“ব্রি-ধান ১০৭ চাষ করেছি। ধান হেলে পড়েনি; রোগ-বালাই হয়নি। ফলনও হাইব্রিডের সমান পেয়েছি।”
Published : 25 Apr 2025, 12:43 PM
বাংলাদেশের মানুষের প্রধান খাদ্য ভাতের মাধ্যমে মানুষের দেহের পুষ্টির চাহিদা নিশ্চিত করতে কাজ করছেন বিজ্ঞানীরা। এরইমধ্যে উচ্চ প্রেটিন সমৃদ্ধ প্রিমিয়াম কোয়ালিটির বোরো মৌসুমের একটি ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট-ব্রি।
ব্রি বলছে, নতুন উদ্ভাবিত ‘ব্রি-ধান ১০৭’ উচ্চ প্রোটিন ও অ্যামাইলোজ সমৃব্ধ। এ ধান থেকে তৈরি চালের ভাত খেলেই শরীরের প্রয়োজনীয় প্রোটিন পাওয়া যাবে। এ বছর গোপালগঞ্জ, নড়াইল ও বাগেরহাট জেলায় ব্রি গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের সহযোগিতায় ২০টি প্রদর্শনী প্লটে ব্রি-ধান ১০৭ চাষাবাদ করেন ২০ জন কৃষক। এ ধান চাষে লাভবানও হয়েছেন তারা।
গোপালগঞ্জ বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) আঞ্চলিক কার্যালয়ের মখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও প্রধান আমিনা খাতুন বলেন, ‘ব্রি-ধান ১০৭’ এর চালে অ্যামাইলোজের (ভাত ঝরঝরে হওয়া নির্ভর করে) পরিমাণ শতকরা ২৯ দশমিক ১ ও প্রোটিনের পরিমাণ ১০ দশমিক ২ শতাংশ। এটি একটি উচ্চ ফলনশীল বোরো মৌসুমের জাত। এছাড়া এ জাতটিতে রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ প্রচলিত যে কোন জাতের চেয়ে অনেক কম।
তিনি বলেন, “উচ্চ প্রেটিন সমৃদ্ধ প্রিমিয়াম কোয়ালিটির নতুন জাতের ব্রি-ধানটি গত বছরের জানুয়ারিতে মাঠ পর্যায়ে সারাদেশে চাষাবাদের জন্য অবমুক্ত করা হয়। এ বছর প্রথম কৃষক পর্যায়ে চাষাবাদে গোপালগঞ্জে এ জাতের ধান হেক্টরে ৮ দশমিক ৭৫ মেট্রিক টন ফলন দিয়েছে। ধানটির জীবনকাল ১৪৮ দিন। ভাল পরিচর্যা ও অনুকূল পরিবেশ পেলে এ জাত হেক্টরে ৮ দশমিক ১৯ থেকে ৯ দশমিক ৫৭ মেট্রিক টন ফলন দিতে সক্ষম। এ ধান আবাদ করে অধিক ফলন পেয়ে কৃষক লাভবান হয়েছেন।”
ব্রি গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের ঊর্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা রোমেল বিশ্বাস বলেন, গোপালগঞ্জে ‘ব্রি-ধান ১০৭’ জাতটির প্রথম চাষাবাদে কৃষক প্রত্যাশার চেয়েও বেশি ফলন পেয়েছেন। আমাদের দেহের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করবে এ ধান। এ চালের ভাত খেয়ে দেশের বিশাল জনগোষ্ঠী পুষ্টি পাবে। পুষ্টিহীনতা দূর করতে এ ধান ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।”
এ ধানের চালের আকার লম্বা, চিকন, এবং রঙ সাদা বলে জানান এ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা
কোটালীপাড়া উপজেলার পিত্তলপাড়া গ্রামের কৃষক জেবিআর হালদার বলেন, “আমি সাধারণত হাইব্রিড জাতের ধান আবাদ করি। হেক্টরে এ ধান সাড়ে ৮ টন ফলন দেয়। কিন্তু এ বছর কৃষি বিভাগের পরামর্শে আমি প্রোটিন সমৃদ্ধ ব্রি-ধান ১০৭ আবাদ করে হেক্টর প্রতি ৮ দশমিক ৭৫ মেট্রিক টন ফলন পেয়েছি। এ জাত হাইব্রিডের মতো ফলন দিয়েছে।”
তিনি বলেন, “রোপনের ১৪৮ দিনের মাথায় ধান ঘরে তুলতে পেরেছি। অধিক ধান উৎপাদন করে আমরা লাভের মুখ দেখছি। প্রোটিন সমৃদ্ধ ধানের ভাল ফলন দেখে প্রতিবেশি কৃষকরাও এ ধানের আবাদ করতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।”
একই গ্রামের কৃষক গৌরাঙ্গ ঘোষ বলেন, “ব্রি-ধান ১০৭ চাষ করেছি। ধান হেলে পড়েনি; রোগ-বালাই হয়নি। ফলনও হাইব্রিডের সমান পেয়েছি । ধান উৎপাদনে হাইব্রিডের তুলনায় খরচ কম হয়েছে। প্রিমিয়াম কোয়ালিটির এ ধান বাজারে বেশি দামে বিক্রি করা যায়। তাই এ ধান চাষ করে আমি লাভবান হয়েছি।”
পিত্তলপাড়া গ্রামের নূর ইসলাম শেখ বলেন, “এ জাতের ধান আবাদ করে আগামী বছরের জন্য বীজ সংরক্ষণ করা যায়। এতে বীজ ক্রয়ের অনেক টাকা সাশ্রয় হয়। আগামী বছর আমি এ ধানের আবাদ বৃদ্ধি করব।”
‘ব্রি-ধান ১০৭’ আবাদ সম্প্রসারিত হলে গোপালগঞ্জবাসীর প্রোটিনের চাহিদা পূরণ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে কোটালীপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দোলন চন্দ্র রায় বলেন, এ ধানের তৈরি চালের ভাত খেলে শর্করার সঙ্গে হাই প্রোটিন পাওয়া যাবে।
“এছাড়া ব্রি উদ্ভাবিত ধানের জাতগুলো উচ্চ ফলনশীল। তাই আমরা গোপালগঞ্জে ব্রি উদ্ভবিত ধান চাষাবাদ সম্প্রসারণ করছি। ব্রি’র ধান আবাদ করে অধিক ফলন পেয়ে কৃষক লাভবান হচ্ছেন। এটি আমাদের কৃষির অন্য সুখবর।”