আম বয়ানে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শুরু

শুক্রবার দুপুরে এই ইজতেমা মাঠেই হবে জুমার নামাজে দেশের সর্ববৃহৎ জামাত।

গাজীপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Jan 2023, 04:29 AM
Updated : 13 Jan 2023, 04:29 AM

শীতের ভোরে আম বয়ানের মধ্য দিয়ে টঙ্গীর তুরাগ তীরে শুরু হয়েছে বিশ্ব ইজতেমার আনুষ্ঠানিকতা।

শুক্রবার ফজরের নামাজের পর মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই বিশ্ব সম্মিলনের কার্যক্রম শুরু হয়। রোববার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে ইজতেমার প্রথম পর্ব শেষে ২০ থেকে ২২ জানুয়ারি হবে দ্বিতীয় পর্ব।

এবার প্রথম পর্বের ইজতেমায় অংশ নিচ্ছেন মাওলানা জোবায়েরের অনুসারীরা। আর দিল্লির মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অনুসারীরা অংশ নেবেন দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমায়।

ইজতেমার আয়োজক কমিটির সদস্য প্রকৌশলী আব্দুন নূর জানান, শুক্রবার ফজরের পর পাকিস্তানের মাওলানা জিয়াউল হক শুরু করেন আম বয়ান। একইসঙ্গে তা বাংলায় তরজমা করে শোনানো হয়।

বয়ানে বলা হয়, “আমল করতে হবে দুনিয়াবি কিছু পাওয়ার জন্য নয়, আল্লাহকে রাজি-খুশির জন্য আমল করতে হবে। যে নিজের চাহিদা রেখে আল্লাহর চাহিদাকে আগে রাখবে, প্রাধান্য দেবে, সে-ই সফলকাম হবে।”

রোববার আখেরি মোনাজাতের আগ পর্যন্ত চলবে তাবলীগের ছয় উসুলের এ বয়ান। বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের আলেমরা মূল বয়ান করবেন। মূল বয়ান বাংলাসহ বিভিন্ন ভাষাভাষীদের জন্য তাৎক্ষণিক তরজমা করে শোনানো হবে।

ইজতেমা মাঠের মুরব্বি আব্দুন নূর বলেন, “তাবলিগ জামাতের উদ্যোগে প্রতি বছর বিশ্ব ইজতেমা হয়। মাঠের সব কাজ করা হয় পরামর্শের মাধ্যমে। এখানে বিদ্যুৎ, পানি, প্যান্ডেল তৈরি, গ্যাস সরবরাহ প্রতিটি কাজই আলাদা আলাদা গ্রুপের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়।

“বিশ্বের প্রায় সব মুসলিম দেশ থেকেই তাবলিগ জামাতের অনুসারী মুসলমানরা অংশ নেন। তারা এখানে তাবলিগ জামাতের শীর্ষ আলেমদের বয়ান শোনেন এবং ইসলামের দাওয়াতি কাজ বিশ্বব্যাপী পৌঁছে দেওয়ার জন্য জামাতবদ্ধ হয়ে বেরিয়ে যান।”

উত্তরের হিমেল হাওয়া আর শীতের মধ্যেই বুধবার থেকে টঙ্গীর পথে ইজতেমাগামী মানুষের ঢল নামলে সড়কে যানজট সৃষ্টি হয়। বৃহস্পতিবারই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় ইজতেমা ময়দান।

প্রায় এক বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিশাল মাঠকে বাঁশের খুঁটির উপর চটের ছাউনি দিয়ে ইজতেমার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। বয়ান মঞ্চ করা হয়েছে ইজতেমা মাঠের পশ্চিম-উত্তরের মাঝ বরাবর।

বয়ান শোনার জন্য লাগানো হয়েছে বিশেষ ছাতা মাইক। বয়ান ও দোয়া মঞ্চ ছাড়া নামাজের মিম্বরও তৈরি করা হয়েছে আলাদাভাবে।

পুরো মাঠকে জেলাওয়ারী আলাদা ৯১ ভাগে (খিত্তায়) ভাগ করা হয়েছে। বিভিন্ন জেলা থেকে আসা মানুষ অবস্থান নিয়েছেন সেসব খিত্তায়।

এসেছেন বিদেশিরাও। তাদের জন্য ইজতেমা মাঠের উত্তর-পশ্চিম কোণে আধুনিক সুবিধা সম্বলিত আলাদা থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে।

