অভিযোগপত্রে এজাহারভুক্ত আসামি শহর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বাদ দেওয়া হয়েছে।
Published : 07 Apr 2023, 12:32 AM
কুষ্টিয়া পৌরভবনে দরপত্র ছিনতাই ও দরদাতাকে মারধরের মামলায় এজাহারভুক্ত মূল আসামিদের বাদ দিয়ে অভিযোগপত্র দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বাদী।
কুষ্টিয়া সদর থানার এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই (নিরস্ত্র) জাহাঙ্গীর সেলিম গত ৩০ মার্চ অভিযোগপত্র দাখিল করেন আদালতে।
অভিযোগপত্রে এজাহারভুক্ত আসামি শহর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বাদ দেওয়া হয়েছে।
মামলার বাদী ভুক্তভোগী দরদাতা ইব্রাহিম হোসেনের অভিযোগ, তদন্তকারী কর্মকর্তাকে ভিডিও ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ানে অকাট্য তথ্য প্রমাণ দেওয়া সত্বেও তিনি আসামি পক্ষের কাছ থেকে ‘মোটা অংকের আর্থিক সুবিধা নিয়ে’ দিনকে রাত বানিয়ে এই প্রতিবেদন দিয়েছেন।
“আমি ন্যায় বিচার দাবি করে অসত্য ও ভিত্তিহীন তদন্ত প্রতিবেদন নাকচ করে পুনঃতদন্তের আবেদন করব আদালতে।”
তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কুষ্টিয়া মডেল থানার এসআই (নিরস্ত্র) জাহাঙ্গীর সেলিম।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি দুপুরে কুষ্টিয়া পৌরভবনের মেয়র কার্যালয়ের সামনে রক্ষিত টেন্ডার বক্সের কাছে দরপত্র ছিনতাইসহ দরদাতাকে মারধরের ঘটনা ঘটে। ঘটনার দিনেই ভুক্তভোগী দরদাতা কুষ্টিয়া মডেল থানায় এজাহার দেন। এই এজাহার ২৬ ফেব্রুয়ারি মামলা হিসেবে রেকর্ড করে কুষ্টিয়া সদর থানা পুলিশ।
মামলার এজাহারনামীয় আসামিরা হলেন কুষ্টিয়া পৌসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা কৌশিক আহম্মেদ বিচ্ছু (৪০), ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আফিল উদ্দিন (৫০), শহর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মানব চাকী (৩০), কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ফেরদৌস খন্দকার (২৫), শহর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক হাসিব কোরাইশী (২৭) এবং যুবলীগ কর্মী সুজন ঘোষ (৩৫)।
এদের মধ্যে শুধু চটপটি বিক্রেতা যুবলীগ কর্মী সুজন ঘোষ এবং এজাহার বহির্ভূত ফেরিওয়ালা স্বেচ্ছাসেবক লীগ কর্মী শিপন সেখকে (২৮) আসামি করে অভিযোগপত্র দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।
ছিনতাই ঘটনা ও মামলার প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী এনামুল হক বলেন, “মামলার আইও [তদন্তকারী কর্মকর্তা] আমার জবানবন্দি গ্রহণকালে আমি এজাহারনামীয় পাঁচজনের নাম বলেছি; কিন্তু আদালতে দেওয়া ওই নোটশিটে লেখা হয়েছে আমি নাকি কারো নাম বলিনি বা কাউকে দেখিনি বা চিনি না। এ সব আইও নিজের মনগড়া কথা লিখেছেন।”
বাদীর আইনজীবী আব্দুর রউফ বলেন, “মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে যদি ঘটনার সঠিক তথ্য উদ্ঘাটিত হয়নি বলে দাবি করা হয়, তাহলে সংক্ষুব্ধ পক্ষ আদালতের কাছে সুষ্ঠু তদন্তের দাবি করতেই পারে। এই মামলাতেও বাদীপক্ষের সেই আবেদনই পেশ করা হবে আগামী ধার্য দিনে।”
এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই (নিরস্ত্র) জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, “মামলাটি তদন্তকালে যে সব তথ্য প্রমাণ পেয়েছি তার ভিত্তিতে যাদের জড়িত প্রমাণ পাওয়া গেছে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দাখিল করেছি। এর বিরুদ্ধে বাদীর অভিযোগ থাকতেই পারে। তিনি বিষয়টি আদালতকে জানাতে পারেন।”
গত ২৩ ফেব্রুয়ারি পৌরভবনে দরপত্র ছিনতাই হয়। এরপর ২৫ ফেব্রুয়ারি রাতে মেয়র কার্যালয়ের তালা ভেঙে ডিভাইস চুরিসহ গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র ধ্বংসের ঘটনা ঘটে।
এসব ঘটনায় চুরি, ছিনতাইসহ সরকারি কাজে বাধাদানের অভিযোগে পৃথক দুটি মামলা রেকর্ড করে কুষ্টিয়া সদর থানা পুলিশ। পরে এই মামলার পক্ষে বিপক্ষে মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়ে যায় কুষ্টিয়া পৌর কর্তৃপক্ষ এবং শহর আওয়ামী লীগসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
আরও পড়ুন
কুষ্টিয়ায় দরপত্র ছিনতাই ও চুরির মামলা প্রত্যাহার দাবি, থানা ঘেরাও