৩০ মিনিটের বেশি সময় খেলার পর প্রধান রেফারি হাফিজুর রহমান ‘টেকনিক্যাল আউট’ ঘোষণা করেন রাশেদকে।
Published : 25 Apr 2025, 06:29 PM
চট্টগ্রামে ঐতিহ্যবাহী আব্দুল জব্বারের বলী খেলায় শিরোপা ধরে রেখেছেন কুমিল্লার শরীফ।
শুক্রবার বলী খেলার ১১৬তম আসরে অংশ নিয়ে এবারও একই জেলার রাশেদকে হারিয়ে বাজিমাত করেছেন শরীফ।
৩০ মিনিটের বেশি সময় খেলার পর প্রধান রেফারি হাফিজুর রহমান ‘টেকনিক্যাল আউট’ ঘোষণা করেন রাশেদকে।
কুমিল্লার হোমনা উপজেলার বাসিন্দা শরীফ স্থানীয়দের কাছে ‘বাঘা শরীফ’ নামে পরিচিত।
গতবছর জব্বারের বলী খেলায় প্রথমবার অংশ নিয়েই তিনি বাজিমাত করেন। আর রানার্সআপ হয়েছিলেন রাশেদ।
গেল বছরের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী এবারও ফাইনাল জমিয়ে দেন প্রথম ১৫ মিনিট। কৌশল ও শক্তির খেলায় দুজনই ছিলেন সমানে সমান।
গতবার ১০ মিনিট ৪২ সেকেন্ড খেলার পর রাশেদ নিজ থেকেই পরাজয় শিকার করে শরীফের হাত তুলে ধরেন; যে কারণে রেফারি শরীফকে বিজয়ী ঘোষণা করেছিলেন।
কিন্তু এবার টানা ১৫ মিনিট খেলে ফেলার পরও যখন জয়-পরাজয় নির্ধারণ হয়নি, তখন মেলা কমিটির সদস্য সচিব শওকত আনোয়ার বাদল খেলার মঞ্চে উঠে মাইকে বলেন, এবার ‘যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন’ ঘোষণা করা হবে না।
“তাদের কেউ যদি জেতার প্রবণতা না দেখায় তাহলে তাদের বহিষ্কার করে তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানে থাকা দুইজনকে চ্যাম্পিয়ন-রানার্সআপ ঘোষণা করা হবে।”
শওকত আনোয়ারের এ ঘোষণার পর শরীফ ও রাশেদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়তে থাকে। দর্শকরাও এ সময় করতালি আর ঢোলের তালে তালে দুই প্রতিযোগীকে উৎসাহ দিতে থাকেন।
খেলা ২০ মিনিট চলার পরও কোনো ফলাফল না আসায় ফের শওকত আনোয়ার মঞ্চে উঠে রেফারিদের সঙ্গে কথা বলেন।
প্রতিযোগিতার প্রধান অতিথি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনের কাছে জানতে চান কীভাবে জয়ী ঘোষণা করা হবে।
মেয়র অতিথি মঞ্চে দাঁড়িয়ে হাতে মাইক নিয়ে বলতে থাকেন, “খেলা হবে… ”
এসময় রেফারি ফের খেলা চালিয়ে যাওয়ার সংকেত দিয়ে ঘোষণা করেন, “দুই জনের মধ্যে যিনি মাটিতে পড়ে যাবেন তিনি হবেন বিজিত, আর যিনি ফেলবেন তিনি হবেন জয়ী।”
এ ঘোষণা দেওয়ার পাঁচ মিনিটের মধ্যে আসে খেলার ফলাফল। শরীফ তার শক্তি প্রদর্শন করে প্রতিদ্বন্দ্বী রাশেদকে মাটিতে ফেলার চেষ্টা করলে রাশেদ মঞ্চের রশি ধরে রাখেন।
এ কারণে রাশেদকে ‘টেকনিক্যাল আউট’ ঘোষণা করেন প্রধান রেফারি হাফিজুর রহমান। ততক্ষণে খেলা গড়িয়ে গেছে ৩৩ মিনিট ৩ সেকেন্ড।
এ বছর প্রথম রাউন্ডে ৮০ জন অংশ নিয়েছিলেন। পরবর্তীতে প্রথম রাউন্ডের চারজন ও আগের বছরের শীর্ষ চারজন নিয়ে হয় চ্যালেঞ্জ রাউন্ড।
