ইজতেমায় ইন্টারনেটে ধীরগতি, কলড্রপে ভোগান্তি

আয়োজক কমিটির মুরুব্বিরা মনে করেন, গুরুত্ব বিবেচনায় ময়দানসহ আশপাশে অস্থায়ী কিছু মোবাইল টাওয়ার নির্মাণ করা প্রয়োজন।

গাজীপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Jan 2023, 01:02 PM
Updated : 14 Jan 2023, 01:02 PM

গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ তীরের বিশ্ব ইজতেমায় আসা লাখো মানুষের মোবাইল ফোনের সেবা বিঘ্নিত হচ্ছে।

তারা অভিযোগ করেছেন, সেখানে প্রায় সব কয়টি টেলিফোন অপারেটর কোম্পানির ইন্টারনেটের গতি খুব ধীর। সংযোগ না পেয়ে কাঙ্ক্ষিত যোগাযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এবং কথা বলার মাঝখানে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় তাদের ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হচ্ছে।

শনিবার তুরাগ তীরের ইজতেমা ময়দান এবং টঙ্গীর আশপাশের স্থানীয় মানুষেরাও এই অভিযোগ করেছেন। এ কারণে সংবাদমাধ্যমের কর্মীরাও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন; বিশেষ করে টেলিভিশনে কর্মরত সংবাদকর্মীরা। 

প্রথম পর্বের তিন দিনের বিশ্ব ইজতেমা শুক্রবার বাদ ফজর শুরু হয়েছে। রোববার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এই সম্মিলন। দেশ-বিদেশের লাখ লাখ মুসলিম ধর্মাবলম্বীর পদচারণায় মুখরিত ইজতেমার মাঠ ও সংলগ্ন এলাকা।

ময়মনসিংহ থেকে ইজতেমা ময়দানে আসা মাহবুব আলম বলেন, বড়চওনা গ্রাম থেকে ২৭ জন জামাত সাথী নিয়ে তিনি মাঠে এসেছেন। ময়দানের ভেতর অবস্থান নিলেও কথা বলার জন্য বহুদূর হেঁটে বাইরে আসতে হচ্ছে; তার পর অনেকবার চেষ্টা করে পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে পেরেছেন।

তিনি অভিযোগ করেন, “জরুরি প্রয়োজনেও জামাত সাথীদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। মোবাইল সমস্যা বড় ধরনের ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।“

টঙ্গীর বনমালা এলাকার বাসিন্দা রাকিুবল ইসলাম জানান, ইজতেমা শুরুর আগ থেকেই মোবাইলে কলড্রপ, ইন্টারনেটে ধীরগতি ছিল; বর্তমানে তা আরও বেড়েছে।

“ময়দানের দিকে গেলে তা প্রকট আকার ধারণ করে। মোবাইলে যোগাযোগ প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এমন ভোগান্তি টঙ্গী এলাকার বাসিন্দাদের।”

ময়মনসিংহ থেকে আসা ইকরাম হোসেন বলেন, “রাস্তার পাশে তাও কিছুটা যোগাযোগ করা যায়; মাঠের ভেতরের অবস্থা খুবই খারাপ। আমাদের জামাত থেকে সকালে বাজার করতে গিয়েছে, আমরা একটি বাজারের কথা বলতে ভুলে গিয়েছিলাম। সেটা জানাতে গিয়ে মোবাইলে একাধিকবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করতে পারিনি।”

একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন আবুল হাসান। তিনি ঢাকার অফিসে ইজতেমার প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট ভিডিও ফুটেজ পাঠাতে গিয়ে ভোগান্তির মধ্যে পড়ছেন।

তিনি সন্ধ্যায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলছিলেন, “এখানে অনেক মানুষ; এ কারণেই হয়তো ইন্টারনেটে গতি খুব ধীর। ফুটেজ পাঠাতে গিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এই অবস্থার মধ্যেই কাজ করতে হচ্ছে। প্রচুর সময়ক্ষেপণ হচ্ছে।”  

একটি জাতীয় সংবাদপত্রের জেলা প্রতিনিধিও ইন্টারনেটের ধীর গতির কথা উল্লেখ করে বলেন, “কল করতে গেলে কিছু সময় পর পর কেটে যাচ্ছে। কাউকে ফোন দিতে গেলে মোবাইল খোলা থাকার পরও তা বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।“

কিছুটা দূর থেকে নিয়ন্ত্রণকক্ষের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আদান-প্রদানেও সমস্যা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ময়দানের খিত্তায় কর্তব্যরত এক পুলিশ কর্মকর্তা।

তিনি বলেন, “খিত্তার অবস্থা মুহূর্তে মুহুর্তে নিয়ন্ত্রণকক্ষে জানানোর কথা রয়েছে। আমরা মাঠের ভেতর থেকে মোটেও নেটওয়ার্ক পাচ্ছি না। ইন্টারন্টেও চলে না। তাই বয়ানের তথ্য, মানুষের অসুস্থতাসহ বিভিন্ন তথ্য মোবাইল নেটওয়ার্ক সমস্যার কারণে সঠিক সময়ে দেওয়া যাচ্ছে না।”

ইজতেমায় দায়িত্বশীল কয়েকজন মুরুব্বির সঙ্গে এ নিয়ে কথা বললে তারা জানান, লাখ লাখ মানুষ পাশাপাশি অবস্থান করায় এবং মাঠের আশপাশে টাওয়ার তুলনামূলক কম থাকায় এই সমস্যা হচ্ছে। সবকটি মোবাইল কোম্পানির নেটওয়ার্কের একই অবস্থা। গুরুত্ব বিবেচনায় ময়দানসহ আশপাশে অস্থায়ী কিছু টাওয়ার নির্মাণ করা প্রয়োজন বলে জানান তারা।