“সংস্কার কমিশনগুলোর সুপারিশ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে এই প্রথম দুটি অধ্যাদেশ প্রস্তুত করা হচ্ছে,” বলেন উপদেষ্টা রিজওয়ানা।
Published : 17 Apr 2025, 06:43 PM
হয়রানিমূলক মামলায় জরিমানা বৃদ্ধি, নির্দিষ্ট সময়ে বিচার সম্পন্ন করা এবং ডিজিটাল যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করার সুযোগ রেখে সিভিল প্রসিডিউর কোড বা দেওয়ানি কার্যবিধিতে সংস্কার আনছে সরকার।
বৃহস্পতিবার ঢাকার তেজগাঁওয়ে তার কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বৈঠকের পর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে আসেন বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
দেওয়ানি কার্যবিধি সংশোধনের বিষয়ে উপদেষ্টা পরিষদ নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে তুলে ধরে উপদেষ্টা বলেন, “সংস্কার কমিশনগুলোর সুপারিশ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে এই প্রথম দুটি অধ্যাদেশ প্রস্তুত করা হচ্ছে।
বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন সিভিল প্রসিডিউর কোড (সিপিসি) কিছু কিছু পরিবর্তন আনার জন্য সুপারিশ করেছিল। সে অনুযায়ী ব্রিটিশ সরকার প্রণীত সিপিসি কিছু কিছু সংশোধন নীতিগত অনুমোদন করা হয়েছে।”
পরিবর্তনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে উপদেষ্টার ভাষ্য হচ্ছে, “ভূমি সংক্রান্ত মামলাগুলো যেন দ্রুত শেষ করা যায় সেজন্য সিপিসির কিছু সংশোধনী আনা হয়েছে, যাতে বিচারপ্রার্থীদের সময় ও অর্থ কম খরচ হয়। নানান অজুহাতে মামলার প্রক্রিয়া যাতে বিলম্বিত না হয়।”
কী কী পরিবর্তন আসছে?
>> আগে একটা মামলার রায় হয়ে যাওয়ার পর জারি মামলা করতে হতো সেই রায় কার্যকরের জন্য। এখন থেকে রায়ের মধ্যেই বাস্তবায়নের বিষয়টি যুক্ত করে দেওয়া হবে।
>> বিভিন্ন সময় চেয়ে আবেদন করা হয়। সংশোধিত দেওয়ানি কার্যবিধিতে বলে দেওয়া হয়েছে, সর্বোচ্চ কতবার সময় নেওয়া যাবে।
>> তালিকায় পূর্ণাঙ্গ শুনানির জন্য কয়টা মামলা নেওয়া যাবে এবং আংশিক শুনানির জন্য কয়টা মামলা নেওয়া যাবে সেটাও ঠিক করে দেওয়া হবে।
>> বিচারপ্রক্রিয়া অনেকাংশেই পুরনো পদ্ধতিতে রয়ে গেছে। আগের মত আর সমন জারি হবে না। টেলিফোন, এসএমএস বা অন্যান্য আধুনিক যোগাযোগ পদ্ধতি অবলম্বন করে সমন জারি করা হবে।
>> কাউকে ফাঁসিয়ে দেওয়ার জন্য ভুয়া মামলা করার সুযোগ কমে যাবে। আগে ভুয়া মামলার শাস্তি ছিল ২০ হাজার টাকা, এখন সেটা বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে।
বৈঠকে অভিন্ন নদীর হিস্যা ভাগাভাগি সংক্রান্ত একটি আন্তর্জাতিক আইনে স্বাক্ষরের নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানান উপদেষ্টা।
অভিন্ন জলরাশির পানি ব্যবস্থাপনা নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে দুটি আইন রয়েছে। একটি হচ্ছে ১৯৯৭ কনভেনশন, যা ২০১৪ সালে কার্যকর হয়। উজানের দেশগুলোর মধ্যে কমপক্ষে ৩৬টি দেশের স্বাক্ষর প্রয়োজন হয়েছিল। সেটা পেতে ১৭ বছর সময় লেগে যায়।
ইউরোপীয় ইউনিয়নকে লক্ষ্য ধরে ১৯৯২ সালে একটি আইন করা হয়েছিল। ২০১৬ সালে এই আইন সব দেশের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরে ১১টি দেশ এই আইনে স্বাক্ষর করেছে, যাদের বেশিরভাগ হচ্ছে আফ্রিকার দেশ।
উপদেষ্টা রিজওয়ানা বলেন, “অভিন্ন নদীর হিস্যা ভাগাভাগি নিয়ে আন্তর্জাতিক একটি আইনে স্বাক্ষর করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আজকে উপদেষ্টা পরিষদ সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, এই ১৯৯২ সালের কনভেনশনটা অনুস্বাক্ষর করবো। এ নিয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় আলাপ আলোচনা করাসহ যাবতীয় কাজ করা হয়েছে।”
“কনভেনশন অন দ্য প্রটেকশন অ্যান্ড ইউজ অফ ট্রান্সবাউন্ডারি ওয়াটার কোর্সেস অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল লেকস-১৯৯২ এ বাংলাদেশ অনুস্বাক্ষর করবে। বাংলাদেশকে দিয়েই এশিয়ার দেশগুলোর স্বাক্ষর প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে।”
সংবাদ সস্মেলনে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টা প্রেস সচিব শফিকুল আলম।