বাছাইপর্বে টানা তিন জয়ের পর প্রথম পরাজয়ের স্বাদ পেল নিগার সুলতানার দল, তবে বিশ্বকাপে খেলার সম্ভাবনা উজ্জ্বল এখনও।
Published : 17 Apr 2025, 06:33 PM
বছরের শুরুতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ হেরে সরাসরি বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ হাতছাড়া করেছিল বাংলাদেশ। মাস তিনেক পর বাছাইপর্বেও বাধা হয়ে দাঁড়াল ক্যারিবিয়ানরা। এই ম্যাচ জিতলেই নিশ্চিত হয়ে যেত বিশ্বকাপ। কিন্তু টানা তিন জয়ের পর প্রথম পরাজয়ের তেতো স্বাদ পেল নিগার সুলতানার দল।
বাংলাদেশকে তিন উইকেটে হারিয়ে নিজেদের মিইয়ে আসা সম্ভাবনা আবার জাগিয়ে তুলল ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
লাহোরে বৃহস্পতিবার শারমিন আক্তারের চমৎকার ব্যাটিংয়ের পর আর কেউ তাকে সমর্থন দিতে পারেননি। ফলে ভালো শুরুর পরও ২২৭ রানে আটকে যায় বাংলাদেশ। ২৪ বল বাকি থাকতে ম্যাচ জিতে নেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
ম্যাচ হারলেও অবশ্য বাংলাদেশের বিশ্বকাপ খেলার সম্ভাবনা এখনও যথেষ্টই উজ্জ্বল। চার ম্যাচে তিন জয়ে ছয় পয়েন্ট নিয়ে আপাতত পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষেই নিগার সুলতানা, শারমিনরা।
শেষ ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে জিতলেই মূল পর্বের টিকেট পেয়ে যাবে তারা। সুযোগ থাকবে এমনকি হারলেও। চার ম্যাচে চার পয়েন্ট করে পাওয়া স্কটল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের সম্ভাবনাও এখনও শেষ হয়ে যায়নি।
তবে নেট রান রেটে এখনও অনেক এগিয়ে (+১.০৩৩) বাংলাদেশ। তাই পরের ম্যাচ হারলেও স্কটল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে তাদের টপকে যাওয়া সহজ হবে না।
প্রথম তিন ম্যাচের মতো এদিনও অল্প রানে ভাঙে বাংলাদেশের উদ্বোধনী জুটি। ব্যাটিং অর্ডারে উন্নতি পেয়ে ওপেনিংয়ে নেমে তেমন কিছু করতে পারেননি সোবহানা মোস্তারি। ৬ রান করে আউট হন তিনি।
চাপ আর বাড়তে দেননি শারমিন আক্তার ও ফারজানা হক। চার ম্যাচে তৃতীয়বার শতরানের জুটি গড়েন দুই অভিজ্ঞ ব্যাটার। সাবলীল ব্যাটিংয়ে ৫৭ বলে ফিফটি করেন দুর্দান্ত ফর্মে থাকা শারমিন। অন্যপ্রান্তে স্বভাবসুলভ মন্থর ব্যাটিং করতে থাকেন ফারজানা।
সাত নম্বরে বোলিংয়ে এসে ১১৮ রানের জুটি ভাঙেন আলিয়া আলিন। ফিরতি ক্যাচ দিয়ে আউট হন ৭৮ বলে ৪২ রান করা ফারজানা। পরে শারমিনকেও ফেরান আলিন। ১০ চারে ৭৯ বলে ৬৭ রান করেন ২৯ বছর বয়সী ব্যাটার।
গত নভেম্বরে জাতীয় দলে ফেরার পর নিজেকে নতুন ভাবে চেনাচ্ছেন শারমনি। নতুন এই অধ্যায়ে দশ ম্যাচে তার এটি পঞ্চম ফিফটি। সব মিলিয়ে ৬০.৩৩ গড়ে তার সংগ্রহ ৫৪৩ রান। বিশ্ব ক্রিকেটেই এই সময়ে শারমিনের চেয়ে বেশি ওয়ানডে রান নেই আর কারও।
