আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে রোববার শেষ হচ্ছে তাবলিগ জামাতের তিন দিনের সম্মিলন বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব।
এদিন হেদায়তি বয়ানের পর জোহরের নামাজের আগে মোনাজাত হবে। তাতে অংশ নিতে সকাল থেকেই রাজধানীর উপকণ্ঠের টঙ্গীর পথ মানুষের ঢল নেমেছে।
এদিন ফজরের পর বয়ান করেন বাংলাদেশের মাওলানা রবিউল ইসলাম, এরপর ভারতের আব্দুর রহমান হেদায়তি বয়ান করবেন। হেদায়তি বয়ানের পর জোহরের নামাজের আগে হবে আখেরি মোনাজাত।
বিশ্ব ইজতেমা আয়োজক কমিটির সদস্য প্রকৌশলী আব্দুন নুর জানান, বেলা ১১টার পর আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করবেন কাকরাইল মারকাজের তাবলিগ জামায়াতের সুরা সদস্য মাওলানা মো. জোবায়ের হাসান। বিদেশি নিবাসের পূর্বপাশে বিশেষ মোনাজাত মঞ্চ থেকে মোনাজাত পরিচালনা করা হবে।
আখেরি মোনাজাতে দেশের কল্যাণ, মুসলিম উম্মার সুদৃঢ় ঐক্য, আখেরাত ও দুনিয়ার শান্তি কামনা করা হয়। তাতে অংশ নিতে ভোর থেকেই ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে মানুষের ঢল নেমেছে।
আখেরি মোনাজাতের অংশ নিতে নরসিংদী থেকে টঙ্গীতে এসেছেন রমজান মিয়া। দুই বন্ধুর সঙ্গে রাত ৩টায় ইজতেমা ময়দানের উদ্দেশ্যে রওনা হন তিনি। ট্রাকে করে গাজীপুর বাইপাসে এসে তারপর কিছুটা হেঁটে, কিছুটা অটোরিকশায় তারা ইজতেমা মাঠের কাছে পৌঁছেছেন।
ময়মনসিংহের আবুল কালাম রাত আড়াইটার দিকে বাসে করে রওনা হয়েছিলেন আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে। সকাল ৭টায় তিনি পৌঁছাতে পেরেছেন গাজীপুরের ভোগড়া বাইপাস এলাকায়। এরপর তাকে ভেঙে ভেঙে বিভিন্ন বাহনে করে বাকি পথ যেতে হবে।
গত শুক্রবার আম বয়ানের মধ্য দিয়ে এবারের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শুরু হয়। এই পর্বে অংশ নেন মাওলানা মো. জোবায়েরের অনুসারীরা।
এর বাইরে শুধু আখেরি মোনাজাতে শরিক হতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ আসতে থাকে শনিবার থেকেই। বাস, ট্রাক, কার, মাইক্রোবাস, ট্রেন, লঞ্চে করে এসে টঙ্গীতে পৌঁছে অবস্থান নিতে শুরু করেন।
রাজধানীসহ আশপাশের এলাকার লোকজন শীত আর কুয়াশা উপেক্ষা করে রাতেই টঙ্গীমুখো হন। মধ্যরাত থেকে টঙ্গীমুখী সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়ায় দীর্ঘ পথ হেঁটে ইজতেমা মাঠে পৌঁছতে হচ্ছে লাখ লাখ মানুষকে।
ইজতেমার মাঠে যাদের জায়গা হয়নি, আশপাশের বাসাবাড়ি, ভবন, ভবনের ছাদ কিংবা করিডোর, সড়কের পাশে ফুটপাতে এমনকি গাছতলায় অবস্থান নিয়েছেন তারা। পত্রিকা, পাটি, চট, জায়নামাজ, পলিথিন বিছিয়ে অনেকে বসে পড়েছেন রাস্তায়। সকালেই পুরা এলাকা পরিণত হয়েছে জনসমুদ্রে।
প্রতিবছর বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নেয় কয়েক লাখ মানুষ। তাদের মধ্যে তাবলিগ জামাতের বিদেশি অনুসারী থাকেন ৩০ থেকে ৪০ হাজার। তাবলিগ জামাতের নিয়মিত অনুসারী নন, এমন অনেকও বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাতে শামিল থাকতে চান।
মূল ইজতেমা ময়দানে নারীদের বসার কোনো ব্যবস্থা নেই। সে কারণে ময়দানের বাইরে খালি জায়গায়, কলকারখানা ও বসত বাড়ির ছাদসহ বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে আখেরি মোনাজাতের অপেক্ষায় আছেন বহু নারী।
টঙ্গী শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতাল চত্বরে অবস্থান নিয়েছেন শতাধিক নারী। সেখানে নরসিংদী থাকা আসা সানোয়ারা বেগম বললেন, শনিবার রাতে তিনি টঙ্গী পৌঁছেছেন। কোথাও স্থান না পেয়ে হাসপাতালের চত্বরে অবস্থান নিয়েছেন।
আগামী ২০ থেকে ২২ জানুয়ারি হবে ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। তাতে অংশ নেবেন দিল্লির মাওলানা সা’দ কান্ধলভীর অনুসারীরা।
বিদেশ থেকে আসা অতিথিরা প্রথম পর্ব শেষে ইজতেমাস্থল ত্যাগ করে হাজী ক্যাম্পে অবস্থান করবেন। সেখান থেকে তারা নিজ নিজ গন্তব্যে যাবেন।
আর দ্বিতীয় পর্বের বিদেশি মেহমান যারা আসবেন তারা ইজতেমা মাঠেই অবস্থান করবেন এবং ইজতেমা শেষে তারা যার যার গন্তব্যে চলে যাবেন।
পুরনো খবর