উপ-উপাচার্য অধ্যাপক এস কে শরিফুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, তিনি পদত্যাগ করেননি।
Published : 25 Apr 2025, 12:41 AM
খুলনা বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়-কুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ মাছুদ ও উপ-উপাচার্য অধ্যাপক এস কে শরিফুল আলমকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হলেও তা এখনো শেষ হয়নি বলে জানিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
ভিসি, প্রোভিসি ও কোষাধ্যক্ষ নিয়োগের দায়িত্বে থাকা মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব এ এস এম কাসেম বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "তাদের অব্যাহতির প্রক্রিয়া এখনও শেষ হয়নি।"
এদিকে ভিসি ও প্রোভিসি পদত্যাগ করেছেন বলে কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে।
উপ-উপাচার্য অধ্যাপক এস কে শরিফুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, তিনি পদত্যাগ করেননি।
"প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে বা শিক্ষার্থীদের কল্যাণে যদি আমাকে অব্যাহতি দিতেই চান, তবে আমাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিন। যদি সদুত্তর দিতে না পারি, তবে আমি নিজেই পদত্যাগ করব।
"গত ১ অগাস্ট ছাত্রদের সমর্থনে আন্দোলন করার পরেও যদি এই পরিণতি মেনে নিতে হয়, তবে পদত্যাগই শ্রেয়তর মনে করি।"
তিনি বলেন, "জুলাই ২৪ বিপ্লবে ছাত্র-জনতার মুক্তির জন্য সামনের সারিতে থেকে সংগ্রাম করে যেই বিপ্লবী সরকার প্রতিষ্ঠানের মঙ্গলের জন্য পদে বসাল, সেই চেয়ারে বসে ছাত্রবিরোধী বা প্রতিষ্ঠানবিরোধী কোনো কাজ করতে পারি না।
"ছাত্রদের ১ দফা যে দাবি- সেখানেও প্রোভিসির পদত্যাগের দাবি করা হয়নি এবং কুয়েট শিক্ষক সমিতিও প্রো-ভিসির পদত্যাগ চায়নি। সরকার মনে করলে প্রতিষ্ঠানের মঙ্গলের জন্য যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পিছপা হব না ইনশাআল্লাহ। তবে কুয়েট ক্যাম্পাসের কেউ আমার পদত্যাগ চায় তা আমি বিশ্বাস করি না।"
পদত্যাগের বিষয়ে মন্তব্য জানতে বারবার উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ মাছুদের সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
ভিসি-প্রোভিসি পদত্যাগ করেছেন কি না জানতে চাইলে মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব এ এস এম কাসেম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "আমার কাছে তথ্য নেই। তারা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন কি না সেটা বলতে পারছি না।"
বিশ্ববিদ্যালয় অধিশাখার অতিরিক্ত সচিব নুরুন আখতার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তার কাছেও এ বিষয়ে কোনো ‘তথ্য নেই’।
উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে কুয়েট ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের আমরণ অনশনের তৃতীয় দিন মধ্যরাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় বলেছিল, "বিশ্ববিদ্যালয়ে সাম্প্রতিক ঘটনাবলির পরিপ্রেক্ষিতে উদ্ভূত সংকট নিরসন এবং শিক্ষা কার্যক্রম দ্রুত শুরু করার লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং উপ-উপাচার্যকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রদানের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে।
একটি সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে এ দুটি পদে নতুন নিয়োগ দেওয়া হবে জানিয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, "অন্তর্বর্তীকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত কার্যক্রম চালু রাখার স্বার্থে জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকগণের মধ্য থেকে একজনকে সাময়িকভাবে উপাচার্যের দায়িত্ব অর্পণ করা হবে।"
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানোর কথা বলা হয় তথ্য মন্ত্রণালয়ের ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।
এরপর রাত ১টায় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খান কুয়েট ক্যাম্পাসে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙান।
তার আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো একটি বার্তা অনশনরত শিক্ষার্থীদের পড়ে শোনান অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন।
তিনি বলেন, সাম্প্রতিক ঘটনাবলির পরিপ্রেক্ষিতে ‘সমস্যা নিরসন ও স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর লক্ষ্যে’ কুয়েটের উপাচার্য ও উপ উপাচার্যকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
ওই ঘোষণায় ক্যাম্পাসের স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টার এলাকায় উল্লাসে ফেটে পড়েন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। সেখান থেকে তারা আনন্দ মিছিল বের করেন। পরে শিক্ষার্থীরা হলে ফিরে যান।
ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়; এতে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। পরদিন প্রশাসনিক ভবনসহ সব অ্যাকাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা।
ওই দিন দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় কুয়েটে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সংঘর্ষের ঘটনা তদন্তে কমিটি করা হয়। রাতে খানজাহান আলী থানায় অজ্ঞাত পরিচয় ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করে মামলা করে প্রশাসন।
গত ২০ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ সমাবেশ করে সব রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনকে লাল কার্ড দেখান শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে তারা উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করেন।
আগের আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় গত রোববার উপাচার্যের পদত্যাগের ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেওয়া হয়। বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে পদত্যাগের ঘোষণা না আসায় অনশনে বসেন শিক্ষার্থীরা।
এই পরিস্থিতিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সি আর আবরার বুধবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে কুয়েট ক্যাম্পাসে পৌঁছান। তবে দীর্ঘ সময় বুঝিয়েও তিনি অনশন ভাঙাতে পারেননি।
কীভাবে এই আন্দোলন ছয় দফা থেকে উপাচার্যের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে পরিণত হল, সে বিষয়টি শিক্ষার্থীরা উপদেষ্টাকে বলেন। এসময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা উপাচার্যবিরোধী স্লোগান দিতে থাকেন।
এরপর বুধবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় কুয়েটের ৩৭ শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে নেওয়ার পাশাপাশি সব হল খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৪ মে শুরু হবে বলে সভায় সিদ্ধান্ত আসে।
আমরণ অনশন কর্মসূচির তৃতীয় দিনে শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন অনেক শিক্ষার্থী। তবে উপাচার্যের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন তারা।
এ পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) গঠন করা কমিটির তিন সদস্য কুয়েট ক্যাম্পাসে যায়। রাতে উপাচার্য ও উপ উপাচার্যের অপসারণের বার্তা দিয়ে তারা শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙান।