মুরাদ জং ২০০৮ সালে নৌকা নিয়ে ১ লাখ ১২ হাজার ভোটের ব্যবধানে জিতেছিলেন। অন্যদিকে সাইফুল ইসলামের ধামসোনা ইউনিয়নে ভোটার পৌনে দুই লাখ।
Published : 01 Jan 2024, 11:33 PM
রাজধানী ঢাকার উপকণ্ঠ সাভারের একাংশের ঢাকা-১৯ আসনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান এবার কঠিন এক বাস্তবতার মুখোমুখি।
নৌকা প্রতীক পেলেও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের একটি বড় অংশের সমর্থন পাচ্ছেন না তিনি। ক্ষমতাসীন দল স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া উন্মুক্ত করে দেওয়ার পর দলটির দুই জন নেতা ভোটে দাঁড়িয়েছেন। তাদের সঙ্গে ভিড়েছেন বহুজন।
নৌকার এনামুরকে ডোবাতে আপ্রাণ চেষ্টায় আছেন ঈগল প্রতীক নিয়ে লড়া সাবেক সংসদ সদস্য তালুকদার মো. তৌহিদ জং মুরাদ, যার হাত ধরে আওয়ামী লীগ এই আসনটি ২০০৮ সালে উদ্ধার করে ১৯৭৩ সালের পর প্রথমবারের মতো।
ধামসোনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের পদ ছেড়ে ট্রাক প্রতীকে আছেন আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ সাইফুল ইসলামও।
দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী স্থানীয় বাসিন্দা, অন্যদিকে এনামুরের বাড়ি নরসিংদীতে, যিনি ১৯৯১ সালে সাভারের মুক্তির মোড়ে এনাম ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করে এলাকায় থাকতে শুরু করেন।
তার সব পরিচিতি এই ক্লিনিককে কেন্দ্র করে। তবে বিএনপির বর্জনের এই ভোটে অন্যান্য নানা বিষয়ের পাশাপাশি আঞ্চলিকতাও যখন একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্ণায়ক হয়ে উঠার ইঙ্গিত দিচ্ছে, তখন তিনি আছেন বেকায়দায়।
সাভার পৌরসভার তালবাগ এলাকার আবাস গড়লেও তার স্বজনরা এই এলাকায় থাকেন না। অন্যদিকে মুরাদ জংয়ের বাড়ি আশুলিয়া থানার টঙ্গাবাড়ি ইউনিয়নে আর সাইফুলের বাড়ি একই থানার ধামসোনা ইউনিয়নে।
ভোটের প্রচারে নির্বাচনি এলাকায় নানা সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। হামলা হয়েছে দুই স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্যাম্পেই। এ নিয়ে চাপা উত্তেজনাও আছে।
নির্বাচনি এলাকাটি সাভার ও আশুলিয়া থানা এলাকার সাভার পৌরসভা, সাভার সদর ইউনিয়ন, আশুলিয়া, বিরুলিয়া, পাথালিয়া, ধামসোনা এবং আরও কয়েকটি ইউনিয়নে বিস্তৃত।
সাভার পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বারেক মোল্লার বক্তব্যে নির্বাচনের সার্বিক চিত্র উঠে এসেছে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দলের পদধারী নেতাকর্মীরা বেশিরভাগ নৌকার প্রার্থীর সঙ্গে আছেন। আবার যেহেতু দলীয় সভাপতি স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্যও নির্বাচন উন্মুক্ত করে দিয়েছেন, তাই কিছু নেতাকর্মী মুরাদ জংয়ের পক্ষেও কাজ করছেন।
“আমাদের জানামতে সাইফুল নির্বাচন উপলক্ষে বেশ খরচ করছেন। তার প্রচুর ব্যানার-ফেস্টুন দেখি, তাতে বোঝা গেল কিছু মানুষ তার সঙ্গেও ভিড়ছে।”
