বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচে সাবিনা-আঞ্জু দ্বৈরথ

এবারের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে সর্বোচ্চ গোলদাতার লড়াই দারুণ জমেছে সাবিনা খাতুন ও আঞ্জু তামাংয়ের।

কাঠমান্ডু থেকে মোহাম্মদ জুবায়েরবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Sept 2022, 06:26 PM
Updated : 12 Sept 2022, 06:26 PM

বাংলাদেশ-ভারত মহারণে শুধুই কি দলগত দ্বৈরথ? প্রশ্নটা তোলার কারণ আছে বৈকি। আর সেটা সাবিনা খাতুন ও আঞ্জু তামাংয়ের কারণে! চলতি সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় দুজনের মধ্যে চলছে ধুন্ধুমার লড়াই। ৫ গোল নিয়ে শীর্ষে সাবিনা। ৪ গোল নিয়ে তার ঘাড়ে শ্বাস ফেলছেন আঞ্জু। আসছে লড়াইয়ের ভেতরে তাই বয়ে চলবে দুজনের মধ্যকার ব্যক্তিগত লড়াইয়ের স্রোতও।

দুজনে প্রায় সমবয়সী। আঞ্জুর চেয়ে দুই বছরের বড় সাবিনা।

আরও কিছু হিসেবেও এগিয়ে বাংলাদেশের তারকা স্ট্রাইকার। দক্ষিণ এশিয়ার মেয়েদের ফুটবলের সর্বোচ্চ আসরে সাবিনার গোল ১৯টি। ভারতের জালে গোলও আছে ২টি; একটি ২০১৪ সালের সাফ গেমসে, অন্যটি ২০১৬ সালের এসএ গেমসে। সাফে আঞ্জুর ৫ গোলের চারটিই এবার নেপালে এসে পাওয়া। বাংলাদেশের জালের নাগাল কখনও পাননি তিনি।

দুজনের জীবনের গল্পেও মিল অনেক। সংগ্রামে, টানাপোড়েনের।

পাঁচ বোনের সংসারে চতুর্থ সাবিনার স্বপ্ন ছিল চিকিৎসক হওয়ার, কিন্তু বাবা সৈয়দ গাজীর সামর্থ্য ছিল না পড়ালেখার খরচ চালানোর। সাতক্ষীরার পলাশপুর গ্রামের মাঠে-ঘাটে ডানপিটে সাবিনা ছোটবেলা থেকে ছেলেদের সঙ্গে ফুটবল খেলতেন পাল্লা দিয়ে। এভাবেই অনেক বাধা-বিপত্তির স্রোত পেরিয়ে তিনি এখন বাংলাদেশ দলের আক্রমণভাগের প্রাণভোমরা। অধিনায়কও।

দার্জিলিংয়ের কোলঘেঁষা ছোট্ট গ্রাম রাঙ্গালিবাজনায় জন্ম আঞ্জুর। আদিবাসী পরিবারে খেটে খাওয়া জীবন তার। ২০২০ সালে করোনাভাইরাস মহামারীর সময় বাড়িতে ফিরে ধান কেটেছেন ফিটনেস ধরে রাখতে! স্কুল জীবনে তিনিও ছেলেদের সঙ্গে টেক্কা দিয়ে খেলতেন ফুটবল। অনেক ঘাম ঝরিয়ে আঞ্জু এখন ভারত দলের মাঝমাঠের অনেক বড় নির্ভরতার নাম।

কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামের সবুজেও পায়ের তুলিতে গোলের ছবি দুজনে কী দারুণভাবেই না ফুটিয়ে তুলছেন। পাকিস্তান ম্যাচে ৩-০ ব্যবধানের জয়ে জোড়া গোলে সাবিনা ছিলেন ম্যাচের নির্ণায়ক। মালদ্বীপ ম্যাচেও জাদু দেখিয়েছেন হ্যাটট্রিক উপহার দিয়ে। পাকিস্তানের বিপক্ষে গোল পাননি আঞ্জু, সেটা তিনি যেন পুষিয়ে নিলেন মালদ্বীপকে ৯-০ ব্যবধানে উড়িয়ে দেওয়া ম্যাচে চারবার গোলের আনন্দে ডানা মেলে।

