চ্যাম্পিয়ন্স লিগ
একই সঙ্গে শুরু হওয়া শেষ রাউন্ডের ১৮টি ম্যাচের নানা নাটকীয়তায় মাঝপথে তাদের সম্ভাবনা একটু উজ্জ্বল হলেও, শেষ পর্যন্ত শেষ ষোলোর প্লে-অফ খেলতেই হচ্ছে দল দুটিকে।
Published : 30 Jan 2025, 04:00 AM
রেয়াল মাদ্রিদ ও বায়ার্ন মিউনিখের আশার প্রদীপ জ্বলছিল নিভু নিভু করে। দুই মাঠের প্রথমার্ধ শেষে তা আরেকটু বেশি আলো ছড়াল। শেষ পর্যন্ত যদিও তা পূর্ণতা পেল না। নিজ নিজ ম্যাচে জয়ের পরও, অন্য ম্যাচের ফল পক্ষে না আসায় সরাসরি চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ ষোলোয় জায়গা করে নেওয়া হলো না দল দুটির।
পয়েন্ট টেবিলের সেরা আটে থাকার ক্ষীণ আশা শেষ বাঁশি পর্যন্ত জিইয়ে রাখতে নিজেদের ম্যাচে কেবল জিতলেই হতো না, ব্যবধানও রাখতে হতো বড়, সেই সঙ্গে অন্য ম্যাচের ফলও আসতে হতো পক্ষে। এত হিসেব-নিকেশের অভিযানে বুধবার নিজ নিজ ম্যাচে দারুণ শুরুর পর, শেষ পর্যন্ত দাপট ধরে রেখে জিতেছে রেয়াল ও বায়ার্ন।
রদ্রিগোর জোড়া গোলে ব্রেস্তের মাঠে ৩-০ ব্যবধানে জিতেছে রেয়াল। আর ঘরের মাঠে স্লোভান ব্রাতিস্লাভাকে ৩-১ গোলে হারিয়েছে বায়ার্ন।
প্রাথমিক পর্বের শেষ রাউন্ডের ১৮টি ম্যাচ একই সঙ্গে শুরু হয়। প্রায় প্রতি মিনিটে মিনিটেই পাল্টাচ্ছিল পয়েন্ট তালিকার চিত্র।
শেষ পর্যন্ত আট ম্যাচে পাঁচ জয়ে ১৫ পয়েন্ট নিয়ে ১১তম হয়েছে রেয়াল। সমান পয়েন্ট নিয়ে ১২তম বায়ার্ন।
রেয়াল ও বায়ার্নের মতো আগেই শেষ ষোলোর প্লে-অফ নিশ্চিত করেছিল ব্রেস্ত। ১৩ পয়েন্ট নিয়ে ১৮তম ফরাসি দলটি।
ব্রেস্তের আঙিনায় রেয়ালের শুকনো হাসি
ব্রেস্ত ও রেয়ালের খেলোয়াড়রা ঠিকসময়ে মাঠে চলে এলেও ম্যাচ শুরু হতে খানিক দেরি হয়। পুরো মাঠ সাদা ধোয়ায় ঢাকা ছিল, টিভি ক্যামেরায় খেলোয়াড়দেরই ঠিকমতো দেখা যাচ্ছিল না।
আগের সাত ম্যাচে ব্রেস্তের ১৩ পয়েন্ট পাওয়াটা যে ‘ভাগ্যের জোরে’ ছিল না, সেটার একটা প্রমাণ মেলে শুরুতেই। শিরোপাধারীদের ওপর চাপ ধরে রেখে প্রথম সাত মিনিটে গোলের জন্য তিনটি শট নেয় তারা। ষষ্ঠ মিনিটে হতে পারতো গোলও; তবে মাথিয়াস পেরেইরার বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া শপ ঝাঁপিয়ে আটকান থিবো কোর্তোয়া।
অধিকাংশ সময়ে বল দখলে রেখে খেললেও আক্রমণে তেমন সুবিধা করতে পারছিল না রেয়াল। খানিক পর অবশ্য তিন মিনিটে ভালো দুটি আক্রমণ করে তারা; প্রতিপক্ষের চ্যালেঞ্জ সামলে দুবারই শট নেন এমবাপে, কিন্তু একবারও বল লক্ষ্যে রাখতে পারেননি তিনি।
