আবর্তিত বস্তুটিতে প্রতি ৪৮ ঘণ্টা পরপর আঘাত হানছে ধ্বংসাবশেষটি, যার ফলে ঘটিত এক্স-রে বিস্ফোরণের দৃশ্য ধারণ করেছে নাসা’র চন্দ্র টেলিস্কোপ।
Published : 12 Oct 2024, 04:49 PM
জ্যোতির্বিদরা এমন এক বিশালাকায় ব্ল্যাক হোলের খোঁজ পেয়েছেন, যা একটি তারাকে ধ্বংস করে এখন ওই তারার ধ্বংসাবশেষ ব্যবহার করে অন্যান্য বস্তুর ওপর আঘাত হানছে।
এই রোমাঞ্চকর দৃশ্য দেখা গেছে, নাসার চন্দ্র ও হাবলের মতো শক্তিশালী স্পেস টেলিস্কোপে, যার সহায়তায় বিজ্ঞানীরা মহাকাশের দুটি এমন রহস্যের মধ্যে যোগসূত্র পেয়েছেন, যা একসময় অস্পষ্ট ছিল। গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল নেচার-এ।
২০১৯ সালে জ্যোতির্বিদরা একটি তারা পর্যবেক্ষণ করেছিলেন, যা একটি ব্ল্যাক হোলের খুব কাছাকাছি চলে যাচ্ছে।
ব্ল্যাক হোলের মাধ্যাকর্ষণ বল ওই তারাকে চূর্ণবিচূর্ণ করে ফেলার পাশাপাশি এর ধ্বংসাবশেষ ব্ল্যাক হোলটির চারপাশে একটি ঘূর্ণায়মান ডিস্ক সৃষ্টি করেছে। এ ধ্বংসাবশেষকে তারার এক ধরনের ‘সমাধি’ও বলা যায়, যা ওই ব্ল্যাকহোলটির চারপাশে ঘুরছে।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ ডিস্কের বিস্তার বাড়তে থাকে ও একসময় এটি অন্য এমন কোনো তারা বা ছোট ব্ল্যাকহোলের মুখোমুখি হয়, যা হয়ত ওই বিশালাকায় ব্ল্যাক হোলটি থেকে নিরাপদ দূরত্বে ছিল।
আবর্তিত বস্তুটিতে প্রতি ৪৮ ঘণ্টা পরপর আঘাত হানছে ধ্বংসাবশেষটি, যার ফলে ঘটিত এক্স-রে বিস্ফোরণের দৃশ্য ধারণ করেছে নাসা’র চন্দ্র টেলিস্কোপ।
এ গবেষণার নেতৃত্ব দেওয়া বেলফাস্টের ‘কুইন’স ইউনিভার্সিটি’র গবেষক ম্যাট নিকোল বিষয়টিকে তুলনা করেছেন কোনো ডুবুরির সুইমিং পুলে ঝাঁপ দেওয়ার সঙ্গে। প্রতিবার ডুবুরি পানিতে ঝাপ দেওয়ার পরপরই পানির ছিটা আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে।
আবর্তিত বস্তুটি ডিস্কে আঘাত হানার পরপরই গ্যাস এবং এক্স-রে’র বিশাল বিস্ফোরণ ঘটছে। আর বস্তুটি ব্ল্যাক হোল পরিক্রমণ করার সময় এই প্রক্রিয়া বার বার ঘটতে থাকে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
এমন ঘটনা, যেখানে ব্ল্যাক হোল কোনো তারাকে একেবারে গ্রাস করে ফেলে, তা ‘টাইডাল ডিসরাপশন ইভেন্ট’ নামে পরিচিত। বিজ্ঞানীরা এরইমধ্যে এমন বেশ কয়েকটি নজির দেখতে পেলেও সেগুলোতে সাধারণত কেবল একবারই উজ্জ্বল আলোর বিস্ফোরণ দেখা যায়।
এর আগে ‘কোয়াসি-পিরিয়ডিক ইরাপশন’ নামে পরিচিত আরেক ধরনের ঘটনায় ছায়াপথের একেবারে কেন্দ্র থেকে এক্স-রে’র উজ্জ্বল ঝলকানি বেরোতে দেখা গেছে।
এমন ঝলকানি ক্রমাগত ঘটতে দেখা গেলেও এর কারণ এতদিন পর্যন্ত রহস্যই ছিল।
গবেষণাটির সহ-লেখক ও এমআইটি’র গবেষক ধিরাজ পাশামের মতে, এ দুটি ঘটনার মধ্যে কোনো যোগসূত্র আছে কি না, তা নিয়ে নিশ্চিত কোনো তথ্য মেলেনি এতদিন। তবে এ গবেষণার মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা অবশেষে প্রমাণ পেয়েছেন, এরা সত্যিই একে অপরের সঙ্গে যুক্ত। এর মানে, তারা একইসঙ্গে মহাজাগতিক দুটি রহস্যের সমাধান খুঁজে পেয়েছেন।
ঘটনাটিকে এখন ডাকা হচ্ছে ‘এটি২০১৯কিজ’ নামে, যা ২০১৯ সালে প্রথম দেখা গিয়েছিল ক্যালিফোর্নিয়ায় অবস্থিত এক টেলিস্কোপে।
২০২৩ সালে জ্যোতির্বিদরা টাইডাল ডিসরাপশন ইভেন্টের পরবর্তী সময়ে অবশিষ্ট ধ্বংসাবশেষ নিয়ে গবেষণা করতে চন্দ্র ও হাবল টেলিস্কোপ ব্যবহার করেছেন। পরবর্তীতে, নাইসার ও সুইফটের মতো অন্যান্য টেলিস্কোপে দেখা গেছে, আনুমানিক প্রতি ৪৮ ঘণ্টা পরপর ওই ধ্বংসাবশেষের ডিস্ক থেকে এক্স-রে বিস্ফোরণ ঘটছে।
কোনো তারা ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর এ ধরনের বিস্ফোরণ কেন ঘটে, এ গবেষণা বিজ্ঞানীদেরকে সে বিষয়টি বুঝতে সাহায্য করার পাশাপাশি এমন ঘটনা খোঁজার নতুন উপায় দেখাচ্ছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে নোরিজ।