাতে না পড়ে। এখানে মূল লক্ষ্য হচ্ছে চীনের এআই উত্থানকে ঠেকানো।
কিন্তু এরপর পরপরই ভোজবাজির মত তৈরি হয়েছে এক আন্ডারগ্রাউন্ড নেটওয়ার্ক, যারা মার্কিন এই নিষেধাজ্ঞাকে পাশ কাটিয়ে যাবতীয় নিষিদ্ধ জিনিসপত্র সরবরাহ করতে সক্ষম।
এই গোপন মার্কেটই এখন ট্রাম্প প্রশাসনের সর্বশেষ মাথাব্যথা।
চীনের সেনজেনের এক ভেন্ডরের নাম জেমস লুও। তিনি বলছেন, প্রায় এক ডজন ব্ল্যাকওয়েল সার্ভার কিনতে পেরেছেন সাংহাইতে বসে এই জানুয়ারি মাসেই। এ চালানের জন্য তিনি ৩০ লাখ ডলার জমা করেছিলেন তার বিক্রেতার অ্যাকাউন্টে। সে লেনদেনের কাগজপত্র দেখার দাবি করেছে জার্নাল।
লুও বলেছেন, তিনি মার্চ মাসের মাঝামাঝি নাগাদ এগুলো চীনের ক্রেতাদের কাছে সরবরাহ করতে পারবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
লুওর মতো এই ব্যবসায়ীরা চীনের বাইরের ব্যবসায়িক ঠিকানা ব্যবহার করছেন। এর ফলে তারা এনভিডিয়ার এ সার্ভারগুলো বাইরে থেকে কিনতে পারেন। এর মধ্যে রয়েছে মালেশিয়া, ভিয়েতনাম এবং তাইওয়ানভিত্তিক বিভিন্ন ঠিকানা।
লুও বলছেন, এই সমস্ত বিক্রেতা কোম্পানিগুলোর ডেটা সেন্টারসহ বিভিন্ন রকমের ব্যবসা আছে, যে কারণে তারা এই মেশিনগুলো কিনতে পারেন। এরপর কেনা পণ্যের একটা অংশ তারা চীনভিত্তিক ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করে দেন।
এনভিডিয়া অবশ্য বলছে ভিন্ন কথা। এ জাতীয় যে কোনো লেনদেনের পূর্ণাঙ্গ তদন্তের প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পাশাপাশি তারা এ-ও বলেছে, এই জাতীয় উচ্চমানের সার্ভার ক্রেতারা বিক্রয়োত্তোর সেবাও নেন। ফলে, ব্ল্যাকওয়েল সিস্টেমের মত মেশিন আন্ডারগ্রাউন্ড বিক্রেতার হাতে যাওয়ার কথা নয়।
ব্ল্যাকওয়েলের বিক্রি এনভিডিয়া শুরু করে ডিসেম্বর মাসে। জানুয়ারিতে শেষ হওয়ার প্রান্তিকে এনভিডিয়া প্রায় এক কোটি দশ লাখ চিপ বিক্রি করেছে। কোম্পানিটির শতকরা ৩০ ভাগ আয়ই এসেছে এ চিপ থেকে।
আটটি এআই প্রসেসরওয়ালা ব্ল্যাকওয়েল সার্ভারের দাম চীনে প্রায় ছয় লাখ ডলার। এর মানে হচ্ছে, আন্তর্জাতিক বাজারে এর যা দাম, তার উপরে চীনে বিক্রির সময় আলাদা প্রিমিয়াম যোগ করা হয়েছে।
ব্ল্যাকওয়েল চিপ হচ্ছে এখন এনভিডিয়ার ‘টপ অফ দ্য লাইন’ পণ্য। কিন্তু, এর আগের পণ্য হপার ফ্যামিলির ওপরও চীনাদের নজর রয়েছে। এবং ওই চিপও মার্কিন নিয়ন্ত্রণের আওতায় রয়েছে। সরবরাহকরা বলছেন এইচ২০০ এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে চীনে।
আটটি এইচ২০০ চিপওয়ালা সার্ভারের দাম চীনে গড়ে আড়াই লাখ ডলার। সেটি বৈশ্বিক বাজারে প্রচলিত দামের চেয়ে সামান্য বেশি।
একজন বিক্রেতা তার সামাজিক মাধ্যমে অ্যাকাউন্টে একেবারে নতুন সিল করা বক্সে এইচ২০০ সার্ভারের ছবি পোস্ট করেছেন। আরেক বিক্রেতা দাবি করেছেন চীনে তার স্টকে এরকম শত শত সার্ভার পড়ে আছে বিক্রির অপেক্ষায়। তবে, তাদের সেই স্টক যাচাই করতে পারেনি জার্নাল।
ডিসেম্বর মাসের পরে চীনের সেনঝেন এবং উহানে অন্তত দুটি বিশ্ববিদ্যালয় ছয়টি এআই সার্ভারের ডেলিভারি গ্রহণ করেছে, যাতে হপার চিপ ছিল। এটাই পুরো চিত্র, এমন মনে করার কোনো কারণ নেই। কারণ, এ চালানগুলো বিস্তৃত জায়গা থেকে আসে, যার পূর্ণাঙ্গ হদিস মেলে না।
এদিকে সিঙ্গাপুর ও তাইওয়ানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার হওয়ার ফলে এই ধরনের চিপের সরবরাহ, বিশেষ করে বড় সংখ্যায়, আরও কঠিন হয়ে উঠেছে।
সেনঝেনের ভেন্ডর লুও বলছেন, কোনো কোনো বৈধ বিক্রেতা তাদের চালান চীনে পাঠিয়ে দেওয়ার পর ওই সার্ভারগুলোর সিরিয়াল নম্বর পুরনো মেশিনের গায়ে বসিয়ে সেগুলো ইন্সপেক্টরদের দেখিয়েছেন।
আগে ধারণা ছিল, চীনা নির্মাতারা এনভিডিআর সর্বশেষ চিপের খানিকটা চালান পেলেও তাদের পক্ষে বিশ্বে নেতৃত্ব দেওয়ার উপযোগী এআই সিস্টেম তৈরি করার মতো যথেষ্ট সংখ্যক চিপ থাকবে না। কিন্তু চীন দেখিয়ে দিয়েছে, বাস্তবতা ভিন্ন। অল্প রিসোর্স নিয়েও ডিপসিকের মত তাক লাগানো সিস্টেম তৈরি করা সম্ভব।
এরই মধ্যে চিনা ক্রেতারা এমভিডিয়ার এইচ২০ চিপের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভর করছেন। এইচ২০ চিপ হচ্ছে নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকা এমভিডিয়ার সর্বোচ্চ ক্ষমতার চিপ।