ধীরে ধীরে গুছিয়ে ওঠা রেয়াল ২৭তম মিনিটে এগিয়ে যায়। লুকা মদ্রিচের পাস ধরে একজনকে কাটিয়ে দ্রুত ডি-বক্সে ঢুকে শট নেন রদ্রিগো, বল দূরের পোস্টে লেগে জালে জড়ায়।
গত সপ্তাহে রেড বুল সালসবুর্কের বিপক্ষে ৫-১ ব্যবধানের জয়ে দুটি গোল করেছিলেন এই ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড।
দ্বিতীয়ার্ধ শুরু হতেই গোল খেতে বসেছিল রেয়াল। তবে বক্সে ফাঁকায় বল পেয়েও হুগো মাগনেত্তি লক্ষ্যভ্রষ্ট শট নিলে বেঁচে যায় সফরকারীরা। পরের মিনিটে পাল্টা আক্রমণেও গোল হতে পারতো; কিন্তু এমবাপের শট রুখে দেন ব্রেস্ত গোলরক্ষক।
৫১তম মিনিটে অবশ্য ঠিকই রেয়ালের জালে বল জড়ায়। উল্লাসে ফেটে পড়ে পুরো স্বাগতিক শিবির; তবে ভিএআরে বাজে অফসাইডের বাঁশি।
চার মিনিট পর ব্যবধান দ্বিগুণ করে রেয়াল। ডি-বক্সে ডান দিক থেকে লুকাস ভাসকেসের পাস ছয় গজ বক্সের মুখে পেয়ে প্রথম ছোঁয়ায় শটে গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন ইংলিশ মিডফিল্ডার বেলিংহ্যাম।
৬৩তম মিনিটে দুর্দান্ত নৈপুণ্যে দুই গোলের ব্যবধান ধরে রাখেন কোর্তোয়া। কেনি লালার শট দারুণ ক্ষীপ্রতায় ঝাঁপিয়ে আটকান বেলজিয়ান গোলরক্ষক।
৭৮তম মিনিটে ব্যবধান আরও বাড়িয়ে দলকে জয়ের পথে এগিয়ে নেন রদ্রিগো। তার পাস ধরেই এমবাপের নেওয়া শট আটকে দেন গোলরক্ষক। ওই ফিরতি বল পেয়েই নিজের দ্বিতীয় গোলটি করেন রদ্রিগো।
চেনা আঙিনায় জিতেও হাসতে পারল না বায়ার্ন
কঠিন ও জটিল সমীকরণের লক্ষ্যে আলিয়াঞ্জ অ্যারেনায় দাপুটে শুরু করে বায়ার্ন। আক্রমণের ঢেউ তুলে প্রতিপক্ষকে কোণঠাসা করে ফেলে তারা। অষ্টম মিনিটে আদায় করে নেয় গোল; জসুয়া কিমিখের ক্রসে দারুণ হেডে বল জালে পাঠান টমাস মুলার।
প্রথমার্ধে বল দখলে একচেটিয়া আধিপত্য করে গোলের জন্য মোট ১৫টি শট নেয় বায়ার্ন, যদিও মাত্র তিনটিই লক্ষ্যে রাখতে পারে তারা। ফিনিশিংয়ের দুর্বলতায় বিরতির আগে আর ব্যবধান বাড়াতে পারেনি স্বাগতিকরা।
বিরতির পরও একইভাবে আক্রমণ করতে থাকে বায়ার্ন। এই অর্ধে প্রথম ২০ মিনিটেই তারা শট নেয় আরও সাতটি। যার মধ্যে ৬৩তম মিনিটে হেডে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন হ্যারি কেইন।
৮৪তম মিনিটে ছয় গজ বক্সের বাঁ দিক থেকে কোনাকুনি শটে দলের তৃতীয় গোলটি করেন কিংসলে কোমান।
নির্ধারিত সময়ের শেষ মিনিটে সফরকারীদের সান্ত্বনাসূচক গোলটি করেন মার্কো তলিচ। আট ম্যাচের সবগুলো হেরে বিদায় নিল দলটি।
আর পরিষ্কার ব্যবধানে জিতেও লক্ষ্য ছুঁতে না পারায়, মলিন মুখে মাঠ ছাড়েন কেইন-মুলাররা।
শঙ্কা উড়িয়ে টিকে রইল সিটি, দেম্বেলের হ্যাটট্রিকে উড়ল পিএসজি