ঠাকুরগাঁওয়ে প্রতিমা ভাংচুর: ৪ দিনেও কেউ শনাক্ত হয়নি

জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা মঙ্গলবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে স্থানীয় হিন্দুদের সঙ্গে কথা বলেন।

জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা মঙ্গলবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন।

ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় এক রাতে ১৪ মন্দিরে প্রতিমা ভাংচুরে চারদিনেও এ ঘটনায় জড়িত কাউকে শনাক্ত কিংবা গ্রেপ্তার করা যায়নি। 

মঙ্গলবার জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও মতবিনিময় করেছেন এবং জেলা বিএনপি কার্যলয়ে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্ট নেতারা সংবাদ সম্মেলন করেছেন। 

শনিবার রাত থেকে রোববার ভোর পর্যন্ত সময়ে বালিয়াডাঙ্গীর তিন ইউনিয়নের ১৪টি মন্দিরের প্রতিমা ভাংচুর করে অজ্ঞাত হামলাকারীরা।

এ ঘটনায় রোববার বালিয়াডাঙ্গী থানায় মামলা হয়েছে।  

মঙ্গলবার বিকালে ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষদের সঙ্গে কথা বলেছেন।

পরে ধনতলা ইউনিয়নের সিন্দুরপিন্ডি হরিবাসর মন্দিরে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোহাম্মদ আলীর সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুহাম্মদ সাদেক কুরাইশী, সাধারণ সম্পাদক দীপক কুমার রায়, সহ-সভাপতি প্রবীর কুমার রায়, সাংগঠনিক সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম সুজন, জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি, বালিয়াডাঙ্গী আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত বাবু, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলী আসলাম জুয়েল, উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিদ্যানাথ বর্মনসহ জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা বক্তব্য দেন। 

সভার বক্তারা হঠাৎ শান্তিপ্রিয় এই জনপদে মন্দিরের প্রতিমা ভাংচুরের ঘটনাটি দুঃখজনক বলে উল্লেখ করেন।  

আওয়ামী লীগ হিন্দু সম্প্রদায়ের পাশে আছে এবং সবসময় থাকবে এবং তারা হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যদের তাদের উপর আস্থা রাখার আহ্বান জানান। 

এ ঘটনায় যারাই জড়িত থাকুক না কেন তাদের ছাড় দেওয়া হবে না বলে আশ্বস্ত করেন।

মতবিনিময় সভা শেষে ধনতলা, পাড়িয়া ও চাড়োল ইউনিয়নে মন্দিরগুলো সংস্কার করার জন্য ১২ লাখ টাকা জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে দেওয়া হবে বলে ঘোষণা করেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের প্রশাসক মুহাম্মদ সাদেক কুরাইশী।

এ ছাড়া ঠাকুরগাঁও-২ আসনের সংসদ সদস্য দবিরুল ইসলামের পক্ষ থেকেও ১২ লাখ টাকা দেওয়ার ঘোষণা দেন তার ছেলে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম সুজন। 

এদিকে, মঙ্গলবার দুপুরে ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির কার্যলয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের ঠাকুরগাঁও জেলা কমিটি।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ফ্রন্টের জেলা সাধারণ সম্পাদক সত্যজিৎ কুমার কুন্ডু বলেন, “প্রতিমা ভাংচুরের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। উল্লেখিত স্থানে প্রতিমা ভাংচুরের বিষয়টি পূর্ব পরিকল্পিত ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে সম্প্রীতি বিনষ্টের অপচেষ্টা।”

সত্যজিৎ কুন্ডুর অভিযোগ, “স্থানীয় একটি মহল এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ধর্মীয় উন্মাদনা উস্কে দিয়ে স্বার্থ হাসিলের নীল নকশা রচনার পাঁয়তারা করছে। এ জাতীয় ঘটনার মাধ্যমে মূলত চক্রটি আমাদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি দখলসহ মন্দির ও প্রতিমা ভাংচুরের মাধ্যমে আমাদের সম্প্রদায়কে উচ্ছেদ করার খেলায় লিপ্ত হয়েছে।” 

তিনি দ্রুততম সময়ে সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক এ ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। একই সঙ্গে সংখ্যালঘুদের বসতবাড়ি ও জানমাল রক্ষায় সরকারের কাছে জোর দাবি জানান।

সংবাদ সম্মেলনে ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ওবায়দুল্লাহ মাসুদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পয়গাম আলী, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. জাফরউল্লাহ, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের জেলা সভাপতি মনোরঞ্জন সিং, সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক কল্প বর্মন, কার্যকরী সদস্য জদুনাথ বর্মন, শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক উজ্জ্বল শাহ্, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব হোসেন তুহিন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি সরকার নুরুজ্জামান নুরু, সাধারণ সম্পাদক মো. সোহেল রানাসহ বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

শনিবার রাত থেকে রোববার ভোর রাত পর্যন্ত সময়ে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ধনতলা, চাড়োল ও পাড়িয়া ইউনিয়নে বিভিন্ন গ্রামের ১৪টি মন্দিরে প্রতিমা ভাংচুর করার ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে ধনতলা ইউনিয়নে ৯টি, চাড়োল ইউনিয়নে একটি এবং পাড়িয়া ইউনিয়নে ৪টি মন্দিরের প্রতিমা ভাংচুর হয়।

এ ঘটনায় রোববার বিকালে বালিয়াডাঙ্গী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন ধনতলা ইউনিয়নের সিন্দুরপিণ্ডির হরিবাসর মন্দির কমিটির সভাপতি যতীন্দ্রনাথ সিংহ। 

বালিয়াডাঙ্গী থানার ওসি খায়রুল আনাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মন্দিরে প্রতিমা ভাংচুরের ঘটনায় মামলা হয়েছে। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা দিয়ে ঘটনাটি তদন্ত করছি। আশা করি অল্প সময়ের মধ্যেই প্রকৃত অপরাধীকে শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।”

ঠাকুরগাঁওয়ের হামলা চেতনার মূলে আঘাত: ওবায়দুল কাদের  

ঠাকুরগাঁওয়ে একযোগে প্রতিমা ভাংচুরের ঘটনা রহস্যজনক: ফখরুল  

সম্প্রীতির জনপদে প্রতিমার গায়ে ক্ষত  

১৪ মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুর: বালিয়াডাঙ্গিতে অজ্ঞাতদের নামে মামলা  

প্রতিমা ভাঙচুর: আতঙ্কিত ধনতলার হিন্দুদের প্রশ্ন, এর পর কী  

এক রাতে ঠাকুরগাঁওয়ের ১৪ মন্দিরের প্রতিমা ভাঙচুর