Also Read: ইজতেমায় ফুটপাতে মানুষ, যানজট এড়াতে ভিন্ন চিন্তা

Also Read: ইজতেমা: গাড়ি রাখা যাবে যেখানে, চলতে হবে যে পথে

মাঠে জায়গা না হওয়ায় অনেকে রাস্তার পাশে ও ফুটপাতে ত্রিপল বা পলিথিনের সামিয়ানা টাঙিয়ে তার নিচে অবস্থান নিয়েছেন। শুক্রবার সকালেও বাস, ট্রাক, ট্রেনের চড়ে, অনেকে পায়ে হেঁটে গাজীপুরের টঙ্গীতে আসছেন ইজতেমায় যোগ দিতে। রোববার আখেরি মোনাজাতের আগ পর্যন্ত এ আগমন ধারা অব্যাহত থাকবে।

শুক্রবার দুপুরে এই ইজতেমা মাঠেই হবে জুমার নামাজে দেশের সর্ববৃহৎ জামাত। কাকরাইল মসজিদের মাওলানা জোবায়ের ইমামতিতে ১৫ লাখ মানুষ এই জামাতে নামাজ পড়বেন বলে ধারণা দিচ্ছেন তাবলিগের মুরুব্বিরা। এই নামাজের জন্যই ঢাকা ও গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেকে জড়ো হচ্ছেন টঙ্গী ও আশপাশের এলাকায়।

গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান বলেন, বিশ্ব ইজতেমার সার্বিক কর্মকাণ্ড সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষে বিভিন্ন বিভাগের কাজের সমন্বয় করে জেলা প্রশাসন। বিদেশি মেহমানদের আবাসস্থল নির্মাণের জন্য টিন সরবরাহ, বিভিন্ন দপ্তরের কন্ট্রোল রুমের স্থান নির্ধারণ ও ব্যবস্থাপনা, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং ঢাকা বিভাগীয় প্রশাসনের দিক নির্দেশনায় বিভিন্ন কাজের তদারকিও জেলা প্রশাসন করে।

জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দল অনিয়মের বিচারে থাকবে টঙ্গীজুড়ে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে মাঠের পাশে ৩১টি টয়লেট বিল্ডিং করা হয়েছে। এক সঙ্গে নয় হাজার মানুষ তা ব্যবহার করতে পারবেন। বিআরটিসি ও রেলওয়ে ইজতেমায় আসা-যাওয়ার জন্য বিশেষ সার্ভিসের পদক্ষেপ নিয়েছে। ময়দানের পশ্চিম পাশে তুরাগ নদীর উপর সেনাবাহিনী পাঁচটি ভাসমান সেতু নির্মাণ করেছে।

নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরাও ময়দানের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে দায়িত্ব পালনে ব্যস্ত সময় পার করছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় ১০ হাজার সদস্য ইজতেমা ময়দান ছাড়াও আশপাশের এলাকার নিরাপত্তা বিধান করবেন। অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে এবার সাইবার নিরাপত্তার বিষয়টিও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যুক্ত করেছে।

গাজীপুর মহানগর পুলিশের কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম জানান, ময়দান ও আশপাশে ১৪টি নিয়ন্ত্রণকক্ষ রয়েছে পুলিশের। র্যাবের হেলিকপ্টারে টহল থাকবে। এ ছাড়া ডগ স্কোয়াড টিম, মোবাইল পেট্রোল টিম, বোম ডিসপোজল টিম থাকবে।

শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ইজতেমায় আসা মানুষকে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা দিতে পাঁচটি ক্যাম্প স্থাপনের কাজ চলছে। এখান থেকে ২৪ ঘণ্টাই ওষুধ ও সেবা পাওয়া যাবে। হাসপাতালের সাতটি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল এখানে মোতায়েন থাকবে।

করোনাভাইরাসের প্রকোপের আগে দুই বছর দুই ভাগে বিশ্ব ইজতেমা করেছে দুই পক্ষ। মাঝখানে মহামারীর কারণে দুই বছর ইজতেমার কার্যক্রম বন্ধ ছিল।

এবার মাওলানা জোবায়েরের অনুসারীরা প্রথম পর্বে ১৩-১৫ জানুয়ারি এবং মাওলানা সা’দ পক্ষের অনুসারীরা ২০-২২ জানুয়ারি ইজতেমা পরিচালনা করবেন। প্রতি পর্বেই শেষ দিনে আখেরি মোনাজাত হবে।

বিদেশ থেকে আসা অতিথিরা প্রথম পর্ব শেষে ইজতেমাস্থল ত্যাগ করে হাজী ক্যাম্পে অবস্থান করবেন। সেখান থেকে তারা নিজ নিজ গন্তব্যে যাবেন। আর দ্বিতীয় পর্বের বিদেশি মেহমান যারা আসবেন তারা ইজতেমা মাঠেই অবস্থান করবেন এবং ইজতেমা শেষে তারা যার যার গন্তব্যে চলে যাবেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন আশা প্রকাশ করেছেন, দুই পক্ষই একে অপরকে সহযোগিতার মধ্য দিয়ে এই ধর্মীয় সম্মিলনের কাজ সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে শেষ করবেন।