সারাদিন শান্ত থাকলেও সন্ধ্যার পর থেকে রোহিঙ্গাদের দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়েছে বলে জানান স্থানীয় ইউপি সদস্য।
Published : 20 Jan 2023, 11:01 PM
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু কোনারপাড়া সীমান্তের শূন্যরেখার রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও আশপাশের মিয়ানমার অংশে আবার গোলাগুলি হচ্ছে; এতে সীমান্তের এপারের বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
শুক্রবার রাতে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মোহাম্মদ আলম সাংবাদিকদের বলেন, “বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে শুক্রবার বিকাল পর্যন্ত তমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখার রোহিঙ্গা ক্যাম্প এবং আশপাশের এলাকায় মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র দুই পক্ষের গোলাগুলি বন্ধ ছিল। কিন্তু শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে আবারও গোলাগুলি শুরু হয়েছে।”
আগের সংঘর্ষের ধারাবাহিকতায় আরাকান রোহিঙ্গা সলিডারিটি অরগানাইজেশনের (আরএসও) এবং আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) সদস্যদের মধ্যে এ গোলাগুলি ঘটছে বলে ধারণা করছেন এই ইউপি সদস্য।
তিনি বলেন, গোলাগুলির কারণে স্থানীয় বাসিন্দারা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে।
তবে সীমান্ত পরিস্থিতি শুক্রবার দিনভর শান্ত থাকার কথা বললেও নতুন করে গোলাগুলির খবর অবহিত নন বলে জানিয়েছেন নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রোমেন শর্মা।
মিয়ানমারের দুটি সশস্ত্র গ্রুপ আরসা ও আরএসও বুধবার ঘুমধুমের কোনারপাড়ার শূন্যরেখায় সংঘর্ষে জড়ায় বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয়রা জানান। সংঘর্ষে একজন নিহত হন।
এরপর স্থানীয় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। আগুনে ক্যাম্পের শত শত বসতঘর ভস্মীভূত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছেন।
এর মধ্যে ফের গোলাগুলির তথ্য জানিয়ে ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আলম বলেন, “থেমে থেমে (রাত সোয়া ৮টা পর্যন্ত) সংঘর্ষ অব্যাহত রয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “শূন্যরেখা থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা তমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং আশপাশের এলাকায় এখনও অবস্থান করছেন। তাদেরকে বিজিবি ও পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কড়া নজরদারিতে রেখেছেন।”
তমব্রু এলাকার বাসিন্দা ও বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত আজিজুল হক বলেন, শুক্রবার সকালে সীমান্তের মিয়ানমারের ঢেঁকিবনিয়াস্থ শূন্যরেখায় অবস্থিত কিছু সংখ্যক ঘর আগুনে পুড়তে দেখা গেছে। সেখানকার বাসিন্দারা স্কুল ও আশপাশের এলাকায় এসে অবস্থান নিয়েছে।
এতে স্থানীয়রা নতুন করে আবারও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের আশঙ্কা করছেন বলে জানান আজিজুল হক।
সীমান্তের উদ্ভূদ পরিস্থিতি সম্পর্কে নাইক্ষ্যংছড়ির ইউএনও রোমেন শর্মা বলেন, “আপাতত আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের বিজিবিসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্টরা কড়া নজরদারিতে ঘিরে রেখেছেন। এ ছাড়া সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধে বিজিবি সতর্ক নজরদারি অব্যাহত রেখেছে।“
ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা পেলে আশ্রয় নেওয়া এসব রোহিঙ্গাদের সরিয়ে নিতে প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে বলে জানান ইউএনও।
রোমেন জানান, ঘটনাস্থল সীমান্তের শূন্যরেখায় হওয়ায় আন্তর্জাতিক রীতিমতে সরেজমিন পরিদর্শন করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই শূন্যরেখা ও মিয়ানমার সীমান্ত অভ্যন্তরে কী ঘটছে সেটার প্রকৃত চিত্র জানা সম্ভব হচ্ছে না।
তবে সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে বিজিবির কক্সবাজার ৩৪ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্ট কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছে আর্মড পুলিশের (এপিবিএন) তিনটি ব্যাটালিয়ন। বুধবার সীমান্তের শূন্যরেখায় সংঘাতের জেরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর নিরাপত্তা জোরদারে নির্দেশনা দিয়েছে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) কার্যালয়।
এ নিয়ে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, “রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে নিরাপত্তায় নিয়োজিত এপিবিএন এবং অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারির বাড়ানোর জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যাতে ক্যাম্প থেকে কেউ বাইরে যেতে না পারে এবং বাইরে থেকে কেউ ক্যাম্পে ঢুকতে না পারে।”
১৪ এপিবিএন এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি সৈয়দ হারুন অর রশীদ বলেন, “বর্তমানে ক্যাম্পের সার্বিক নিরাপত্তা কঠোরভাবে বাড়ানো হয়েছে। কাউকে ক্যাম্পের ভেতর থেকে বাইরে, বাইরে থেকে ভেতরে আনাগোনা করতে দেওয়া হচ্ছে না। ক্যাম্পের প্রতিটি প্রবেশ পথে স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। ক্যাম্পের অভ্যন্তরেও গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে।”
এ পর্যন্ত বাইরে থেকে কোনো রোহিঙ্গার ক্যাম্পে প্রবেশচেষ্টার তথ্য তাদের কাছে নেই বলেও জানান তিনি।
৮ এপিবিএন এর সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফারুক আহমেদ বলেন, “নতুন করে সীমান্তে সংঘাতের জেরে ক্যাম্পের অভ্যন্তরে আইন-শৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে গোয়েন্দা নজরদারির পাশাপাশি ক্যাম্পের প্রবেশ পথে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।"
২০১৭ সালের আগস্টে ব্যাপক সংখ্যক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে। যার মধ্যে ১১ লাখ রোহিঙ্গা উখিয়া-টেকনাফের ৩৩ টি ক্যাম্পে অবস্থান নিলেও কিছু রোহিঙ্গা শূণ্যরেখার ক্যাম্পটিতে বসবাস করতেন। যে ক্যাম্পটিতে বাংলাদেশের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয়, আন্তর্জাতিক কোন সংস্থা সহায়তা না করলেও আন্তর্জাতিক রেড ক্রিসেন্ট কমিটি (আইসিআরসি) সহায়তা করে আসছিল।
আইসিআরসির তথ্য মতে, শূণ্যরেখার ক্যাম্পটিতে ৬৩০টি ঘরে সাড়ে চার হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বসবাস করতো।
আরও পড়ুন: