কুষ্টিয়ায় দরপত্র ছিনতাইয়ের মামলা, আসামি আওয়ামী লীগ নেতা

দরপত্র ছিনতাইয়ের মামলায় দুই জন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতিতে আসামি করা হয়েছে।

কুষ্টিয়া প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Feb 2023, 12:59 PM
Updated : 27 Feb 2023, 12:59 PM

কুষ্টিয়া পৌরসভার দরপত্র ছিনতাই ও মেয়র কার্যালয়ে গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্রসহ টাকা চুরির অভিযোগে পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। 

কুষ্টিয়া মডেল থানায় রোববার রাতে মামলা দুটি রেকর্ড করা হয় বলে ওসি দেলোয়ার হোসেন খান জানান। 

দরপত্র ছিনতাইয়ের অভিযোগে ইব্রাহিম হোসেনের করা মামলায় ছয় জনের নামোল্লেখসহ ২০/২৫ জন অজ্ঞাতনামা এবং চুরির অভিযোগে পৌরসভার প্রশাসনিক কর্মকর্তা মাহমুদ রেজা চৌধুরীর মামলায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে। 

টেন্ডার ছিনতাই এবং চুরির অভিযোগের সঙ্গে সিসি ক্যামেরা ভাঙা, কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক চুরি – এ দুটি ঘটনার মধ্যে যোগসূত্র রয়েছে বলে মনে করছে পৌর কর্তৃপক্ষ।  

দরপত্র ছিনতাইয়ের অভিযোগে দ্রুত বিচার আইনের মামলায় এজাহারভুক্ত হয়েছেন পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ কৌশিক আহমেদ ওরফে বিচ্ছু (৪০), ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি আফিল উদ্দিন (৫০), শহর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আমলাড়ার বাসিন্দা মানব চাকী (৩০), কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি কোর্টপাড়ার ফেরদৌস খন্দকার (৩৫), আড়ুয়াপাড়ার হাসিব কোরাইশী (২৭) এবং আমলাপাড়ার সুজন ঘোষসহ (৩৫) অজ্ঞাত পরিচয় আরও ২০/২৫ জন। 

মেয়র কার্যালয়ে চুরির অভিযোগের মামলায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করা হয় বলে এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কুষ্টিয়া মডেল থানার এসআই দিপঙ্কর কুমার দেবনাথ জানিয়েছেন। 

দরপত্র ছিনতাই মামলার নথি থেকে জানা যায়, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি দুপুর পৌনে ১টায় বাদী মেয়র কার্যালয়ের বারান্দায় রক্ষিত টেন্ডার বক্সে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পৌর এলাকাধীন ১০টি হাট-বাজার ইজারার দরপত্র ফেলতে যান। 

এ সময় আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা ‘সন্ত্রাসীরা’ হঠাৎ তার হাত থেকে জোড়পূর্বক দরপত্র ছিনিয়ে নিয়ে নিচে ফেলে দেয়। এরপর তাদের সহযোগীরা দরপত্রগুলি ছিঁড়ে কয়েকটি পাশের ড্রেনে ফেলে দেয় এবং আরও কয়েকটি নিয়ে চলে যায়। 

ওই সময় তারা বাদীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে বলেও মামলায় অভিযোগ করা হয়। 

ঘটনার সময় সখানে নিরাপত্তা রক্ষায় কুষ্টিয়া মডেল থানার পুলিশ উপস্থিত থাকলেও তাকে কোনো সাহায্য করেনি বলে বাদীর অভিযোগ। 

মামলার বিষয়ে কুষ্টিয়া পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ কৌশিক আহমেদ ওরফে বিচ্ছু বলেন, “আমি ঘটনা সম্পার্কে কিছুই জানি না; অথচ আমার নামে মামলা হয়েছে শুনছি। এটা আমার বিরুদ্ধে একটা পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছুই না।” 

