‘আরসা-আরএসও’র সংঘাত: শূন্যরেখা থেকে পালিয়ে এসেছে ৩ হাজার রোহিঙ্গা

“এই রোহিঙ্গাদের কেউ উখিয়া ও টেকনাফের ক্যাম্পের নিবন্ধিত বাসিন্দা কিনা- তা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।”

শংকর বড়ুয়া রুমি, কক্সবাজার প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 Jan 2023, 01:43 PM
Updated : 31 Jan 2023, 01:43 PM

মিয়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র সংগঠন 'আরসা ও আরএসও'র সংঘাতের জেরে শূন্যরেখার শরণার্থী শিবিরি থেকে পালিয়ে বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডে প্রবেশ করেছে ‘ঘরপোড়া’ আরও প্রায় তিন হাজার রোহিঙ্গা।

প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু সীমান্তে অস্থায়ী সামিয়ানার নীচে থাকা এসব রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর করে কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালংয়ের ট্রানজিট ক্যাম্পে সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নিয়ে এ সংক্রান্ত জাতীয় টাস্কফোর্স কমিটি।

শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মো. মিজানুর রহমান মঙ্গলবার বিকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শূন্যরেখা থেকে যারা পালিয়ে এসেছেন তাদের গণনার কাজ শেষ হয়েছে। এখন তাদের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। এই রোহিঙ্গাদের কেউ কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের কোনো ক্যাম্পের নিবন্ধিত বাসিন্দা কিনা- তা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।”

মিজানুর বলেন, “যেসব রোহিঙ্গা আগে থেকে নিবন্ধিত তাদের স্ব স্ব ক্যাম্পে ফেরত পাঠানো হবে। যারা নিবন্ধনহীন তাদের আপাতত উখিয়া উপজেলার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন ট্রানজিট ক্যাম্পে রাখা হবে।“

ধারাবাহিক সংঘাতের একপর্যায়ে গত ১৮ জানুয়ারি নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার কোনারপাড়া শূন্যরেখা ক্যাম্পে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) এবং আরাকান রোহিঙ্গা সলিডারিটি অরগানাইজেশনের (আরএসও) মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় একজন নিহত এবং এক শিশুসহ দুই রোহিঙ্গা আহত হন।

ওইদিন বিকালে শূন্যরেখার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। আগুনে ক্যাম্পের প্রায় সবকয়টি ঘর পুড়ে যায় বলে রোহিঙ্গাদের ভাষ্য। সেখানে ৬৩০টি পরিবারের প্রায় সাড়ে চার হাজার রোহিঙ্গা বসবাস করতেন। তাদের দেখভাল করত আন্তর্জাতিক রেডক্রস ও রেডক্রিসেন্ট কমিটির (আইআরসিআরসি)।

অগ্নি-সংযোগের পর ক্যাম্প লাগোয়া সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়ে রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশুদের একটি অংশ আত্মরক্ষার্থে মিয়ানমার ভূখণ্ডে চলে যায়। অপর একটি অংশ নিকটবর্তী ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠ, তুমব্রু বাজার, আশপাশের পতিত জমিতে আশ্রয় নেয়। এরপর থেকে তারা সেখানেই বসবাস করছেন।

এসব রোহিঙ্গার বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে একটি জাতীয় টাস্কফোর্স কমিটি গঠিত হয়। এতে প্রশাসন, আরআরআরসি, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও আন্তর্জাতিক সংস্থা প্রতিনিধিরা রয়েছেন।

ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বিকালে সাংবাদিকদের বলেন, “সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ আইআরসিআরসির সহায়তায় ইউনিয়ন পরিষদ সোমবার বিকালে রোহিঙ্গা সংখ্যা গণনার কাজ সম্পন্ন করেছে।“

একজন ইউপি সদস্যের সমন্বয়ে দুদিনে মোট আটজন এই জরিপ কাজ পরিচালনা করেছে। এখানে ৫৩৭টি পরিবারে মোট দুই হাজার ৮৮৯ জন রোহিঙ্গাকে পাওয়া গেছে বলে জানান চেয়ারম্যান।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রোমেন শর্মা বলেন, “তুমব্রুতে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের গণনা শেষ হয়েছে সবেমাত্র। তাদেরকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হবে। সেটা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যখন বলবে তখনি হবে। আগে নয়।”

তবে সময়ক্ষেপণ করা হবে না, কেননা পরিবেশ রক্ষা এবং তাদের নিরাপত্তা এখন মূখ্য বিষয় হয়ে উঠেছে বলে মন্তব্য করেন ইউএনও। 

শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মিজানুর রহমান আরও বলেন, “এখানে আগত যেসব রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অপরাধে জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া যাবে, তাদের ব্যাপারে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করা হবে।”

২০১৭ সালের ২৫ অগাস্ট থেকে বাস্তচ্যুত হয়ে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় আট লাখের বেশি রোহিঙ্গা। এর আগে বিভিন্ন সময়ে পালিয়ে আসারাসহ অনন্ত ১২ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়া হয় কক্সবাজার জেলার উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি অস্থায়ী আশ্রয় ক্যাম্পে। এসব ক্যাম্পের সার্বিক দেখভাল ও প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করছে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন (আরআরআরসি)।

একই সময় বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডে আসতে না পেরে তুমব্রু সীমান্তের কোনারপাড়া শূন্যরেখায় আটকা পড়ে  ৬৩০টি পরিবারে সাড়ে চার হাজারের বেশি রোহিঙ্গা। শূন্যরেখায় থাকা রোহিঙ্গাদের বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন বা বেসরকারি সংস্থা কিছু করতে পারে না। সেক্ষেত্রে তাদেরকে শুধু আন্তর্জাতিক রেডক্রস-রেডক্রিসেন্ট কমিটির (আইসিআরসি) ত্রাণের ওপর নির্ভর করে চলতে হয়। 

কিন্তু বর্তমানে শূন্যরেখার ওই ক্যাম্পটির দুই হাজার ৮৮৯ জন রোহিঙ্গার তথ্য পাওয়া গেলেও বাকিরা কোথায়- তা বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্ট কেউ।

আরও পড়ুন:

Also Read: ভয়ের শূন্য রেখা থেকে পালিয়ে অনিশ্চিত জীবনে

Also Read: আরসা প্রধানকে ধরিয়ে দিতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বার্মিজ ভাষার পোস্টার

Also Read: ২৪ ঘণ্টা বন্ধের পর তুমব্রু সীমান্তে ফের গোলাগুলি 

Also Read: তুমব্রু সীমান্তে থেমে থেমে গুলি: দুই স্কুলে আশ্রয় রোহিঙ্গাদের

Also Read: তুমব্রু সীমান্তে গোলাগুলির পর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুন

Also Read: কক্সবাজারের সীমান্তে ফের গোলাগুলির খবর

Also Read: শূন্যরেখায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ‘আরসা-আরএসও’র গোলাগুলি, নিহত ১

Also Read: তুমব্রু সীমান্তে আতঙ্কে সাধারণ মানুষ