তিনি বলেন, “রানা প্লাজা ধসের কারণে মুরাদ সাহেবের পা পিছলায়া গেল। ওই সময় আহতদের সেবা করে নেত্রীর (শেখ হাসিনা) নজরে আসলেন এনাম সাহেব। আগে কোনো পদপদবি ছিল না। এখন ঢাকা জেলার সহসভাপতি পদ আছেন তিনি।”
রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় নৌকায় চড়েন এনামুর
এনামুর রহমানের নৌকা প্রতীকে ভোটে লড়ার সঙ্গে বাংলাদেশের পোশাক খাতের সবচেয়ে মর্মান্তিক এক দুর্ঘটনার স্মৃতি জড়িয়ে।
২০১৩ সালের রানা প্লাজা ধসের পর আহতদের একটি বড় অংশের চিকিৎসা হয়েছিল এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এতে এনামুরের প্রশংসা ছড়িয়ে পড়ে।
এর আগে আওয়ামী লীগের সঙ্গে যোগাযোগ না থাকলেও ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনে তাকে নৌকা প্রতীক দেয় ক্ষমতাসীন দল।
বিএনপি-জামায়াত জোটের বর্জনের সেই নির্বাচনে জনপ্রিয়তার পরীক্ষা দিতে হয়নি এনামুরকে। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে সংসদে আসেন তিনি। একাদশ সংসদ নির্বাচনেও তাকেই প্রার্থী করা হয়। জিতে আসার পর মন্ত্রিসভায় তাকে করা হয় প্রতিমন্ত্রী। এবারও তিনিই নৌকার প্রার্থী।
তবে এনামুর এবার আর ফুরফুরে মেজাজে নেই। গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা যেভাবে এককাট্টা হয়ে তাকে জেতাতে কাজ করেছেন, সেটি আর দেখা যাচ্ছে না।
ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের একাংশের পাশাপাশি চিকিৎসকদের সমর্থনকে পুঁজি করে এগিয়ে যেতে চাইছেন তিনি।
স্থানীয় সাংবাদিক রুপোকুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আগে আমরা জানতাম এনাম সাহেব বিএনপি-জামায়াতের লোক। বিএনপির বড় বড় নেতাদের সঙ্গে তাকে দেখা যেত। এখন দীর্ঘদিন ধরে তিনি আওয়ামী লীগে আছেন, এটাই হলো বাস্তবতা।”
সাভার পৌরসভার চেয়ারম্যান ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজী আব্দুল গণি নৌকার পক্ষে আছেন। তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সাভার এলাকার মানুষ ভদ্রলোক হিসাবে এনাম সাহেবকে ভোট দেবেন।”
নৌকার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে মুরাদ জং সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “খালি কথার ফুলঝুরি। তার একটা ডায়ালগ হচ্ছে, ‘আমার জন্য মায়া লাগে না?’ কিন্তু মায়াটা কোত্থেকে লাগবে? গত ১০ বছরে তাকে দেখা যায়নি। করোনার সময় তার কোনো খবর ছিল না।
“তার সঙ্গে এক সময় আমিও রাজনীতি করছি। পৌর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তার সঙ্গে রাজনীতি করেছে। কিন্তু এখন তো নাই। থাকবেই বা কেন? ২০০১ সালে নির্বাচনে হেরে আমেরিকায় চলে গিয়েছিল। ২০০৮ সালে আবার নমিনেশন পেয়ে এমপি হইল। এমপি হওয়ার পর কী করছে না করছে তা সাভারবাসীর কাছে জাইন্যা যান। আর আমাদের এমপি সাহেব কথা কম বলেন, কাজ বেশি করেন। এই হলো তার নীতি।”
এনামুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সাভারের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আমার সঙ্গে আছে। আমি জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।”
