দুই বৃদ্ধের খেলায় কেউ জেতেনি, কেউ হারেনি। রেফারি তাদের দুজনকেই যুগ্মভাবে জয়ী ঘোষণা করেন।
Published : 25 Apr 2025, 11:52 PM
খাজা আহম্মেদের বয়স পেরিয়েছে ৭০ বছর, কিন্তু বলী খেলার নেশায় এখনো প্রতিবছর ১২ই বৈশাখ লালদীঘি মাঠে ছুটে আসেন ঐতিহ্যবাহী জব্বারের বলী খেলায় অংশ নিতে।
পেশায় কৃষক আহম্মেদ থাকেন নগরীর পতেঙ্গা এলাকায়। এবার তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন সমবয়সী মফিজ।
দুই বৃদ্ধের খেলায় কেউ জেতেনি, কেউ হারেনি। রেফারি তাদের দুজনকেই যুগ্মভাবে জয়ী ঘোষণা করেন।
আহম্মেদ জানালেন, সেই যুবক বয়স থেকেই অংশ নিচ্ছেন জব্বারের বলী খেলায়। দেখতে দেখতে পেরিয়ে গেছে পাঁচ দশক!
“যতটুকু স্মরণ আছে সেই স্বাধীনতা যুদ্ধের পর ১৯৭৪ সাল থেকে এ প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছি। কয়েক বছর ধরে দুই ছেলেকেও সাথে করে নিয়ে আসি।”
তার দুই ছেলের মধ্যে ছোট ছেলে কাইয়ুম জয়ী হতে না পারলেও বড় ছেলে সেলিম জয়ী হয়েছেন।
সেলিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বললেন, কর্ণফুলী ইপিজেডে একটি পোশাক কারখানায় ওয়াশিং বিভাগের সুপারভাইজার তিনি।
“শখের বশে বাবাকে দেখে ২০১২ সাল থেকে খেলতে আসি। গত দুই বছর ধরে ছোট ভাইও আসছে আমাদের সাথে।”
সেলিম জানান, প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার জন্য বাড়িতে তারা রুটিন করে অনুশীলন করেন। তাদের বাবা নিজের অনুশীলন করার পাশাপাশি তাদের প্রশিক্ষণ দেন।
আব্দুল জব্বারের বলী খেলার ১১৬তম আসরের চ্যাম্পিয়ন শরীফ।
চট্টগ্রাম শহরের বদর পাতির ব্যবসায়ী আব্দুল জব্বার সওদাগর ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে এ অঞ্চলের যুবকদের শারীরিকভাবে প্রস্তুত করতে ১৯০৯ সালে চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে কুস্তি প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন, কালক্রমে তা পরিচিত হয়ে ওঠে ‘জব্বারের বলী খেলা’ নামে।
বাংলা পঞ্জিকা অনুসারে বৈশাখের ১২তম দিন লালদীঘি মাঠে জব্বারের বলী খেলা হয় প্রতিবছর। এবার বসেছিল এ প্রতিযোগিতার ১১৬তম আসর।
চট্টগ্রামের পাশাপাশি আশেপাশের বিভিন্ন উপজেলা ও জেলা থেকেও প্রতিযোগীরা আসেন খেলায় অংশ নিতে। এটা কারো ‘জীবিকা নয়’, বিনোদনের জন্য মনের টানে কিশোর থেকে বৃদ্ধ নানা বয়সী মানুষ এ প্রতিযোগিতায় অংশ নেন।
এবারের আসরে জব্বারের বলী খেলায় শিরোপা ধরে রেখেছেন কুমিল্লার শরীফ। শুক্রবারের ফাইনালে একই জেলার রাশেদকে হারিয়ে বাজিমাত করেছেন তিনি।
চট্টগ্রাম লালদিঘীর মাঠে ঐ্যতিহ্যবাহী আব্দুল জব্বারের বলী খেলায় দর্শক মাতিয়েছেন অন্য কুস্তিগিররাও।
এ প্রতিযোগিতাকে কেন্দ্র করে যে বৈশাখী মেলা হয়, তা রূপ নিয়েছে চট্টগ্রামবাসীর প্রাণের মেলায়। বলী খেলার আগের দিন ও পরের দিন মিলিয়ে তিন দিনব্যাপী মেলা বসে লালদীঘি মাঠের আশপাশের সড়কজুড়ে।
এ মেলার জন্য সারা বছর অপেক্ষায় থাকেন চট্টগ্রামবাসী। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দোকানিরা নানা ধরনের পণ্য নিয়ে মেলায় আসেন।
মাটির তৈরি তৈজসপত্র, খেলনা, ফুলদানি, পুতুল, বেত-কাঠ ও বাঁশের তৈরি আসবাব, হাতপাখা, মাছ ধরার পলো, বেতের তৈরি ডালা, কুলো, ফলদ ও বনজ গাছের চারা, ফুল গাছের চারা, মুড়ি মুড়কি, পাটি, মাদুর, চুড়ি, প্রসাধনী সামগ্রী, দা-বটি, ছুরিসহ প্রায় সব পণ্যই পাওয়া যায় এ মেলায়। মেলা ঘিরে নিয়ে শিশুদেরও আনন্দের কমতি থাকে না।
আরো পড়ুন