সীমান্তে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে টহল জোরদার করেছে বিজিবি।
Published : 26 Mar 2024, 08:04 PM
মিয়ানমারের রাখাইনে মর্টার শেল বিস্ফোরণ ও গুলির শব্দে কাঁপল টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ ও সেন্ট মার্টিন। এতে সীমান্তের বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
মঙ্গলবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউনশিপের উত্তর ও দক্ষিণে কয়েকটি গ্রাম থেকে গোলাগুলির শব্দ শোনা যায় বলে জানিয়েছেন টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য (ইউপি) আবদুস সালাম।
এ ঘটনার পর থেকে সীমান্তে বিজিবির টহল জোরদারের পাশাপাশি রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের কথা জানিয়েছেন টেকনাফ-২ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ।
এদিকে মিয়ানমারের মংডু, বুথেডং ও রাথেডংয়ের কয়েকটি গ্রামে আরাকান আর্মির সঙ্গে দেশটির সেনাবাহিনীর তুমুল সংঘর্ষ চলছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
ইউপি সদস্য আবদুস সালাম বলেন, “মিয়ানমারের গোলার শব্দে শাহপরীর দ্বীপের সীমান্ত কাঁপছে। আধা ঘণ্টা পরপর ওপারের শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। আজকের গোলার শব্দ শাহপরীর দ্বীপে বিভিন্ন এলাকায় পাওয়া যাচ্ছে। সীমান্তের বসবাসকারী শিশু-নারীরা ভয়ভীতির মধ্য আছেন।”
উপজেলার হোয়াইক্যং থেকে শাহপরীর দ্বীপ পর্যন্ত ৫৪ কিলোমিটার নাফ নদীতে বিজিবি ও কোস্ট গার্ডের সদস্যরা দিনরাত টহল বাড়িয়েছে। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত রয়েছে বিজিবি ও কোস্ট গার্ড।
শাহপরীর দ্বীপ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক কলিম উল্লাহ বলেন, “কিছুদিন বন্ধ থাকার পর আবারও শাহপরীর দ্বীপ সীমান্তে ব্যাপক গোলার শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। সেহেরির পর থেকে মিয়ানমারের ওপার থেকে খুব বিকট শব্দ পাওয়া যাচ্ছে।”
সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আক্তার কামাল বলেন, “সকাল থেকে ভারি মর্টার শেল ও গুলিবর্ষণের শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পরপর এই গোলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছিল।”
শাহপরীর দ্বীপের বাজারপাড়া মসজিদের ইমাম নুরুল ইসলাম বলেন, “ফজরের নামাজের পর থেকে গোলাগুলির শব্দ শুনেছি। প্রথমে বজ্রপাত মনে করেছি। পরে নিশ্চিত হয়েছি মিয়ানমারে ফের যুদ্ধ শুরু হয়েছে।”
টেকনাফ পৌরসভার হায়েকখালি পাড়ার বাসিন্দা আবুল বশর বলেন, “সকাল ৭টার দিকে বিকট শব্দে ঘুম ভাঙে। ভেবেছি বাড়ির ছাদ ভেঙে পড়েছে। এরপর নিশ্চিত হয়েছি মিয়ানমারের গোলার শব্দ এপারে এসেছে।
“ঘণ্টা খানেকের মধ্যে বেশ কয়েকটি গোলার শব্দ শুনেছি। এর আগে ওপার থেকে এভাবে গুলির শব্দ শোনা যায়নি। এতে সাধারণ মানুষ আতঙ্কে রয়েছে।”
কোস্ট গার্ড সদর দপ্তরের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার খন্দকার মুনিফ তকি বলেন, “মিয়ানমারে সংঘাতের শুরু থেকে নাফ নদীতে রাত-দিন টহল জোরদার রেখেছি। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব সময় প্রস্তুত রয়েছি।”
এ ছাড়া অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে কঠোর অবস্থান নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবরের শেষ দিক থেকে মিয়ানমারের তিনটি জাতিগত বিদ্রোহী বাহিনী একজোট হয়ে জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে সমন্বিত আক্রমণ শুরু করে।
বাহিনীগুলো হল- তা’আং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি-টিএনএলএ, আরাকান আর্মি-এএ এবং মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স আর্মি-এমএনডিএএ।
আরও পড়ুন:
টেকনাফ সীমান্তে গুলির শব্দ, নাইক্ষ্যংছড়িতে আরো ২টি গোলা উদ্ধার