দুই স্বতন্ত্র প্রার্থীকে তো আওয়ামী লীগের অনেকেই সমর্থন দিচ্ছে, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমি অন্য কোনো প্রার্থীকে নিয়ে ভাবছি না। আমার প্রতি ভোটারদের এবং এলাকার সকল স্তরের নেতাকর্মীদের ভালোবাসা আছে।”
সাভার আওয়ামী লীগে মুরাদ পরিবারের আধিপত্য পুরনো
মুরাদ জংয়ের বাবা আনোয়ার জং তালুকদার ১৯৭০ সালের প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনের পর ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশের প্রথম সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের হয়ে জয় পান।
এরপর জিয়াউর রহমান ও এরশাদের সেনাশাসনের সময় দুটি নির্বাচনে অংশ নিলেও জিততে পারেনি দলের প্রার্থীরা। এরশাদ সরকারের পতনের পর ১৯৯১ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আরো তিনটি নির্বাচনে হারেন নৌকা মার্কার প্রার্থীরা।
তবে ২০০৮ সালে দ্বিতীয়বারের চেষ্টায় মুরাদ জং হারিয়ে দেন বিএনপির দুইবারের সংসদ সদস্য দেওয়ান মো. সালাউদ্দিনকে। ১ লাখ ১২ হাজার ২৫৯ ভোটের বিশাল ব্যবধানে জয় পেলেও রানা প্লাজা ধসের পর তিনটি নির্বাচনে তাকে নিরাশ হতে হয়।
সংসদ সদস্য থাকাকালে মুরাদ জংয়ের সঙ্গে রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানার ঘনিষ্ঠতা ছিল। যে কারণে এই ধসের পর মুরাদকেও দায় নিতে হয়।
মুরাদ জং এ বিষয়ে এখন বলছেন, “দীর্ঘ ১০টি বছর কোনো কথা বলিনি, এখন সেই কথা আপনাদের বলছি। রানা প্লাজা কি আমি ফালাইছিলাম? ওটার ডিজাইন কি আমি করেছি? ওখানে আমার কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, দোকানপাট ছিল? একটা বিল্ডিং ভাইঙা পড়ছে, আমার দোষ কোথায়, কী অপরাধ ছিল আমার?”
এবার স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিষয়ে আওয়ামী লীগের উদার মনোভাব মুরাদ জংকে ভোটের লড়াইয়ে নামার সুযোগ করে দিয়েছে। এই মুহূর্তে আওয়ামী লীগের কমিটিতে তার কোনো পদ নেই, তবে নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার যোগাযোগ ও পরিচিতি ছিল সব সময়।
সাংবাদিক রুপোকুর রহমান বলেন, “এখন যারা সাভার পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ, আশুলিয়াসহ অন্যান্য ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দায়িত্বে আছেন, তাদের অনেকেই এক সময় মুরাদ জংয়ের কাছের মানুষ ছিলেন। এখন তিনি আবার নির্বাচনে ফিরে আসায় তার পুরোনো মিত্রদের কেউ কেউ আবার কাছে ভিড়তে শুরু করেছেন। তিনিও সবাইকে কাছে টেনে নেওয়ার চেষ্টা করছেন।“
সাভার পৌর এলাকার নিউ ক্যামব্রিজ একাডেমির প্রিন্সিপাল আব্দুল মোমেন বলেন, “পরিস্থিতি আলটিমেটলি ঈগলের দিকে চলে গেছে। দলীয় নেতাকর্মীরা মুখে মুখে একজনের পক্ষে থাকলেও তলে তলে অন্যপ্রার্থীর পক্ষে।
“১২ বছর ধরে সাভার পৌর আওয়ামী লীগের পদে ছিলেন একজন নেতা। তিনি এখন ঈগলের পক্ষে সক্রিয়ভাবে কাজ করা শুরু করেছেন। ফিরোজ কবিরের (সাভারের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও বর্তমানে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি) মতো লোক মুরাদ সাহেবের ইলেকশন করতেছে। এছাড়া দলের পদধারী অনেক নেতা আছে যারা নানা কারণে এনাম সাহেবের সঙ্গে নাই। গত তিন-চার দিনের ভেতরে অনেক নেতাই তাদের অবস্থান পরিবর্তন করেছেন।”