কুষ্টিয়া শহর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাসিব কোরাইশী বলেন, “ঘটনাটি আমি শুনেছি, তবে এ ঘটনায় আমি বা আমার কোনো লোকজন জড়িত নয়।” 

তবে এ বিষয়ে কুষ্টিয়া শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আতা বলেন, “এখানে মামলার এজাহারে যাদের নাম এসেছে তারা আমার কোনো লোক নয়। কেউ হয়ত আমার নাম ভাঙিয়ে এসব করতে পারে। এরা দলের অন্য কোনো শাখার নেতাকর্মী হতে পারে।” 

কুষ্টিয়া শহর আওয়ামী লীগ সভাপতি তাইজাল আলী খান বলেন, “শহর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদধারীর বিরুদ্ধে টেন্ডার ছিনতাই অভিযোগে মামলা হয়েছে। সে বিষয়ে আমি সঠিক কিছু জানি না। যিনি মামলা করেছেন তিনি তো বুঝে শুনেই মামলা করেছেন, তিনি বুঝবেন, আইন আইনের গতিতে চলবে।” 

এদিকে কুষ্টিয়া পৌরসভার মেয়র আনোয়ার আলীর কার্যালয়ের আশপাশের সিসি ক্যামেরা ভেঙে গ্রিল কেটে দড়জার তালা ভেঙে চুরির ঘটনায় রোববার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করেছেন মেয়র আনোয়ার আলী। 

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, তার কার্যালয়ের গ্রিল কেটে তালা ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করে ড্রয়ার ভেঙে ফাইলপত্র তছনছ করেছে। এখানে তো এমন কোনো টাকা পয়সাও থাকে না যা চুরি করবে। 

“তবে যারাই এ কাজটি করুক, তারা মূলত আমাকে হেয় করার জন্য এবং পৌরসভার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য করেছে। তারা কৌশলে পৌর চত্বরের সকল সিসি ক্যামেরা ঘুরিয়ে দিয়েছে, পার্শ্ববর্তী শিল্পকলা একাডেমি ভবনের ক্যামেরা পর্যন্ত ঘুরিয়ে দিয়েছে।” 

কম্পিউটারের হার্ডডিস্কসহ কিছু ডিভাইস চুরির সঙ্গে দরপত্র ছিনতাইয়ে কোনো সম্পর্ক আছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে পুলিশকে বলা হয়েছে, বলেন মেয়র। 

কুষ্টিয়া মডেল থানার ওসি দেলোয়ার হোসেন খান বলেন, পৌরসভার মেয়রের কার্যালয়ে চুরি এবং দরপত্র দাখিলে বাধাদানসহ ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। 

“মামলায় এজাহারভুক্তদের কার কী পরিচয় আইনে সেটা দেখার কোনো সুযোগ নেই। যারাই এই চুরির সঙ্গে জড়িত থাক তাদের খুব শিগগিরই শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করবে পুলিশ। তথ্যপ্রযুক্তির যুগে এসব করে পার পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।” 

গত বৃহস্পতিবার দুপুরে মেয়রের কার্যালয়ের বারান্দায় রক্ষিত টেন্ডার বক্সে হাট-বাজার ইজারার দরপত্র ফেলতে যাওয়া একজন দরদাতা লাঞ্ছিত হন এবং তার কাছে থাকা ১০টি দরপত্র পুলিশের সামনেই ছিনিয়ে নিয়ে সন্ত্রাসীরা ছিঁড়ে ফেলে এবং কয়েকটি নিয়ে পালিয়ে যায় বলে অভিযোগ উঠেছে। 

এর দুদিন পর শনিবার রাতে কুষ্টিয়া পৌরসভার মেয়র আনোয়ার আলীর কার্যালয়ের কক্ষে চুরির ঘটনা ঘটে। সেখান থেকে ক্যামেরা, টাকা, ইলেকট্রনিক ডিভাইসসহ গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র চুরি হয় বলে অভিযোগ পৌর কর্তৃপক্ষের।

Also Read: কুষ্টিয়ায় হাটবাজার ইজারার দরপত্র ছিনতাই