মৌলভীবাজারে জঙ্গি আস্তানায় ফের অভিযান মঙ্গলবার: সিটিটিসি

আসাদুজ্জামান বলেন, “আমাদের মনে হচ্ছে, সেখানে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ক্যারেক্টার থাকতে পারেন।”

মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার কর্মধা ইউপি কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন সিটিটিসির মো. আসাদুজ্জামান।

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলায় জঙ্গি সন্দেহে আটক ১৭ জনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল (সিটিটিসি) ইউনিট।

কর্মধা ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে আটকদের সঙ্গে কথা বলার পর সোমবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (সিটিটিসি) মো. আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, “আগামীকাল মঙ্গলবার নতুন আরেকটি আস্তানায় অভিযান চালানো হবে। তারপরই আমরা এই অভিযান ও আটকদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানাব।”

সকালে ‘পাহাড়ের আস্তানা’ থেকে নেমে স্থানান্তরিত হওয়ার সময় কুলাউড়ার কর্মদা ইউনিয়নের আছকরাবাদ সিএনজি স্ট্যান্ড এলাকা থেকে জঙ্গি সন্দেহে ১৭ নারী-পুরুষকে আটক করে স্থানীয় জনতা। পরে তাদের ইউনিয়ন পরিষদের একটি কক্ষে পুলিশ পাহারায় আটক রাখা হয়।

তার আগে শুক্রবার রাত থেকে কর্মদা ইউনিয়নের পূর্ব টাট্টিওয়ালি গ্রামের বাইশালী বাড়ি এলাকার একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ১০ জন নারী-পুরুষ ও তিন শিশুকে আটক করেছিল সিটিটিসি ইউনিট। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছিল, তারা নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলা’র সদস্য।

এদের আটকের আগে ৭ অগাস্ট ঢাকার মিরপুর থেকে একই সংগঠনের আরও ১০ জনকে আটক করা হয়েছিল। পরে ১১ অগাস্ট ফরহাদ নামে ঢাকা থেকে আটক করা হয়েছিল আরও একজনকে। ফরহাদের দেওয়া তথ্য ধরেই ১২ অগাস্ট কুলাউড়ার পূর্ব টাট্টিওয়ালি এলাকায় অভিযানে নেমেছিল সিটিটিসি।

১২ অগাস্টের অভিযান পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে সিটিটিসি সাংবাদিকদের ধারণা দিয়েছিল, হয়ত সেই আস্তানা থেকে কিছু লোক পালিয়ে গেছে। তারা আশপাশেই কোথায় অন্য আস্তানায় আত্মগোপন করেছে।

সেই থেকে এলাকায় সাধারণ মানুষের নজরদারি থাকায় এবং তারা সচেতন থাকায় ১৭ জনকে আটক করা গেছে; এর জন্য স্থানীয়দের ধন্যবাদ জানিয়ে সিটিটিসির আসাদুজ্জামান বলেন, “এখানে যারা আটক আছেন তাদের আমরা পরিপূর্ণভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারিনি। এটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তবে আমাদের মনে হচ্ছে, সেখানে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ক্যারেক্টার থাকতে পারেন।

“এরই মধ্যে আমরা নিশ্চিত হয়েছি, সেখানে একজন চিকিৎসক আছেন। তাঁর স্ত্রী দুদিন আগে পূর্ব টাট্টিওয়ালি থেকে আটক হয়েছিলেন। চীন থেকে পড়াশোনা করে আসা দুজন প্রকৌশলীও আছেন।

আটক ওই চিকিৎসক হচ্ছেন সোহেল তানজিম রানা (২৭)। তিনি সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার সয়দাবাদ ইউনিয়নের পোড়াবাড়ি গ্রামের কৃষক আবদুল হান্নানের ছেলে। তিনি সিরাজগঞ্জের একটি বেসরকারি হাসপাতালে কাজ করতেন। স্ত্রী মাইশা ইসলাম হাফসাকে (২০) নিয়ে কর্মস্থলের পাশেই ভাড়া বাসায় থাকতেন।

মাইশা শনিবার পূর্ব টাট্টিওয়ালী থেকে আটক হয়েছিলেন। ২৬ জুলাই থেকেই তারা নিখোঁজ ছিলেন বলে পরিবার জানিয়েছে।

আটকদের মধ্যে নতুন জঙ্গি সংগঠনের প্রধান ইমাম মাহমুদ আছেন কিনা- সাংবাদিকরা এমন প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান বলেন, “আমরা এখনও এসব ব্যাপারে নিশ্চিত নই। তবে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র আছে। আরও জিজ্ঞাসাবাদ শেষে এ ব্যাপারে জানানো হবে।

“এগুলো খুব স্পর্শকাতর বিষয়, সময়ের ব্যাপার। তারা কেউ হঠাৎ করেই এখানে আসেনি বা ঘর ছাড়েনি। আরও জিজ্ঞাসাবাদ করলে জানা যাবে, কেন তারা এই পাহাড়ি অঞ্চলে এসে আস্তানা গেড়েছিল।”

ব্রিফিংয়ের আগে ও পরে আটকদের সাংবাদিকদের সামনে হাজির করা হয়নি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিটিটিসির পক্ষ থেকে জানানো হয়, অভিযান পরিচালনার স্বার্থেই এটা করা হয়েছে। মঙ্গলবার মৌলভীবাজারে ফের অভিযান হবে। তখন হয়ত সবাইকে হাজির করা হতে পারে। সেই অভিযান সফল করতে সিটিটিসি সবার সহযোগিতা প্রত্যাশা করে।

মো. আসাদুজ্জামান আরও বলেন, “এখন রাতে বেলা, এলাকাটি খুবই দুর্গম। আমরা সব জায়গা ভালভাবে চিনিও না। তাই রাতে বেলা আর অভিযান চালানো হবে না। মঙ্গলবার সকালে অভিযান শুরু হবে।”

তিনি আরও বলেন, “উগ্রবাদ ও জঙ্গিবাদ নির্মূলে পুলিশ সফলতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। একদম নতুন একটি জঙ্গি সংগঠন মাথাচাড়া দিয়ে উঠার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু জনগণের সহায়তায় আমরা অনেককে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হই।”

ব্রিফিং শেষে আটক জঙ্গিদের কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে গাড়িতে করে মৌলভীবাজার জেলা পুলিশ লাইনে নিয়ে যাওয়া হয়।

আরও পড়ুন:

কুলাউড়ায় আটকদের মধ্যে ডা. রানাও আছেন, জানালেন স্বজন

‘বানাইতে চাইলাম ডাক্তার, ছেলে হইল জঙ্গি’ আফসোস কৃষক বাবার

কুলাউড়ায় ‘জঙ্গি আস্তানায়’ অভিযান, আটক ১০

সিরাজগঞ্জের নিখোঁজ চিকিৎসকের স্ত্রী আটক কুলাউড়ার ‘জঙ্গি আস্তানা’ থেকে

বগুড়ার পলাতক আসামি সুমনের স্ত্রী আটক কুলাউড়ার ‘জঙ্গি আস্তানায়’