মুরাদ জং বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সাভার-আশুলিয়ার মানুষ তাদের হারানো সম্পদ খুঁজে পেয়েছে ১০ বছর পর। তারা তাদের মূল্যবান ভোট ঈগল মার্কায় দিয়ে আমাকে জয়যুক্ত করবে। দুই চার জন ছাড়া শতকরা ৯০ ভাগ দলীয় নেতাকর্মী আমার সঙ্গে আছে।”
চেয়ারম্যানের পদ ছেড়ে নির্বাচনে সাইফুল
সাভারের প্রতিটি ইউনিয়নেই আছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পোশাক কারখানা। এখানকার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের দাপট ও প্রতিপত্তি দেশের অন্য অনেক অংশের চেয়ারম্যানদের তুলনায় বেশি।
ধামসোনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হয়ে সাইফুলও বেশ প্রভাবশালীই ছিলেন এলাকায়। সেই পদ ছেড়ে তিনি প্রার্থী হয়ে আঞ্চলিকতাকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছেন। আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও তিনি সুবিধা পাচ্ছেন। আশুলিয়ার শহরাঞ্চলের বাইরে পাথালিয়া, শিমুলিয়া, ধামসোনা ও ইয়ারপুর ইউনিয়নের নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রচারের কৌশল সাজাচ্ছেন তিনি।
সাইফুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি সাভার-আশুলিয়ার গ্রাম ও শহরে চষে বেড়াচ্ছি। প্রচারে নেতাকর্মীদের ব্যাপক সমর্থন পাচ্ছি। মানুষ নতুন নেতৃত্ব চায়। জয়ের বিষয়ে আমি শতভাগ আশাবাদী।”
সাইফুলের পক্ষে প্রচার চালাচ্ছেন ঢাকা জেলা পরিষদের সদস্য এনামুল হক মুন্সী। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “সাইফুল ইসলাম সাত বছর ধামসোনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন। এই সাত বছরে তিনি এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করে নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছেন। তাছাড়া সাভারবাসী নেতৃত্বে পরিবর্তন চায়।
এই ধামসোনা ইউনিয়ন ভোটার সংখ্যার দিক দিয়ে সবচেয়ে এগিয়ে। ফলে এই ইউনিয়নের একচেটিয়া সমর্থন তাকে ভোটের ময়দানে এগিয়ে দিতে পারে।
এই ইউনিয়নে ভোটার সংখ্যা প্রায় পৌনে দুই লাখ, যেখানে গোটা নির্বাচনি এলাকায় ভোটার সংখ্যা সাড়ে সাত লাখের কিছু বেশি।
ভোট থেকে সরে যাওয়া জাপা নেতার মূল্যায়ন
আওয়ামী লীগ ঘরানার তিন প্রার্থী ছাড়াও ডাব প্রতীকে বাংলাদেশ কংগ্রেসের মিলন কুমার ভঞ্জ, একতারা প্রতীকে বাংলাদেশ সুপ্রীম পার্টির (বিএসপি) মো. জুলহাস, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের নূরুল আমীন, কাঁঠাল প্রতীকে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির আইরীন পারভীন, সোনালী আঁশ প্রতীকে সদ্য নিবন্ধন পাওয়া তৃণমূল বিএনপির মাহাবুবুল হাসান, নোঙ্গর প্রতীকে সদ্য নিবন্ধন পাওয়া বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন-বিএনএমের মো. সাইফুল ইসলাম এবং আম প্রতীকে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) মো. ইসরাফিল হোসেন সাভারী প্রার্থী হয়েছেন আসনটিতে।
