অ্যাপটিতে নিজের নাম সাবধানে বেছে নিন, কারণ পরবর্তীতে সেটি পরিবর্তন করা যাবে না। আর দ্রুত অ্যাকাউন্ট ডিলিট করার প্রয়োজন পড়লে শুধু অ্যাপটি আনইনস্টল করলেই চলবে।
Published : 18 Jul 2024, 04:19 PM
মোবাইল ফোনের এসএমএস কাজ করে মোবাইল টাওয়ার ব্যবহার করে। আর হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবারের মতো অ্যাপ কাজ করে ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবহার করে। কিন্ত এই দুটি পথ যদি বন্ধ হয়ে যায়?
সম্প্রতি এমন কিছু অ্যাপ এসেছে যেগুলো প্রথাগত মোবাইল সংযোগ বা ইন্টারনেট ব্যবহার করে না। এর বদলে এরা বিন্দু বিন্দু জলে মহাসাগর গড়ার মতো ছোট ছোট ব্লুটুথ সংযোগ বা ওয়াইফাই ব্যবহার করে একটি বড় জনপদের জন্য বিকেন্দ্রিভূত প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে।
ওয়্যারলেস মেশ নেটওয়ার্ক নামে পরিচিত এ ব্যবস্থাটি আসলে একটি জালের মতো নেটওয়ার্ক যা প্রতিটি নেটওয়ার্ক ব্যবহারকারীর হাতের ডিভাইসে (মূলত স্মার্টফোন) থাকা ওয়্যারলেস অ্যাক্সেস পয়েন্ট ব্যবহার করে তৈরি হয়। প্রতিটি মোবাইল ফোন এখানে বার্তা ফরোয়ার্ড করে দেয়। ফলে কেন্দ্রীয় কোনো সার্ভার এতে লাগে না।
এই ওয়্যারলেস মেশ নেটওয়ার্ক ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত থাকতেও পারে, আবার নাও পারে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে টেক টার্গেট। এতে যোগাযোগ অরিতিক্ত প্রভাব পড়ে না।
এই ব্যবস্থাটি কাজে লাগিয়ে বেশ কিছু অ্যাপ তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে পরিচিত একটি অ্যাপ হচ্ছে ব্রায়ার অ্যাপ। মেসেজিং এই অ্যাপটি তৈরির সময় নির্মাতারা মাথায় রেখেছেন ‘অধিকার কর্মী’, সাংবাদিক ও জরুরী পরিস্থিতিতে নানা শ্রেণির মানুষের নিরাপদ যোগাযোগের বিষয়টি।
ইন্টারনেট বন্ধ থাকলে অ্যাপটি ব্লুটুথ বা ওয়াইফাইয়ের মাধ্যমে কাজ করতে পারে ও তথ্য আদান প্রদান করতে পারে। ইন্টারনেট চালু হলে ব্রায়ার টর নেটওয়ার্কের মাধ্যমে কাজ করে, যা ব্যবহারকারীদের ওপর নজরদারির সম্ভাবনাও কমায়।
ব্রায়ার অ্যাপটি গুগলের প্লে স্টোর থেকেই ডাউনলোড করা যায়।
ডাউনলোডের পর অ্যাপটি প্রথমবার চালুই করলেই একটি অ্যাকাউন্ট খুলতে বলবে। অ্যাকাউন্টটি পাসওয়ার্ডের সাহায্যে ডিভাইসে নিরাপদে সংরক্ষণ করা থাকবে।
এখানে নিজের নাম সাবধানে বেছে নিন, কারণ পরবর্তীতে সেটি পরিবর্তন করা যাবে না বলে নিজেদের ওয়েবসাইটে লিখেছে ব্রায়ার অ্যাপের নির্মাতারা। আর দ্রুত অ্যাকাউন্ট ডিলিট করার প্রয়োজন পড়লে শুধু অ্যাপটি আনইনস্টল করলেই চলবে।
