লা লিগা
যোগ করা সময়ে সফল স্পট কিকে বার্সেলোনাকে ৩ পয়েন্ট এনে দিলেন রাফিনিয়া।
Published : 19 Apr 2025, 10:25 PM
বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে হারের স্মৃতি এখনও তাজা, এর মধ্যেই সেল্তা ভিগোর বিপক্ষে এক পর্যায়ে ৩-১ গোলে পিছিয়ে পড়ল বার্সেলোনা। সেখান থেকে কী দুর্দান্ত ভাবেই না ঘুরে দাঁড়াল হান্সি ফ্লিকের দল! সাত গোলের রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে পেল জয়ের মিষ্টি স্বাদ।
ঘরের মাঠে শনিবার লা লিগার ম্যাচে ৪-৩ গোলে জিতেছে বার্সেলোনা। এই জয়ে শিরোপা পুনরুদ্ধারের পথে আরেকটু এগিয়ে গেল তারা।
৩২ ম্যাচে ২৩ জয় ও চার ড্রয়ে ৭৩ পয়েন্ট নিয়ে চূড়ায় বার্সেলোনা। এক ম্যাচ কম খেলা রেয়াল মাদ্রিদ ৬৬ পয়েন্ট নিয়ে দুই নম্বরে।
জোড়া গোল করে বার্সেলোনার জয়ে দারুণ ভূমিকা রাফিনিয়ার। যোগ করা সময়ের অষ্টম মিনিটে ঠাণ্ডা মাথার সফল স্পট কিকে তিনিই গড়ে দেন ব্যবধান। বার্সেলোনার অন্য দুটি গোল করেন ফেররান তরেস ও ওলমো।
সেল্তার হয়ে হ্যাটট্রিক করেন বোর্হা ইগলেসিয়াস।
ম্যাচে ৭২ শতাংশের বেশি সময় বল দখলে রেখে গোলের জন্য ১৮টি শট নেয় বার্সেলোনা, এর ছয়টি ছিল লক্ষ্যে। অন্যদিকে, ১১ শটের আটটি লক্ষ্যে রাখতে পারে সেল্তা।
দ্বিতীয় মিনিটে প্রথম সুযোগ তৈরি করে বার্সেলোনা। ফের্মিন লোপেসের ক্রসে বিপজ্জনক জায়গা থেকে শট লক্ষ্যে রাখতে পারেননি রবের্ত লেভানদোভস্কি। সাত মিনিট পর রাফিনিয়ার কর্নারে হেড লক্ষ্যে রাখতে পারেননি ইনিগো মার্তিনেস।
গোলের জন্য বেশিক্ষণ অবশ্য অপেক্ষা করতে হয়নি স্বাগতিকদের। দ্বাদশ মিনিটে মাঝমাঠ থেকে বল পায়ে এগিয়ে ডি-বক্সের বাইরে থেকে কোনাকুনি শটে জাল খুঁজে নেন তরেস।
আসরে স্প্যানিশ ফরোয়ার্ডের এটি দশম গোল।
তিন মিনিট পর প্রথম ভালো সুযোগ পেয়েই সমতা ফেরায় সেল্তা। ডানদিক থেকে পাবলো দুরানের ক্রস ঝাঁপিয়েও নাগালে পাননি বার্সেলোনা গোলরক্ষক ভয়চেখ স্ট্যান্সনি। ফাঁকা জালে বল পাঠান ইগলেসিয়াস।
২৩তম মিনিটে প্রায় একইভাবে আরেকটি গোলের আশা জাগায় সেল্তা। ডান দিক থেকে দুরানের ক্রসে এবার ছুঁয়ে যায় ঝাঁপিয়ে পড়া স্ট্যান্সনির গ্লাভস। তাড়াহুড়ায় বিপদমুক্ত করতে গিয়ে ঠিকমতো শট নিতে পারেননি জুল কুন্দে। তবে তার ভাগ্য ভালো, বল যায় স্ট্যান্সনির গ্লাভসে।
