ইউরোপা লিগ
আগামীতে বছরের পর বছর ধরে নাটকীয়তায় ভরা এই লড়াইয়ের গল্প শোনাতে পারবে প্রিমিয়ার লিগের ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটি।
Published : 18 Apr 2025, 04:09 AM
কী অবিশ্বাস্য এক লড়াইয়ের স্বাক্ষীই না হলো ওল্ড ট্র্যাফোর্ড! প্রথমার্ধে দুই গোলে এগিয়ে জয়ের পথে যাত্রা শুরু করল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। ছয় মিনিটের ব্যবধানে পাল্টা দুই গোল করে ঘুরে দাঁড়াল লিওঁ। অতিরিক্ত সময়ে আরও দুই গোল হজম করে ছিটকে পড়ার দ্বারপ্রান্তে চলে গেল স্বাগতিকরা। এরপর মাঠে যা হলো, তা যেন বিশ্বাস করাই দায়। ক্ষণে ক্ষণে মোড় বদলের ম্যাচে শেষ সাত মিনিটে চিত্রপট আমূল বদলে দিয়ে, প্রত্যাবর্তনের নতুন এক আখ্যান রচনা করল হুবেন আমুরির দল।
ঘরের মাঠে ৯ গোলের রুদ্ধশ্বাস লড়াইটি জিতে ইউরোপা লিগের সেমি-ফাইনালে জায়গা করে দিল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। নাটকীয়তায় ভরা ম্যাচটি ৫-৪ গোলে জিতে, দুই লেগ মিলিয়ে ৭-৬ অগ্রগামিতায় এগিয়ে গেল তারা।
এই লড়াই কতটা রোমাঞ্চকর ছিল, তার প্রমাণ মিলছে পরিসংখ্যানেও।
পজেশন রাখায় অলিম্পিক লিওঁ আধিপত্য করলেও, আক্রমণে দুই দলই প্রায় সমানে সমান। গোলের জন্য উভয় পক্ষ মোট ২১টি করে শট নেয়, সফরকারীরা লক্ষ্যে রাখতে পারে ৯টি, আর ইউনাইটেড ৮টি।
গত সপ্তাহে লিওঁর মাঠে হওয়া প্রথম লেগেও দারুণ লড়াইয়ের দেখা মেলে। যেখানে শুরুতে পিছিয়ে পড়ার ধাক্কা সামলে ঘুরে দাঁড়িয়ে একটা সময় জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়েছিল ইউনাইটেড। কিন্তু শেষ মুহূর্তে আরেক গোল খেয়ে তারা জয় হাতছাড়া করে, ম্যাচটি ২-২ গোলে ড্র হয়।
ওই ম্যাচে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের দুটি গোল হজমের পেছনেই বড় দায় ছিল আন্দ্রে ওনানার। সেদিনের বাজে পারফরম্যান্সে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন ক্যামেরুনের এই গোলরক্ষক, দল থেকে বাদও পড়েন। প্রবল সেই ধাক্কা সামলে, দলে ফিরে দারুণ কয়েকটি সেভ করলেন তিনি, হয়ে উঠলেন এই রূপকথার গল্পের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
বৃহস্পতিবার রাতের এই ম্যাচে মোট ৯ জন খেলোয়াড় জালের দেখা পেলেন। একজন দেখলেন লাল কার্ড; মিডফিল্ডার তোলিসো বহিষ্কার হওয়ায় অনেকটা সময় একজন কম নিয়ে খেলতে হয় লিওকেঁ।
ম্যাচের গোল উৎসবের শুরু দশম মিনিটে, আলেহান্দ্রো গার্নাচোর পাস পেয়ে ইউনাইটেডকে এগিয়ে নেন মানুয়েল উগার্তে। বিরতির ঠিক আগে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন দিয়োগো দালোত।
লাগাম হাতে রেখে দ্বিতীয়ার্ধের অনেকটা সময় পার করে দেয় আমুরির দল। এরপরই নাটকীয় মোড়, ৭১তম মিনিটে তোলিসো হেডে ব্যবধান কমানোর পর সমতা টানেন নিকোলাস তাগলিয়াফিকো।
নির্ধারিত সময় শেষের আগের মিনিটে লেনি ইয়োরোকে বাজে ফাউল করে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখেন ফরাসি মিডফিল্ডার তোলিসো।
দুই লেগ মিলিয়ে ৪-৪ স্কোরলাইন নিয়ে লড়াই গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে; সেখানে আরও দুই গোল করে সেমি-ফাইনালের জোরাল আশা জাগায় লিওঁ। ১০৪তম মিনিটে হায়ান শের্কি বাঁ পায়ের শটে দলকে এগিয়ে নেওয়ার চার মিনিট পর সফল স্পট কিকে ব্যবধান বাড়ান লাকাজেত; ডি-বক্সে ফোফানাকে ডিফেন্ডার লুক শ ফাউল করায় পেনাল্টিটি পায় তারা।
স্বাগতিক সমর্থকদের চোখেমুখে তখন তীব্র হতাশার ছাপ। টিভি পর্দায় ভেসে ওঠে ছোট্ট এক ইউনাইটেড ভক্তের মুখ, অনেক চেষ্টা করেও কান্না লুকাতে পারছিল না। খানিক পরেই তার মতো অগনিত সমর্থকের মুখে হাসি ফোটে।
কাসেমিরো ডি-বক্সে ফাউলের শিকার হওয়ায় পেনাল্টি পায় ইউনাইটেড এবং ১১৪তম মিনিটে সফল স্পট কিকে নিভতে বসা আশা জাগিয়ে তোলেন ব্রুনো ফের্নান্দেস। আর ১২০তম মিনিটে কাসেমিরোর পাস ধরে সমতা টানেন কবি মেইনু। দুই লেগ মিলিয়ে স্কোরলাইন দাঁড়ায় ৬-৬।
এবং পরের মিনিটেই প্রতিপক্ষকে স্তব্ধ করে দিয়ে জয় ছিনিয়ে নেয় ইউনাইটেড। এবারও অ্যাসিস্টের ভূমিকায় কাসেমিরো, তার ক্রসে গোলমুখ থেকে ম্যাগুইয়ারের হেডে উল্লাসে ফেটে পড়ে ওল্ড ট্র্যাফোর্ড।
উত্তেজনায় ঠাসা এই ম্যাচ জয়ের আত্মবিশ্বাস নিয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে নামবে আথলেতিক বিলবাওয়ের বিপক্ষে।