“আবহাওয়ার বাইরেও বায়ুর গুণমান, সমুদ্রের গতিবিদ্যা ও সমুদ্রের বরফের পূর্বাভাস পেতে প্রয়োগ করা যেতে পারে মডেলটিকে।”
Published : 22 Mar 2025, 11:33 AM
এআইনির্ভর নতুন একটি আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল তৈরি করেছেন কেমব্রিজের বিজ্ঞানীরা। তাদের দাবি, আবহাওয়ার পূর্বাভাসে ‘বিপ্লব’ ঘটাবে এ মডেল, যা বর্তমানে প্রচলিত সিস্টেমের চেয়ে দশগুণ উন্নত।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেয় এমন বিভিন্ন সংস্থার সুপার কম্পিউটার ও বিশেষজ্ঞ রয়েছে। ‘আর্ডভার্ক ওয়েদার’ নামের নতুন এ মডেলটি তাদের বদলে একটি একক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই মডেল ব্যবহার করবে, যা একটি স্ট্যান্ডার্ড বা সাধারণ ডেস্কটপ কম্পিউটারে চলবে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেনডেন্ট।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, প্রচলিত বিভিন্ন মডেল যেখানে আবহাওয়ার পূর্বাভাস তৈরিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় নেয় সেখানে কেবল কয়েক সেকেন্ড সময় নেয় নতুন এই এআই পূর্বাভাস মডেলের ‘মাল্টি-স্টেজ’ প্রক্রিয়াটি।
‘ইউনিভার্সিটি অফ কেমব্রিজ’-এর প্রকৌশল বিভাগের মেশিন লার্নিংয়ের অধ্যাপক রিচার্ড টার্নার বলেছেন, “বর্তমানে প্রচলিত বিভিন্ন আবহাওয়ার পূর্বাভাস পদ্ধতি ফের খতিয়ে দেখে আর্ডভার্ক, যা আবহাওয়ার পূর্বাভাসকে আগের চেয়ে দ্রুত, সাশ্রয়ী ও আরও নির্ভুল করার সম্ভাবনা দেখাচ্ছে।”
আর্ডভার্ক মডেলের পরীক্ষায় দেখা গেছে, কেবল ১০ শতাংশ ইনপুট ডেটা ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় জিএফএস বা ‘গ্লোবাল ফোরকাস্ট সিস্টেম’-এর পূর্বাভাস ব্যবস্থার চেয়েও কার্যকর ফলাফল দিতে পারে এটি। ফলে গবেষকরা বলছেন, আবহাওয়ার “পূর্বাভাসে বিপ্লব” আনবে মডেলটি।
গবেষকরা বলেছেন, এর সহজ নকশা ও সাধারণ কম্পিউটারে চালানোর সক্ষমতার মানে হচ্ছে বিভিন্ন শিল্পখাতের জন্য পূর্বাভাস তৈরিতেও ব্যবহার করা যাবে এটি।
উপকূলীয় ইউরোপীয় উইন্ডমিলের জন্য বাতাসের গতির পূর্বাভাস থেকে শুরু করে উন্নয়নশীল বিভিন্ন দেশের কৃষকদের জন্য বৃষ্টিপাত ও তাপমাত্রার পূর্বাভাস দেওয়া পর্যন্ত বিশাল পরিসরে এ মডেলটি ব্যবহারের সম্ভাবনা রয়েছে।
‘অ্যালান টিউরিং ইনস্টিটিউট’-এর ‘সায়েন্স অ্যান্ড ইনোভেশন ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি’র পরিচালক ড. স্কট হসকিং বলেছেন, “আর্ডভার্কের সাফল্য কেবল গতির বিষয়ে নয়, বরং মডেলটি ব্যবহারের বিষয়েও।”
“আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়ার বিষয়টিকে আমরা সুপার কম্পিউটার থেকে ডেস্কটপ কম্পিউটারে বদল করে পূর্বাভাসকে সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিতে পারি এ মডেলটির মাধ্যমে। ফলে উন্নয়নশীল দেশ ও বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলেও কাজে লাগানো যাবে এ শক্তিশালী প্রযুক্তিটি।”
‘ইউনিভার্সিটি অফ কেমব্রিজ’-এর অধ্যাপক ও এ গবেষণার প্রধান গবেষক আনা অ্যালেন বলেছেন, “আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়ার বিষয়ে আর্ডভার্ক-এর যাত্রা কেবল শুরু। মডেলটির এন্ড-টু-এন্ড লার্নিং পদ্ধতিটি অন্যান্য আবহাওয়ার পূর্বাভাস সমস্যা, যেমন হারিকেন, দাবানল ও টর্নেডোতে সহজেই প্রয়োগ করা যেতে পারে।
“আবহাওয়ার বাইরেও বায়ুর গুণমান, সমুদ্রের গতিবিদ্যা ও সমুদ্রের বরফের পূর্বাভাস পেতে প্রয়োগ করা যেতে পারে মডেলটিকে।”
‘এন্ড টু এন্ড ডেটা ড্রাইভেন ওয়েদার প্রেডিকশন’ শিরোনামে গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘নেচার’-এ।