গাজীপুর শিল্প পুলিশ-২ এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারওয়ার আলম বলেন, “শ্রমিকদের দাবিটি ন্যায্য ও যৌক্তিক।”
Published : 03 Apr 2024, 12:50 AM
গাজীপুরে কেয়া গ্রুপের একাধিক কারখানায় বিক্ষোভের পর শ্রমিকরা অর্জিত ছুটির টাকা এবং ঈদের বোনাস পেয়েছেন। কিন্তু তারা ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন পাননি বলে অভিযোগ করেছেন।
মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনের মতো কোনাবাড়ী থানার জরুন এলাকায় কেয়া গ্রুপের কারখানার ফটকে দিনভর বিক্ষোভের পর সন্ধ্যায় শ্রমিক বিকাশের মাধ্যমে টাকা দেওয়া হয়।
কিন্তু মূল বেতনের দাবিতে সন্ধ্যার পরও শ্রমিকরা বিক্ষোভ অব্যাহত রাখলে বহিরাগতরা হামলা চালায়; এতে দুজন সহকর্মী আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ করেন শ্রমিকরা।
পুলিশ ও শ্রমিক জানায়, জরুন এলাকায় কেয়া গ্রুপের একাধিক শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সোমবার কেয়া নিট কম্পোজিট লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা ফেব্রুয়ারি মাসের বকেয়া বেতন, ঈদ বোনাস ও অর্জিত ছুটির বকেয়া পাওনা টাকার দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। পরে তাদের সঙ্গে কেয়া স্পিনিং মিলের শ্রমিকরাও যোগ দেয়।
পরে বিকালে কেয়া স্পিনিং মিলের কিছু শ্রমিককে ঈদ বোনাস দেওয়া হয়। এরপরও তারা কর্মবিরতি চালিয়ে যান। ইফতারের পর স্পিনিং মিলের শ্রমিকদের সঙ্গে কেয়া নিট কম্পোজিট লিমিটেডের শ্রমিকরা একতাবদ্ধ হয়ে কোনাবাড়ী-কাশিমপুর আঞ্চলিক সড়ক অবরোধ করে রেখে।
রাত ১১টার সময় তারা রাস্তা থেকে অবরোধ তুলে নেন। কিন্তু ফটকে রাতের পালার শ্রমিকরা অবস্থান নেয়।
অন্য শ্রমিকরা তাদের দাবি পূরণ না হওয়ায় মঙ্গলবার সকাল থেকে পুনরায় কারখানার সামনে কোনাবাড়ী-কাশিমপুর আঞ্চলিক সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। সকাল ১০টার দিকে পুলিশ তাদের সড়ক থেকে সরিয়ে দিয়ে যানচলাচল স্বাভাবিক করে।
একাধিক শ্রমিক বলেন, সোমবার সন্ধ্যায় শুধু কেয়া স্পিনিং মিলের কিছু শ্রমিকদের ঈদ বোনাস দেওয়া হয়েছে। তাদের বকেয়া মাসের বেতন ও অর্জিত ছুটির পাওনা দেওয়া হয়নি। এ কারণে সকাল থেকে কেয়া গ্রুপের কেয়া নিট কম্পোজিট লিমিটেড, কেয়া স্পিনিং মিলস্, কেয়া কটন, কেয়া ইয়ার্ন মিলস, কেয়া ডাইং অ্যান্ড নিটিং এবং কেয়া কসমেটিকস কারখানার শ্রমিকরাও একই দাবিতে আন্দোলনে অংশ নেয়।
গাজীপুর শিল্প পুলিশ-২ এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারওয়ার আলম মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কারখানা এলাকায় পরিদর্শনে যান। তিনি কারখানার ফটকের সামনে অবস্থান নেওয়া শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেন। শ্রমিকরা তার কথা শুনার পর শান্তভাবে অবস্থান গ্রহণ করে। পরে তিনি মালিক পক্ষকেও শ্রমিকদের বকেয়া পাওনা দ্রুত পরিশোধের ব্যবস্থা নেওয়ার তাগিদ দেন।
এ বিষয়ে সারওয়ার আলম বলেন, “শ্রমিকদের দাবিটি ন্যায্য ও যৌক্তিক। তারা বেতন পাচ্ছেন না, অর্জিত ছুটির টাকা পাচ্ছেন না, বোনাস পাচ্ছেন না। এগুলো দ্রুত পরিশোধ করা উচিত। শ্রমিকরা কাজ বন্ধ করে অবস্থান নিয়ে আছে। কারখানার পরিবেশ শান্ত রয়েছে।”
মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে কারখানার শ্রমিকরা জানায়, দিনভর আন্দোলনের পর সন্ধ্যায় কেয়া স্পিনিং মিল ব্যতীত অন্যান্য কারখানার শ্রমিকদের গত বছরের অর্জিত ছুটির টাকা ও ঈদ বোনাস বিকাশের মাধ্যমে পরিশোধ করা হয়। কিন্তু কেয়া স্পিনিং মিলের কিছু শ্রমিক ছুটির টাকা ও ঈদ বোনাস পাননি।
এ কারণে তাদের মধ্যে অসন্তোষ থেকে যায়। ইফতারের পর কারখানা থেকে পণ্যবাহী তিনটি গাড়ি বের হওয়ার জন্য প্রস্তুত করা হয়। কিন্তু শ্রমিকরা গাড়ি বের হতে বাধা দেয়।
পরে বহিরাগত ও কারখানার কতিপয় কর্মচারী হামলা চালায় বলে অভিযোগ করেন শ্রমিকরা। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়। দুজনকে স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তারা হলেন- নিটিং অপারেটর মো. আইয়ূব আলী (৩০) এবং জুনিয়র অপারেটর (সুয়িং) মোছা. মলিনা খাতুন (২৫)।
কোনাবাড়ি থানার ওসি এ কে এম আশরাফ উদ্দিন শ্রমিকদের অর্জিত ছুটির টাকা ও ঈদ বোনাস পরিশোধের বিষয়টি জানিয়ে বলেন, “কারখানা থেকে পণ্যবাহী গাড়ি বের হতে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে শ্রমিকদের মধ্যে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে সমঝোতার চেষ্টা চলছে।
এসব বিষয় নিয়ে জানতে একাধিকবার কারখানাগুলির মালিক আব্দুল খালিক পাঠানের মোবাইলে কল দেওয়া হলেও তিনি ধরেননি।