অ্যাকাউন্ট, নাম, পাসওয়ার্ডের কাজ শেষ হলে ব্যাটারি অপটিমাইজেশনের অনুমতি চাইবে ব্রায়ার। এটি দরকারি, কারণ, অ্যাপটি ব্যাকগ্রাউন্ডে চলার সময় বার্তা গ্রহণ করার কোনো সার্ভার নেই। ব্রায়ারের নিজে থেকেই বার্তা গ্রহণ করতে হয়।
অ্যাপটি ইনস্টল করা হলে কন্টাক্ট যোগ করতে হবে। অ্যাকাউন্ট তৈরি করার পরে কন্টাক্ট তালিকা খালি দেখতে পাবেন। কন্টাক্ট যোগ করতে প্লাস বোতামে চাপুন (+)। যাকে যুক্ত করতে চান তিনি কাছাকাছি কিনা তার ওপর নির্ভর করে দুটি বিকল্প রয়েছে।
যাকে যোগ করতে চান তিনি কাছাকাছি থাকলে ‘অ্যাড কন্টাক্ট নিয়ারবাই’ অপশনে চাপুন। দূরে থাকলে, ‘অ্যাড কন্টাক্ট অ্যাট আ ডিস্টেন্স’ অপশনে চাপুন।
‘অ্যাড কন্টাক্ট নিয়ারবাই’ অপশন বেছে নিলে ব্রায়ার অ্যাপকে ক্যামেরা ব্যবহারের অনুমতি দিতে হবে যেন এটি কিউআরকোড স্ক্যান করতে পারে। ব্রায়ার ব্যবহারকারীর অবস্থানের অনুমতিও চাইবে। ব্রায়ার ব্যবহারকারীর লোকেশন সংরক্ষণ, শেয়ার বা আপলোড করে না। তবে, কাছাকাছি ব্লুটুথ ডিভাইসগুলো আবিষ্কার করার জন্য এ অনুমতি প্রয়োজন৷
সবশেষে, ব্রায়ার ব্লুটুথ চালু করার অনুমতি চাইবে ও অল্প সময়ের জন্য ডিভাইসকে কাছাকাছি ব্লুটুথ ডিভাইসের দৃশ্যমান করবে।
এই সমস্ত অনুমতি দেওয়ার পরে, ব্রায়ার একটি কিউআর কোড ও ক্যামেরা ভিউফাইন্ডার দেখাবে। যাকে যোগ করতে চান, একেক অপরের কিউআর কোড স্ক্যান করুন। অন্তত ৩০ সেকেন্ডের পরে ডিভাইসগুলো একে অপরের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়া উচিত এবং ওই ব্যক্তিকে পরিচিতি তালিকায় যুক্ত করা উচিত। এটি কাজ না হলে প্রক্রিয়াটি আবার চেষ্টা করার পরামর্শ দিয়েছে নির্মাতারা।
এ ছাড়া, কেউ ‘অ্যাড কন্টাক্ট অ্যাট এ ডিসটেন্স’ অপশন চাপলে ব্রায়ার একটি লিংক পাঠাবে যেটি যাকে যোগ করতে চান তার কাছে পাঠাতে হবে। এ ক্ষেত্রে, হোয়াটসঅ্যাপ বা টেলিগ্রামের মতো মেসেজিং পরিষেবা ব্যবহার করে লিংকটি পাঠাতে পারেন। অপর পাশের ব্যক্তির ও তার লিংকটি একইভাবে পাঠাতে হবে। উভয়ই ব্যবহারকারীর ব্রায়ার অ্যাপে সাইন ইন করতে হবে ও লিংকে প্রবেশ করতে হবে। তবে, এ পদ্ধতিতে যুক্ত হতে ইন্টারনেট প্রয়োজন হবে। অন্তত এক মিনিটের জন্য ইন্টারনেট কানেকশন পেলেই কন্টাক্ট যুক্ত হয়ে যাবে।
কন্টাক্ট যোগ করার পর, বার্তা পাঠানোর জন্য কন্টাক্ট তালিকায় তাদের নামের ওপরে চাপুন। কন্টাক্টের নামের পাশের বৃত্তটি সবুজ দেখাবে যদি তার ও ব্যবহারকারীর ডিভাইস ব্লুটুথ, ওয়াইফাই অথবা ইন্টারনেটের মাধ্যমে যুক্ত থাকে।