গত বছর তৃতীয় স্থান অধিকার করা খাগড়াছড়ির সৃজন চাকমা এবারের আসরে অংশ নেননি। তাই গত বছর অংশ না নিলেও এবার অংশ নিতে আসা ১১৪তম আসরের চ্যাম্পিয়ন শাহজালালকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ রাউন্ডে খেলার সুযোগ দেওয়া হয়।
চ্যালেঞ্জ রাউন্ডে চট্টগ্রামের কাঞ্চনকে হারিয়ে কুমিল্লার কামাল, একই জেলার দিপুকে হারিয়ে শরীফ সেমিনাল উঠে যান।
অন্যদিকে কুমিল্লার শাহজালাল ও রাশেদ যথাক্রমে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের রাসেল ও রাঙামাটির রুবেলকে হারিয়ে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেন।
অর্থাৎ সেমিফাইনালে অংশ নেওয়া সবাই ছিলেন কুমিল্লার বাসিন্দা।
ফিরে এসে চমক দেখাতে পারেননি শাহজালাল
গত আসরে প্রতিযোগিতার মাঠে আসলেও খেলায় অংশ নেননি আগের আসরের চ্যাম্পিয়ন শাহজালাল। শরীফকে সমর্থন দিয়ে খেলা থেকে বিরত থাকেন তিনি।
এ বছর অংশ নিয়ে সরাসরি চ্যালেঞ্জ রাউন্ডে খেলা শাহজালাল সীতাকুণ্ডের রাসেলকে দেড় মিনিটের মধ্যে পরাস্ত করে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেন।
সেমিফাইনালে আট মিনিট খেলার পর ‘পেটে টান’ লাগার কারণে খেলা ছেড়ে দেন শাহজালাল। তাই রেফারি রাশেদকে জয়ী ঘোষণা করেন।
তৃতীয়-চতুর্থ স্থান নির্ধারণীতে কামালের কাছে মাত্র আড়াই মিনিটে ধরাশায়ী হয়ে যান শাহজালাল।
মাঠে ও আশেপাশের ভবনে হাজারো দর্শক
বলী খেলা শুরুর আগে দুপুরে থেকেই নগরীর লালদীঘি ময়দানে দর্শকরা জড়ো হতে শুরু করেন। ঐতিহ্যবাহী এ বলী খেলা দেখতে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় মাঠ। ঢোল বাজনার তালে তালে আর করতালিতে হাজারো দর্শক সমর্থন জানায় বলীদের।
বিকাল ৪টায় প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম নগর পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজ। আর খেলা শেষে জয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।
৮০ জন প্রতিযোগীর মধ্যে প্রথম রাউন্ডে জেতা ৪০ জনকে ক্রেস্ট দেওয়া হয়। চ্যাম্পিয়ন বলী শরীফ পেয়েছেন ৩০ হাজার টাকা। আর রানার্সআপ রাশেদ ২০ হাজার, তৃতীয় হওয়া কামাল ৬ হাজার ও চতুর্থ স্থান লাভ করা শাহজালাল পেয়েছেন ৪ হাজার টাকা।
চট্টগ্রাম শহরের বদর পাতির ব্যবসায়ী আব্দুল জব্বার সওদাগর ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে এ অঞ্চলের যুবকদের শারীরিকভাবে প্রস্তুত করতে ১৯০৯ সালের ১২ বৈশাখ চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে আয়োজন করেন কুস্তির, যা বলী খেলা নামে পরিচিত।
এবছর বলী খেলার ১১৬ তম আসর। খেলার আগের দিন ও পরের দিন মিলিয়ে মোট তিন দিন হয় বৈশাখী মেলা।