তবে গত কয়েকদিনে সাভার-আশুলিয়া অঞ্চলে ঘুরে এদের প্রচার ও জন সম্পৃক্ততার তথ্য মেলেনি।
নির্বাচনে এই আসনে জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন সংগ্রহ করে জমাও দিয়েছিলেন বাহাদুর ইসলাম ইমতিয়াজ। তবে তার মনোনয়নটি প্রত্যাহার হয়ে গেছে বলে দাবি করেন তিনি।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমি নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে, জেলা প্রশাসকের সঙ্গে বৈঠক করেছি আমার প্রার্থিতা নিয়ে। দলের চেয়ারম্যানের সঙ্গেও বৈঠক করেছি। এখানে নাকি একজনকে সুযোগ দিতে হবে।”
মাঠের পরিস্থিতি কেমন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, “প্রচার প্রচারণায় মুরাদ এগিয়ে আছে। মাঠে তার মিছিলে বেশি লোক দেখা যাচ্ছে। অন্য দুইজনের পক্ষেও কিছু লোক আছে। আমরা জাতীয় পার্টি সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে আমরা কারো পক্ষে যাব না। তবে কর্মীরা ব্যক্তিগতভাবে কারো পক্ষে যেতেও পারে।”
ভোটে আমেজ নিয়ে জাতীয় পার্টির নেতা বলেন, “সাভারে নৌকার পক্ষে আম জনতার সমর্থন নেই। ভোট যেটা আছে সেটা দলীয় ভোট। দলীয় নেতাকর্মীরা সকালে এক নেতার পক্ষে, বিকালে আরেক নেতার পক্ষে। এভাবে চলছে। এরপরও ভোটের দিন কী যে হয় এখনও বোঝা যাচ্ছে না।”
ভোটের আমেজ কতটুকু
বিএনপি-জামায়াত ও সমমনারা নির্বাচনের লড়াইয়ে না থাকায় ভোটের আমেজে যে ভাটা পড়েছে, তা বোঝা যায় সহজেই।
সোমবার সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় নৌকার প্রার্থী এনামুর রহমানের একটি নির্বাচনী ক্যাম্প দেখা গেল। সেখানে চেয়ারটেবিলগুলোয় ধুলো দেখে মনে হলো কয়েকদিন ধরে সেখানে কোনো তৎপরতা নেই।
ওই ক্যাম্পের পাশেই একটি চা দোকান। নির্বাচন পরিস্থিতি নিয়ে কথাই বলতে নারাজ দোকানি।
সেখানে চা পান করছিলেন কয়েকজন প্রাইভেটকার চালক। তাদের একজন রমিজ মিয়া বলেন, “প্রচার চলে আবার চলে না। যেই দুই একজন প্রার্থী দেখা যাচ্ছে তারা আওয়ামী লীগের। অন্য দলের প্রার্থী থাকলেও তাদের কাউকে দেখা যায়নি।”
কার অবস্থা ভালো- এই প্রশ্নে তিনি বলেন, “কে যে জিতবে তা এখনও বলা যাবে না। মুরাদ জং, ডাক্তার এনাম- দুই পক্ষেই প্রচারণা চলছে।”
সাভার সরকারি কলেজের সামনে কথা হয় ওই কলেজের রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের দুই শিক্ষার্থীর সঙ্গে। নিজেদের ছাত্রলীগ কর্মী দাবি করলেও নির্বাচন নিয়ে হতাশার কথাই বলেন তারা।
একজন বলেন, “কোন প্রার্থী জিতবে তা এখনই ধারণা করা যাচ্ছে না। তবে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলো নির্বাচনে না থাকায় সাধারণ মানুষের আগ্রহ নেই। দলীয় পদধারী কিছু লোকজন নির্বাচন নিয়ে লাফাচ্ছে।”
আপনারা ভোট দেবেন কি না- এই প্রশ্নে অপরজন বলেন, “আমাদের ভোটটা গুরুত্ব বহন করে না। কারণ, যে তিনজন প্রার্থী মাঠে সক্রিয়, তাদের একজন আসলেই (জিতলেই) হলো।”
সাভার মুক্তির মোড়ের কাছে একটি আসবাবের দোকানে গিয়ে ভোট নিয়ে কথা বলতে চাইলে দোকানিও রুবেল মোল্লাহ বলেন, “আমরা চাই যিনি জনগণের জন্য ভালো করবেন, তিনিই যেন জিতে আসেন। যোগ্য লোক ভালো লোকের পক্ষে আমরা।”