পাবনা জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ডিসি মু. আসাদুজ্জামান বলেন, “পাবনা-১ আসনে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।”
Published : 31 Dec 2023, 08:52 PM
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচারে বাধা, হামলা ও পাল্টাপাল্টি মামলায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে পাবনা-১ নির্বাচনি আসন।
আওয়ামী লীগ প্রার্থী জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুর নির্দেশে শুক্রবার প্রচারে হামলার অভিযোগ করেন ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী অধ্যাপক আবু সাইয়িদ। এ ঘটনায় নৌকার কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন তিনি।
আবার স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মীদের বিরুদ্ধে সাঁথিয়ায় আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ভাঙচুর ও বোমা হামলার অভিযোগে বিস্ফোরক আইনে মামলা করেছেন নৌকার সমর্থকরা।
রোববার দুপুরে পাবনা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে নির্বাচনি এজেন্টদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন সাঁথিয়া ও বেড়া উপজেলার আংশিক নিয়ে গঠিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও তথ্যমন্ত্রী আবু সাইয়িদ।
এ সময় ট্রাক প্রতীকের প্রধান নির্বাচনি এজেন্ট আব্দুল বাতেন, সাঁথিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ দেলোয়ার, মিরাজুল ইসলাম, মতিউর রহমান দুলাল, মোস্তাফিজুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
মামলার বরাতে পুলিশ জানায়, ২৯ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ট্রাক মার্কার পক্ষে নির্বাচনি প্রচার মিছিল সাঁথিয়া বাইপাস রোড দিয়ে যাওয়ার সময় নৌকার সমর্থকরা অতর্কিত হামলা চালায়। এ ঘটনায় অধ্যাপক আবু সাইয়িদ বাদী হয়ে সাঁথিয়া পৌর মেয়র মাহবুবুল আলম বাচ্চুসহ ১৪ জনকে আসামি করে মামলা করেন।
একই দিন সন্ধ্যায় সাঁথিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় সোহেল রানা খোকন বাদী হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রধান নির্বাচনি এজেন্টসহ ৩৯ জনকে আসামি করে বিস্ফোরকসহ কয়েকটি ধারায় মামলা করেন।
এ ঘটনায় আওয়ামী লীগ প্রার্থীর আরেক সমর্থক স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের বিরুদ্ধে মারপিটের অভিযোগ এনে আরও একটি মামলা করেন।
পাবনায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রচারে আবারও হামলা, পুলিশ বলছে ‘তেমন ঘটনা ঘটেনি’
পাবনায় স্বতন্ত্রের গাড়িবহরে হামলা-ভাঙচুর, অভিযোগ নৌকার বিরুদ্ধে
পাবনার স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু সাইয়িদের প্রচারে ‘বাধা’, অভিযোগ নৌকার বিরুদ্ধে
সংবাদ সম্মেলনে স্বতন্ত্র প্রার্থী অধ্যাপক আবু সাইয়িদ অভিযোগ করেন, “শুক্রবার আমার ট্রাক মার্কার প্রচার মিছিলে নৌকার সমর্থক চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা হামলা করে। সন্ত্রাসীদের হামলায় বেড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রশিদ দুলালসহ আটজন আহত হয়। সাঁথিয়া আওয়ামী লীগ কার্যালয়টি থানার ঠিক সামনে। আমাদের মিছিল আওয়ামী লীগ কার্যালয় পার হওয়ার সময় পুলিশ উপস্থিত ছিলো।
“তাদের কাছে ভিডিও ও সিসিটিভি ফুটেজ আছে। আমাদের মিছিলে হামলার পর নৌকা সমর্থকরা দলীয় কার্যালয়ের লাইট নিভিয়ে নিজেরাই ভাঙচুর করে আমাদের লোকজনের বিরুদ্ধে মিথ্যে মামলা করেছে। এখানে আব্দুল বাতেনের মত একজন বয়স্ক মুক্তিযোদ্ধা ককটেল নিক্ষেপ করেছেন বলেও হাস্যকর অভিযোগ আনা হয়েছে।”
আবু সাইয়িদ আরও বলেন, “নির্বাচনি মাঠ থেকে আমাকে সরাতে আমার প্রধান এজেন্টসহ সব এজেন্টের বিরুদ্ধে মিথ্যে মামলা করা হয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে আমি এই মামলা বাতিলের দাবি জানাচ্ছি। প্রশাসন যদি নিরপেক্ষ আচরণ না করে কাউকে অযথা হয়রানি করে, তাহলে যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির জন্য তারাই দায়ী থাকবেন।”
স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রধান এজেন্ট আব্দুল বাতেন বলেন, “নৌকার প্রার্থী ও তার অনুগতরা ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাইছে। আমরা জানতে চাই, সাঁথিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে জাতির পিতা ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি কারা অবমাননা করল? পুলিশ ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করুক। সবাই জানতে পারবে।”
এদিকে, নৌকার প্রার্থী শামসুল হক টুকুও প্রশাসনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ করেছেন।
তিনি বলেন, “স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে আমাদের যেখানে প্রোগ্রাম সেখানে উসকানি দিতে উপস্থিত হচ্ছেন। তার নির্দেশে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ভাঙচুর ও আমার কর্মীদের মারপিট করা হলেও পুলিশ ব্যবস্থা নেয়নি। অবিলম্বে আসামিদের গ্রেপ্তার না করা হলে আমরা কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হব।”
সাঁথিয়া থানার ওসি আনোয়ার হোসেন বলেন, “পক্ষপাতের অভিযোগ সঠিক নয়। আমরা উভয় পক্ষের অভিযোগ পেয়েছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”
পাবনা জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ডিসি মু. আসাদুজ্জামান বলেন, “পাবনা-১ আসনে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নিরপত্তা বাড়ানো হয়েছে। নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ হবে। কাউকে অযথা হয়রানির সুযোগ নেই।”