গ্রুপে সেরা হওয়ার লড়াইয়ে মঙ্গলবার যখন বাংলাদেশ-ভারত মুখোমুখি হবে, মুখোমুখি হবেন সাবিনা-আঞ্জুও।

আঞ্জুর তুলনায় একটু চাপ হয়ত বেশি থাকবে সাবিনার উপর। অধিনায়কত্বের বাড়তি ভার যে তার কাঁধে, আঞ্জুর তা নেই। গত দুই ম্যাচে অবশ্য অধিনায়ক, ফরোয়ার্ড-সব পরিচয়েই দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন সাবিনা। দুই ম্যাচেই জিতেছেন সেরা খেলোয়াড়ের স্বীকৃতি। এই স্বীকৃতি আঞ্জু পেয়েছেন একবার, মালদ্বীপ ম্যাচের চার গোলের সুবাদে।

‘আইডল’ মানার ক্ষেত্রে দুই জন অবশ্য দুই পথের পথিক। সাবিনার আদর্শ ফরোয়ার্ড মার্তা ভিয়েইরা দা সিলভা, সংক্ষেপে যাকে মার্তা বলেই চেনে ফুটবল বিশ্ব। ব্রাজিলিয়ান গ্রেটের মতোই ফুটবলের আঙিনায় ছাপ রেখে যাওয়ার স্বপ্ন সাবিনার। আঞ্জুর প্রিয় খেলোয়াড়দের মধ্যে একজন রবের্ত লেভানদোভস্কি। গত মঙ্গলবার বার্সেলোনার হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে পোলিশ তারকাকে হ্যাটট্রিক উৎসব করতে দেখেছিলেন। সেখান থেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে মালদ্বীপের জালে চার গোল করেছিলেন বলে জানান এই মিডফিল্ডার।

“যে কোনো ম্যাচের আগে আমি আমার প্রিয় খেলোয়াড়দের ম্যাচের ভিডিও দেখি। এটা আমাকে বলতেই হবে, মালদ্বীপ ম্যাচের আগে আমি লেভানদোভস্কির হ্যাটট্রিক দেখেছিলাম এবং এটা আমাকে অনেক অনুপ্রাণিত করেছিল। আমি এগিয়ে যেতে চাই, আরও গোল করতে চাই।”

আঞ্জুর এই চাওয়া এবং তার সঙ্গে গোলের পাতায় চলা দ্বৈরথ নিয়ে প্রশ্ন করতেই সাবিনার মুখে খেলে গেল কৌতুহলী হাসির ঝিলিক। অধিনায়ক বলেই তিনি লড়াই শুধু আঞ্জুর সঙ্গে-এমনটা ভাবতে চাইলেন না। তবে এই লড়াইয়ে জিততে সবটুকু নিংড়ে দেওয়ার আশাবাদ ঠিকই দিলেন বাংলাদেশের এই তারকা স্ট্রাইকার।

“আমি তো সবসময় চেষ্টা করছি (গোল করার)। ভারত ম্যাচেও আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে। দিন শেষে দল জিতলে তো বাংলাদেশের মানুষই হাসবে। তো অবশ্যই আমি আমার সাধ্যমত চেষ্টা করে যাব।”

“ভারতের নাম্বার ১০ (সান্ধিয়া রাঙ্গানাথন), নাম্বার ১১ (দাঙ্গমেই গ্রেস) ভালো খেলোয়াড়। আমাদেরও তো আছে..মনিকা চাকমা, মারিয়া মান্দা; এরা তো ওদের চেয়ে কম যায় না। আর ও (আঞ্জু) চেষ্টা করবে ওর মতো, আমিও চেষ্টা করব আমার মতো করে। দেখা যাক…।”

এখন দেখার অপেক্ষা, কার মুখে ফোটে বিজয়ের হাসি।

আরও পড়ুন

Also Read: ভারতের বিপক্ষে ‘ডু অর ডাই’ ম্যাচ, বললেন বাংলাদেশ কোচ

Also Read: ভারতের বিপক্ষে গোল পেতে মরিয়া স্বপ্না-কৃষ্ণাও

Also Read: ভারত অধিনায়কের চোখে বাংলাদেশ কঠিন প্রতিপক্ষ