জুটি ভাঙার পর আর কেউ হাল ধরতে পারেননি। দারুণ ছন্দে থাকা নিগার সুলতানা ৫ রান করে ড্রেসিং রুমে ফেরেন। আসরে প্রথম সুযোগ পাওয়া স্বর্ণা আক্তার হতাশ করেন। দ্বিতীয় ম্যাচের নায়ক রিতু মনি ও অভিজ্ঞ ফাহিমা খাতুনও দ্রুত ফেরেন।
তবে শেষ দিকে কার্যকর দুটি ইনিংস খেলেন নাহিদা আক্তার ও রাবেয়া খান। ৩৯ বল খেলে ২৫ রান করেন আটে নামা নাহিদা। শেষ ওভারে চারটি চারসহ ২০ বলে ২৩ রানে অপরাজিত থাকেন রাবেয়া। লেজের ব্যাটিংয়ে শেষ দুই ওভারে ২৮ রান তোলে বাংলাদেশ।
ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে ৩৯ রানে ৪ উইকেট নেন আলিন।
রান তাড়ায় পাওয়ার প্লেতে জাইদা জেমসকে ফেরান জান্নাতুল ফেরদৌস সুমনা। কিয়ানা জোসেফ ও শিমেইন ক্যাম্পবেল প্রতিরোধের চেষ্টা করলেও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। জোসেফ ৩১ ও ক্যাম্পবেল ২৪ রান করে আউট হন।
চাপ সামলে চতুর্থ উইকেটে ৬৬ রানের জুটি গড়েন ক্যারিবিয়ানদের সবচেয়ে সফল দুই ব্যাটার স্টেফানি টেইলর ও হেইলি ম্যাথিউস। দুজনই অবশ্য ভালো শুরুর পর আর ইনিংস বড় করতে পারেননি।
নতুন স্পেলে বোলিংয়ে ফিরে পরপর দুই ওভারে দুজনকে আউট করেন মারুফা আক্তার। পুল শটে সীমানায় ধরা পড়েন ৩৩ রান করা ম্যাথিউস। পরে নিজের বলেই লাফিয়ে বাঁ হাতে দুর্দান্ত ক্যাচ নিয়ে তিনি ফেরান ৩৬ রান করা টেইলরকে।
দেড়শর আগে ৫ উইকেট নিয়ে জয়ের আশা জাগায় বাংলাদেশ। কিন্তু ছয় নম্বরে নামা শিনেল হেনরির পাল্টা আক্রমণে পিষ্ট হয় সেই আশা।
অপরাজিত ইনিংসে ৫ চার ও ২ ছক্কায় ৪৮ বলে ৫১ রান করেন হেনরি। ২০ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংসে তাকে সঙ্গ দেন শাবিকা গাজনাবি।
একই মাঠে শনিবার পাকিস্তানের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২২৭/৯ (ফারজানা ৪২, সোবহানা ৬, শারমিন ৬৭, নিগার ৫, রিতু ১৫, স্বর্ণা ৬, ফাহিমা ৯, নাহিদা ২৫, সুমনা ৪, রাবেয়া ২৩*, মারুফা ১; হেনরি ৭-১-৩৮-১, জেমস ৩.১-০-১২-০, ম্যাথিউস ৯.৫-০-৪২-২, ফ্লেচার ১০-০-৪৩-২, রামহারাক ৩-০-১৭-০, মুনিসার ৮-১-৩৪-০, আলিন ৯-২-৩৯-৪)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ৪৬ ওভারে ২২৮/৭ (জোসেফ ৩১, জেমস ৯, ক্যাম্পবেল ২৪, টেইলর ৩৬, ম্যাথিউস ৩৩, হেনরি ৫১*, গাজনাবি ২০, আলিন ১১, ফ্লেচার ২*; মারুফা ৯-২-৩৭-২, সুমনা ৯-০-৪৯-১, নাহিদা ৮-১-৩১-১, রাবেয়া ৯-১-৪৯-১, ফাহিম ৭-০-৩০-১, স্বর্ণা ১-০-১১-০, রিতু ৩-০-১৪-১)
ফল: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৩ উইকেটে জয়ী
প্লেয়ার অব দা ম্যাচ: আলিয়া আলিন