চার মিনিট পর ডি-বক্সের বাইরে থেকে গোলরক্ষক বরাবর শট নিয়ে দলকে হতাশ করেন রাফিনিয়া। ৪২তম মিনিটে ডি-বক্সের মুখ থেকে ভলি লক্ষ্যে রাখতে পারেননি লেভানদোভস্কি।
পরের মিনিটে চমৎকার ডাবল সেভে সেল্তাকে হতাশ করেন স্ট্যান্সনি। ইলাইশ মোরিবার শট শুয়ে পড়ে ঠেকান বার্সেলোনা গোলরক্ষক। ফিরতি বলে ইকের লোসাদার শট পা দিয়ে ব্যর্থ করে দেন তিনি।
৫২তম মিনিটে বার্সেলোনার ভুলের সুযোগ কাজে লাগিয়ে দলকে এগিয়ে নেন ইগলেসিয়াস। মাঝমাঠে ফ্রেংকি ডি ইয়ং ও মার্তিনেসের ব্যর্থতায় বল পেয়ে যান ইগলেসিয়াস, আড়াআড়ি শটে বাকিটা সারেন তিনি।
সাত মিনিট পর আরও পিছিয়ে পড়তে বসেছিল বার্সেলোনা। প্রতি-আক্রমণ থেকে স্ট্যান্সনি বরাবর শট নিয়ে খুব ভালো সুযোগ নষ্ট করেন ইগলেসিয়াস।
এর পরেই মাঠে আসেন ওলমো ও লামিনে ইয়ামাল। পাল্টে যায় খেলার চিত্র। বার্সেলোনার আক্রমণ হয়ে ওঠে ধারাল।
ওই সময়ই অবশ্য আরেক গোল হজম করে বার্সেলোনা। ৬২তম মিনিটে প্রতি-আক্রমণে ওয়ান-অন-ওয়ানে স্ট্যান্সনিকে অনায়াসে পরাস্ত করে হ্যাটট্রিক পূরণ করেন ইগলেসিয়াস।
দুই মিনিট পর ওলমোর গোলে ব্যবধান কমায় বার্সেলোনা। রাফিনিয়ার দুর্দান্ত পাসে গোলরক্ষককে একা পেয়ে যান চোট কাটিয়ে ফেরা স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড। ঠাণ্ডা মাথার ফিনিশিংয়ে ঠিকানা খুঁজে নেন তিনি।
৬৮তম মিনিটে বার্সেলোনাকে সমতায় ফেরান রাফিনিয়া। লামিনিয়ার চমৎকার ক্রসে লাফিয়ে দুর্দান্ত ক্রসে বাকিটা সারেন ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড।
প্রায় দেড় মাস পর লা লিগায় জালের দেখা পেলেন তিনি।
৭৮তম মিনিটে পায়ে অস্বস্তি নিয়ে মাঠ ছাড়েন লেভনদোভস্কি। ডাগআউটে পা চেপে বসেছিলেন তিনি। উদ্বিগ্ন দেখাচ্ছিল বার্সেলোনার চিকিৎসকদের।
৯০তম মিনিটে অস্কার মিনগেসা অবিশ্বাস্য একটি সুযোগ নষ্ট করায় বেঁচে যায় বার্সেলোনা। খুব কাছ থেকে হেড লক্ষ্যে রাখতে পারেননি স্প্যানিশ ডিফেন্ডার।
অবশেষে, যোগ করা সময়ের অষ্টম মিনিটে জয়সূচক গোলের দেখা পায় বার্সেলোনা। চলতে আসরে ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড রাফিনিয়ার এটি পঞ্চদশ গোল। ওলমোকে সেল্তা ডিফেন্ডার ইয়োয়েল লাগো ফাউল করায় মনিটরে রিপ্লে দেখে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। শিরোপা লড়াইয়ে এই গোল ও জয়ের মূল্য কতখানি, তা বার্সেলোনার উদযাপন দেখেই বোঝা যাচ্ছিল।